Dhaka রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভিসানীতি থেকে বাঁচতেই গয়েশ্বরকে খাবার ও আমানকে ফুলের নাটক : মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে খাবার খাওয়ানো, আমান উল্লাহ আমানকে ফল পাঠানো ভিসানীতির একটা পরিণতি। নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য, নিজেদেরকে নিরাপরাধ প্রমাণ করার জন্য এ ধরনের নাটক তারা সাজিয়েছেন। বিএনপি এগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

শনিবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দল এবং রাজনীতিতে কমিটমেন্ট। তিনি তার সারা জীবনের রাজনৈতিক জীবনে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই বড় হয়েছেন। আমান উল্লাহ আমানকে প্রমাণ করতে হবে না যে, দল, রাজনীতি ও জনগণের প্রতি তার কমিটমেন্টের কোন ঘাটতি আছে। কারন তিনি নব্বইয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন। তারা অনেক জনপ্রিয় নেতা। সুতরাং এই বিষয়গুলো মানুষ বিশ্বাস করে না। সবাই বুঝে গেছে, জেনে গেছে যে তারা তাদের রক্ষার জন্য এসব নাটক সাজাচ্ছে।এর আগেও এ রকম অনেক ঘটনা ঘটেছে। সুতরাং এ নিয়ে নেতাকর্মীরা কোন গুরুত্ব ই দেয় না। কেউ বিভ্রান্তও হয় না। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমগুলো আসল ঘটনা তা বলেছে যে, গনতান্ত্রিক আন্দোলন, একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের জন্য বিরোধী দল যখন আন্দোলন করছেন, তখন এই দানবীয় সরকার পুলিশ বাহিনী দিয়ে, গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে তা দমন করতে চায়। ইতিহাস বলে সেটা সম্ভব নয়। এর আগেও অনেক লোককে গ্রেফতার ও নির্যাতন করেছে, ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে গেছে। আমাকে, মির্জা আব্বাসকেও নিয়ে গেছে, তখন তো সুস্বাদু আম খাওয়ানো হয়নি, ফুলও পাঠানো হয়নি। এখন কেন করা হচ্ছে, কারন ভিসানীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।

তিনি বলেন, বিনা উস্কানিতে প্রতিবাদী জনতার শান্তিপূর্ণ অবস্থানে গুলি, টিয়ারগ্যাস চালানো এবং স্বশস্ত্র আক্রমণ মিডিয়া ও সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেশ-বিদেশের জনগণ এই স্বৈরাচারী সরকারের অবৈধ ক্ষমতা জোর করে ধরে রাখার বীভৎস অপপ্রয়াস দেখে স্থম্ভিত হয়েছে। তাদের নির্মম আক্রোসে বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মাথায় মারাত্মক রক্তক্ষরণ, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী আমান উল্লাহ আমানসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী আহত হওয়া এবং অগণিত নেতা-কর্মীকে নির্বিচারে গ্রেফতারের ঘটনা প্রমাণ করে যে ক্ষমতালোভী এই সরকারের হাতে দেশের কোনো নাগরিক নিরাপদ নন। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণকারী এই সরকার আজ জনগণের শুধুই ঘৃণা ও ধিক্কার পাওয়ার যোগ্য।

মির্জা ফখরুল  বলেন, সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে আমরা জানতে পেরেছি, তিন যুবক মোটরসাইকেলে এসে বাসে আগুন দিয়ে চলে যান। পুলিশও আশপাশে ছিল। কারা এ কাজ করছে তা সবাই জানে। অথচ বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বিএনপিকে দায়ী করা হচ্ছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছে বিএনপি আবারও ২০১৩ ও ২০১৪ সালের মতো অগ্নি-সন্ত্রাস শুরু করেছে- এর জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা তারা তাদের লোকজন দিয়ে করে। সরকারি লোকেরা, এজেন্সির লোকেরা, এমনকি আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা তারা এই ঘটনাগুলো ঘটিয়ে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে পুলিশের সাহায্যে ভিডিও করে তারা আবার মোটরসাইকেলে করে পুলিশের সামনে দিয়ে চলে যায়, অগ্নিদগ্ধ গাড়ির চালকও বলেছে। যারা প্রত্যক্ষদর্শী তারাও একই কথা বলেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এটা স্পষ্ট সরকারের পরিকল্পিত প্লট তৈরি করা, নাটক তৈরি করা পুরো বিষয়টি। এগুলো মানুষ এখন নেয়নি (ভালোভাবে)। মানুষ বুঝে গেছে তারা (সরকার) তাদের রক্ষার জন্য নাটক সাজাচ্ছে। এর আগেও অনেক ঘটনা ঘটেছে। এগুলো জনগণ ও আমরা গুরুত্ব দেই না।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় দেখবেন। আল জাজিরায় খুব পরিষ্কার করে তারা বলেছে, বাংলাদেশের জনগণ যখন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করছে, একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের জন্য সংগ্রাম করছে, তখন তাকে দমন ক্ষমতাসীন সরকার তারা আগের চেহারায় ফিরে গেছে। তারা পুলিশ ও ক্যাডার বাহিনী দিয়ে অত্যাচার নির্যাতন করে আন্দোলনকারীদের রুখে দিতে চায়। কিন্তু ইতিহাস বলে সেটা রক্ষা করা সম্ভব নয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারি ও সরকার দলীয় বাহিনীর বেআইনি ও সন্ত্রাসী তৎপরতার জবাব দেওয়ার সক্ষমতা জনগণের আছে। সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করার যদি চেষ্টা করা হতো তাহলে যে অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটত, তা আমরা সর্বদাই পরিহার করতে চেষ্টা করেছি। যেটা আজও করেছি। এটা আমাদের দুর্বলতা নয়; জনগণ ও গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা।

গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলে বিএনপি কোনো ধরনের সহিংসতায় যেতে চায় না – এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৪ বছর আমাদের হাজারো নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। গুমের শিকার হয়েছেন শতাধিক নেতাকর্মী এবং নির্যাতিত হয়েছে কয়েক হাজার। মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছেন লাখো নেতা কর্মী। আমরা গণতন্ত্র চাই বলেই এত কিছুর পরও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আছি আমরা। তবে সব কিছুরই একটা সীমা থাকে। আশা করি সরকার সেটা মনে রাখবেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশ ও দেশের মানুষের কাঁধে সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো চেপে বসা অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অনির্বাচিত জাতীয় সংসদ বাতিল এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বিএনপিসহ দেশের সকল গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলের ডাকা আজকের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিকে বানচাল করার জন্য সরকার জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এবং দলীয় সন্ত্রাসীদের অন্যায় ও বেআইনিভাবে জনগণের বিরুদ্ধে নামিয়ে রাজধানী ঢাকায় যে তাণ্ডব চালিয়েছে আমরা তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা জেনেছি যে, মাতুয়াইল ও শ্যামলীতে গাড়িতে আগুন দেয়ার ও ভাংচুর করার ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। অথচ পত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়ে খবর বেরিয়েছে যে পুলিশের সামনেই এসব ঘটনা ঘটিয়ে ভিডিও করে অপরাধীরা নির্বিঘ্নে চলে গেছে। কারা এটা করতে পারে তা অনুমানের জন্য বেশি বুদ্ধিমান হওয়ার প্রয়োজন নেই। নিজেরা অপরাধ করে বিএনপির উপর দোষ চাপানোর অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিচ্ছি।

আগামী সোমবার নতুন ঘোষিত কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, আজ রাজধানীতে যে নিপীড়ন-নির্যাতন করা হয়েছে, তার প্রতিবাদে আগামী পড়শু ৩১ জুলাই সারাদেশে সব জেলা ও মহানগর সদরে জনসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করছি। আমরা আগামীকাল রোববারই প্রতিবাদে কর্মসূচির কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি সরকারি দল রাজপথে কর্মসূচি দিয়েছে। আমরা তাই তাদের মতো একই দিনে কর্মসূচি না দিয়ে সঙ্কট সৃষ্টি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশাকরি ঘোষিত শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে কোনো বাধা হবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন অহিংস থাকবে- এটা আমরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরিষ্কার করে বলেছি। আমরা সহিংসতার মধ্য দিয়ে আন্দোলন করি না এবং আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করি। আমাদের এক দফা দাবি জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আদায় করব আমরা। এক দফার কর্মসূচি দুই- এক দিনের মধ্যে জানতে পারবেন।

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, শ্যামা ওবায়েদ, জহির উদ্দিন স্বপন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম, তাইফুল ইসলাম টিপু, শফিকুল ইসলাম মিল্টন ও আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন উপস্থিত ছিলেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

পাকুন্দিয়ায় শরীফ হত্যা মামলার আরো এক আসামী গ্রেফতার

ভিসানীতি থেকে বাঁচতেই গয়েশ্বরকে খাবার ও আমানকে ফুলের নাটক : মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ০৯:৫৯:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুলাই ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে খাবার খাওয়ানো, আমান উল্লাহ আমানকে ফল পাঠানো ভিসানীতির একটা পরিণতি। নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য, নিজেদেরকে নিরাপরাধ প্রমাণ করার জন্য এ ধরনের নাটক তারা সাজিয়েছেন। বিএনপি এগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

শনিবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দল এবং রাজনীতিতে কমিটমেন্ট। তিনি তার সারা জীবনের রাজনৈতিক জীবনে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই বড় হয়েছেন। আমান উল্লাহ আমানকে প্রমাণ করতে হবে না যে, দল, রাজনীতি ও জনগণের প্রতি তার কমিটমেন্টের কোন ঘাটতি আছে। কারন তিনি নব্বইয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন। তারা অনেক জনপ্রিয় নেতা। সুতরাং এই বিষয়গুলো মানুষ বিশ্বাস করে না। সবাই বুঝে গেছে, জেনে গেছে যে তারা তাদের রক্ষার জন্য এসব নাটক সাজাচ্ছে।এর আগেও এ রকম অনেক ঘটনা ঘটেছে। সুতরাং এ নিয়ে নেতাকর্মীরা কোন গুরুত্ব ই দেয় না। কেউ বিভ্রান্তও হয় না। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমগুলো আসল ঘটনা তা বলেছে যে, গনতান্ত্রিক আন্দোলন, একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের জন্য বিরোধী দল যখন আন্দোলন করছেন, তখন এই দানবীয় সরকার পুলিশ বাহিনী দিয়ে, গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে তা দমন করতে চায়। ইতিহাস বলে সেটা সম্ভব নয়। এর আগেও অনেক লোককে গ্রেফতার ও নির্যাতন করেছে, ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে গেছে। আমাকে, মির্জা আব্বাসকেও নিয়ে গেছে, তখন তো সুস্বাদু আম খাওয়ানো হয়নি, ফুলও পাঠানো হয়নি। এখন কেন করা হচ্ছে, কারন ভিসানীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।

তিনি বলেন, বিনা উস্কানিতে প্রতিবাদী জনতার শান্তিপূর্ণ অবস্থানে গুলি, টিয়ারগ্যাস চালানো এবং স্বশস্ত্র আক্রমণ মিডিয়া ও সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেশ-বিদেশের জনগণ এই স্বৈরাচারী সরকারের অবৈধ ক্ষমতা জোর করে ধরে রাখার বীভৎস অপপ্রয়াস দেখে স্থম্ভিত হয়েছে। তাদের নির্মম আক্রোসে বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মাথায় মারাত্মক রক্তক্ষরণ, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী আমান উল্লাহ আমানসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী আহত হওয়া এবং অগণিত নেতা-কর্মীকে নির্বিচারে গ্রেফতারের ঘটনা প্রমাণ করে যে ক্ষমতালোভী এই সরকারের হাতে দেশের কোনো নাগরিক নিরাপদ নন। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণকারী এই সরকার আজ জনগণের শুধুই ঘৃণা ও ধিক্কার পাওয়ার যোগ্য।

মির্জা ফখরুল  বলেন, সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে আমরা জানতে পেরেছি, তিন যুবক মোটরসাইকেলে এসে বাসে আগুন দিয়ে চলে যান। পুলিশও আশপাশে ছিল। কারা এ কাজ করছে তা সবাই জানে। অথচ বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বিএনপিকে দায়ী করা হচ্ছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছে বিএনপি আবারও ২০১৩ ও ২০১৪ সালের মতো অগ্নি-সন্ত্রাস শুরু করেছে- এর জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা তারা তাদের লোকজন দিয়ে করে। সরকারি লোকেরা, এজেন্সির লোকেরা, এমনকি আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা তারা এই ঘটনাগুলো ঘটিয়ে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে পুলিশের সাহায্যে ভিডিও করে তারা আবার মোটরসাইকেলে করে পুলিশের সামনে দিয়ে চলে যায়, অগ্নিদগ্ধ গাড়ির চালকও বলেছে। যারা প্রত্যক্ষদর্শী তারাও একই কথা বলেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এটা স্পষ্ট সরকারের পরিকল্পিত প্লট তৈরি করা, নাটক তৈরি করা পুরো বিষয়টি। এগুলো মানুষ এখন নেয়নি (ভালোভাবে)। মানুষ বুঝে গেছে তারা (সরকার) তাদের রক্ষার জন্য নাটক সাজাচ্ছে। এর আগেও অনেক ঘটনা ঘটেছে। এগুলো জনগণ ও আমরা গুরুত্ব দেই না।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় দেখবেন। আল জাজিরায় খুব পরিষ্কার করে তারা বলেছে, বাংলাদেশের জনগণ যখন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করছে, একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের জন্য সংগ্রাম করছে, তখন তাকে দমন ক্ষমতাসীন সরকার তারা আগের চেহারায় ফিরে গেছে। তারা পুলিশ ও ক্যাডার বাহিনী দিয়ে অত্যাচার নির্যাতন করে আন্দোলনকারীদের রুখে দিতে চায়। কিন্তু ইতিহাস বলে সেটা রক্ষা করা সম্ভব নয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারি ও সরকার দলীয় বাহিনীর বেআইনি ও সন্ত্রাসী তৎপরতার জবাব দেওয়ার সক্ষমতা জনগণের আছে। সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করার যদি চেষ্টা করা হতো তাহলে যে অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটত, তা আমরা সর্বদাই পরিহার করতে চেষ্টা করেছি। যেটা আজও করেছি। এটা আমাদের দুর্বলতা নয়; জনগণ ও গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা।

গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলে বিএনপি কোনো ধরনের সহিংসতায় যেতে চায় না – এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৪ বছর আমাদের হাজারো নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। গুমের শিকার হয়েছেন শতাধিক নেতাকর্মী এবং নির্যাতিত হয়েছে কয়েক হাজার। মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছেন লাখো নেতা কর্মী। আমরা গণতন্ত্র চাই বলেই এত কিছুর পরও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আছি আমরা। তবে সব কিছুরই একটা সীমা থাকে। আশা করি সরকার সেটা মনে রাখবেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশ ও দেশের মানুষের কাঁধে সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো চেপে বসা অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অনির্বাচিত জাতীয় সংসদ বাতিল এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বিএনপিসহ দেশের সকল গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলের ডাকা আজকের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিকে বানচাল করার জন্য সরকার জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এবং দলীয় সন্ত্রাসীদের অন্যায় ও বেআইনিভাবে জনগণের বিরুদ্ধে নামিয়ে রাজধানী ঢাকায় যে তাণ্ডব চালিয়েছে আমরা তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা জেনেছি যে, মাতুয়াইল ও শ্যামলীতে গাড়িতে আগুন দেয়ার ও ভাংচুর করার ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। অথচ পত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়ে খবর বেরিয়েছে যে পুলিশের সামনেই এসব ঘটনা ঘটিয়ে ভিডিও করে অপরাধীরা নির্বিঘ্নে চলে গেছে। কারা এটা করতে পারে তা অনুমানের জন্য বেশি বুদ্ধিমান হওয়ার প্রয়োজন নেই। নিজেরা অপরাধ করে বিএনপির উপর দোষ চাপানোর অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিচ্ছি।

আগামী সোমবার নতুন ঘোষিত কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, আজ রাজধানীতে যে নিপীড়ন-নির্যাতন করা হয়েছে, তার প্রতিবাদে আগামী পড়শু ৩১ জুলাই সারাদেশে সব জেলা ও মহানগর সদরে জনসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করছি। আমরা আগামীকাল রোববারই প্রতিবাদে কর্মসূচির কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি সরকারি দল রাজপথে কর্মসূচি দিয়েছে। আমরা তাই তাদের মতো একই দিনে কর্মসূচি না দিয়ে সঙ্কট সৃষ্টি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশাকরি ঘোষিত শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে কোনো বাধা হবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন অহিংস থাকবে- এটা আমরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরিষ্কার করে বলেছি। আমরা সহিংসতার মধ্য দিয়ে আন্দোলন করি না এবং আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করি। আমাদের এক দফা দাবি জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আদায় করব আমরা। এক দফার কর্মসূচি দুই- এক দিনের মধ্যে জানতে পারবেন।

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, শ্যামা ওবায়েদ, জহির উদ্দিন স্বপন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম, তাইফুল ইসলাম টিপু, শফিকুল ইসলাম মিল্টন ও আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন উপস্থিত ছিলেন।