নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে অনেকে বিরুপ মন্তব্য করলেও আওয়ামী লীগ সরকার তা বাস্তবে রূপ দিয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ঘোষণা দেওয়ার পর অনেক ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ শুনতে হয়েছে। অনেক কথা শুনতে হয়েছে এবং বলেছে- এটি আবার কে ব্যবহার করবে। ডিজিটাল আবার কী, এটি কী। সেই অপমান, সেই ব্যঙ্গগুলি শুনেও আজকে কিন্তু বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা করেছি।
শনিবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট-২০২৩’- এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে বাংলাদেশকে বিনামূল্যে সংযুক্ত করার সুযোগ এলেও তৎকালীন বিএনপি সরকার সেটি করেনি। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়।
সরকারপ্রধান বলেন, সেই অপমান সেই ব্যঙ্গ শুনেও আজকে কিন্তু বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ আমরা করেছি। অবশ্য রাজনীতি করতে গেলে সরকার চালাতে গেলে সমালোচনা শুনতেই হবে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমার লক্ষ্যটা যদি স্থির থাকে, আর যদি আত্মবিশ্বাস থাকে যে এটা আমাকে করতে হবে তাহলে কোনো বাধাই বাধা না, কোন ব্যঙ্গই ব্যঙ্গ না। ব্যঙ্গই সাফল্য এনে দেয়, এটি আমরা প্রমাণ করেছি।
তিনি বলেন, তখন বিদ্যুতের অভাব ছিল, মাত্র ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ চলে গেলেই বলতো আওয়ামী লীগ সরকার এসেছে, বিদ্যুৎ চলে গেছে, এ তো ডিজিটাল বাংলাদেশ। কোন একটা কারও কিছু হলে, সেটা ডিজিটাল বাংলাদেশ বলে আমাদের ব্যঙ্গ করা হতো।
১৭ কোটি মানুষের দেশে ১৮ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহার করা হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনসংখ্যার চেয়ে সিম ব্যবহার বেশি হওয়ার কারণ সবাই একটা ফোন ব্যবহার করে না, দুটি-তিনটি ফোনও ব্যবহার করে। সে জন্য আজকে বাংলাদেশে ১৮ কোটি সিম ব্যবহার হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমার এলাকা টুঙ্গিপাড়া, একেবারে রিমোট এলাকা। যেখানে জনসভা করতে গেলে আমাকে নৌকার ওপর বা কচুরিপানার ওপর দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করতে হয়েছে। আমার কথা যারা শুনতে এসেছেন তারা হয়তো নৌকায় নৌকায় অথবা পানিতে দাঁড়ানো- এরকম একটা অবস্থা ছিল। ছিন্ন বস্ত্র, পেটে খাবার নেই। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমি গিয়েছে। মঙ্গাপীড়িত এলাকা, দুর্গত এলাকা, রাস্তাঘাট নেই- এ অবস্থা ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েকদিন আগে আমি আমার এলাকায় গেলাম। আমি রাস্তাটা করে দিয়েছি, কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সেখান থেকে যখন আসি, দেখলাম রাস্তার পাশে ছেলেমেয়ে সবাই ভালো কাপড়-চোপড় পরে দাঁড়ানো। প্রত্যেকের হাতে মোবাইল ফোন, সমানে ছবি তুলছে।
তিনি বলেন, কারও কারও মোবাইল ফোনে চারটা করে ক্যামেরা ফিট করা। আমি বললাম আমার মোবাইল ফোনে মাত্র দুটি ক্যামেরা, ওদের দেখলাম চারটা। স্মার্ট বাংলাদেশ শুধু এখানে (শহরে) নয়, তারা যে গ্রামের মানুষ তারাও যে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে এটিই সব থেকে বড় কথা। এটি গর্বের কথা। মাত্র কয়েক বছরে এ পরিবর্তনটা আনতে পেরেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রামে বসেও কাজ করছে। আমরা শুরু করেছিলাম ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’। এ কর্মসূচি মানুষের জন্য নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। গ্রামে বসে মানুষ বিদেশে অর্থ উপার্জন করতে পারে।
স্টার্টআপ প্রোগ্রাম নিয়ে গ্রামে যেতে হবে- এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামের ছেলে-মেয়েদের শেখাতে হবে। তারা অনেক বেশি মেধাবী। তাদের একটু সুযোগ করে দিতে হবে। সুযোগ পেলে তারাই এগিয়ে আসবে, তারা যেন উদ্যোক্তা হতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের যুব সমাজ কোনোমতে বিএ পাস করেই বলবে চাকরি দাও, চাকরি দাও। তারা চাকরির পেছনে ঘুরবে কেন? নিজেই উদ্যোক্তা হবে। নিজেরাই এখানে কাজ করবে এবং তারাই চাকরি অন্য মানুষকে দেবে। নিজের থেকে নিজে করবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা কোম্পানি আইনটা পরিবর্তন করে দিয়েছি, যেন এক ব্যক্তির কোম্পানি করতে পারে। সে ব্যবস্থাটাও করে দিয়েছি। সব রকমের সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি, যেন আমাদের যে কোন একজন উদ্যোক্তা নিজেই দাঁড়াতে পারে। নিজেই একটা কোম্পানি করবে, ব্যবসা করবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই আমাদের ছেলেমেয়েরা নিজের পায়ে দাঁড়াবে। নিজের মাস্টার নিজে হবে। কারও অধীনে কাজ করবে না। সেভাবেই কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার চালাতে গেলে প্রতিনিয়ত নানা সমালোচনা শুনতে হয়। অবশ্য লক্ষ্য থাকলে, কোনো সমালোচনাই সমালোচনা নয়। এখন দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে আমরা ট্যাক্স-ভ্যাট কমিয়ে দিয়েছি। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছিলাম। বাংলাদেশ সুযোগ পেয়েছিল বিনামূল্যে সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়ার। কিন্তু তখনকার বিএনপি সরকার সুযোগ নেয়নি। এছাড়া টিউলিপ নামের কারণে বিএনপি সরকার বাতিল করে দিয়েছিল নেদারল্যান্ডের কম্পিউটার সহায়তা। যে কারণে বাংলাদেশকে ৬০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান চর্চাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মেধা বিকাশের সুযোগ করে দেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। এক সময় যে মেধাবীরা বিদেশে গিয়েছিলেন, তারা এখন দেশে ফিরে তাদের মেধা কাজে লাগাচ্ছেন।
গ্রামে বসেও ফ্রিল্যান্সিং করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেটা বিকাশের সুযোগও করে দিয়েছি। চাকরির পেছনে ঘুরবে কেন? নিজেরাই উদ্যোক্তা হবে, চাকরি দেবে। সে সুযোগ আমরা করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, সব কিছুই অনলাইন করা সম্ভব হচ্ছে, এটা যুগান্তকারী পরিবর্তন। ডিজিটাল অর্থনীতির সুফল পাচ্ছে দেশ। আমাদের লক্ষ্য, ২০২৫ সাল নাগাদ ৫টি ইউনিকর্ন বা ১ বিলিয়ন ডলারের স্টার্টআপ কোম্পানি তৈরিতে সহায়তা করা। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বৈশ্বিক সংকটের ধাক্কা এলেও এ অবস্থা থাকবে না। ২০৪১ সাল নাগাদ গড়ে উঠবে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তরুণরাই হবে দক্ষ জনশক্তি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত কয়েক বছরে দেশে ই-কর্মাসের ব্যাপক প্রসার হয়েছে। মানুষ গ্রামে বসেও নানা বিষয় শিখতে পারছে। এ সময় তরুণদের প্রতি চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। দেশের ছেলেমেয়েরা বিদেশ থেকে জ্ঞান-শিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশন ও কোভিড পরিস্থিতির কারনে মূল্যস্ফিতী বেড়েছে। অচিরেই এর উত্তরন ঘটবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন প্রমুখ।