নিজস্ব প্রতিবেদক :
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, জাতীয় সংসদের নির্বাচন হবে সংবিধান মেনে। কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এ নির্বাচন হবে না।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) দুপুরে কলকাতা প্রেসক্লাবে ‘সাংবাদিকদের মুখোমুখি’ নামের অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, প্রথম সচিব (প্রেস) রঞ্জন সেন, কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশীষ সুর, সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক, ইন্দো বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি কিংশুক চক্রবর্তী, সম্পাদক শুভজিত পুততুন্ডু, ঢাকা প্রেস ক্লাবের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সাংবাদিক সন্তোষ শর্মা ও আশিকুর রহমান।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করানো নিয়ে বিরোধীদের যে দাবি সে প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে। যেভাবে সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে যে চলতি সরকার থাকে, সেই সরকারই নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করে। যেভাবে ভারত, অস্ট্রেলিয়া কিংবা জাপানে হয়ে থাকে। ঠিক সেভাবেই শেখ হাসিনার সরকারি নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন কমিশন একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। কয়েকদিন আগে নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি আইন করা হয়েছিল সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত শক্তিশালী।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি এই অঞ্চলে অন্য অঞ্চলের কেউ এসে নাক গলাক, তা আমরা চাই না। এসময় কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কূটনীতিকদের নাক গলানোর বিষয়ে ভিয়েনা কনভেনশনের চুক্তি লঙ্ঘনের দিকটিও স্মরণ করিয়ে দেন মন্ত্রী।
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের দুই দেশের বন্ধন রক্তের অক্ষরে লেখা, এই বন্ধন কখনই ছিন্ন হওয়ার নয়। তাই যতদিন বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন আমরা ভারত বা ভারতের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। তার অভিমত দুই দেশের মধ্যে নৈকট্য অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দু’দেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রিকতা পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে উদহারণ টেনে মন্ত্রী বলেন, ভারতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ তারের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে, আমাদের দেশ আলোকিত হচ্ছে। সম্প্রতি রুপি ও টাকার বিনিময়ে দুই দেশের বাণিজ্য শুরু হয়েছে। এটা কোনোদিন ভাবা যায়নি। এতে করে দুই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ওপর নির্ভরতা কমবে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের ফলে এটা সম্ভব হয়েছে। আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এগুলো একটা মাইল ফলক হয়ে দাঁড়াবে। হাসিনার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। অন্য কেউ ক্ষমতায় থাকলে এই পর্যায়ে আসত না। কারণ অন্য যারা রাজনীতি করে তাদের রাজনীতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ভারত বিরোধিতা, আওয়ামী লীগকে গালি দেওয়া যে আমরা নাকি হিন্দু বিরোধী দল। ভোট আসলেই এই গালি শুনতে হয়। বিদ্বেষ ছড়ানো হয়, ভারতের বিরোধিতা শুরু হয়। কয়েকদিন পরে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন, ইতিমধ্যে এগুলো শুরু হয়ে গেছে। তাই তারা যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে ভারতের সঙ্গে কখনোই আমাদের সম্পর্ক কখনোই এই পর্যায়ে আসতো না। এটি সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতা আছে বলেই।
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ভারতেও সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছে যথেষ্ট আগ্রহ। এদিন মন্ত্রীর ভাষণের পর তাই জাতীয় নির্বাচন থেকে সাম্প্রতিক পশ্চিমা গতিবিধি, বাংলাদেশে চীন ঘনিষ্টতা থেকে নির্বাচনে বিএনপির অবস্থান সব বিষয়ে উঠে আসে একাধিক প্রশ্ন।
বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ ও বিএনপি জমানায় সহিংসতা নিয়ে মন্ত্রী বলেন ‘২০১৩-১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি’র নেতৃত্বে যে সহিংসতা হয়েছিল, প্রায় এক শতাধিক মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, ট্রেন বাস লঞ্চে অগ্নিসংযোগ ঘটনা হয়েছিল। সেখানেও পশ্চিম (পশ্চিমাদেশ গুলি) দিকের বাতাস এসেছিল, সেটা এহন সরে বঙ্গোপসাগরে ডুবে গেছে। তাই এখন বাতাস দিয়েও কোনো লাভ হবে না। আমি মনে করি এই অঞ্চলে অন্য অঞ্চলের কেউ এসে নাক গলাক, তা আমরা চাই না। সেটা কি সমীচীন হবে?
অনুষ্ঠানে হাছান মাহমুদ উপস্থিত বিভিন্ন সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। শুরুতেই তিনি বলেন, কলকাতা প্রেসক্লাবের সঙ্গে আমার সম্পর্ক দৃঢ় ও দীর্ঘদিনের। আমি কলকাতা প্রেসক্লাবের ডাকে এখানে আরও এসেছি।
হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কলকাতা প্রেসক্লাবের অবদান ভোলার নয়। সেদিন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পাশে দাঁড়িয়ে কলম ধরেছিলেন প্রেসক্লাবের কলমযোদ্ধারা। একাত্তরের ১৭ এপ্রিল অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে মুজিবনগরে ছুটে গিয়েছিলেন এখানকার কলমসৈনিকেরা। কীভাবে ভুলব আমরা তাঁদের অবদানের কথা। তাই আমাদের এই বন্ধন দৃঢ়, ছিন্ন হওয়ার নয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনকালে বর্তমান সরকারই রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করবে। সংবিধান অনুযায়ী দেশ চালাবে। সরকার চলবে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, করোনার মতো ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার যথাযথ উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা যাত্রীদের অভিবাসন দপ্তরে ডেঙ্গুর জন্য রক্ত পরীক্ষার যে দাবি উঠেছে, সেই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারটি ভারত সরকারের বিষয়।
ভারতের সঙ্গে এবার ডলারের পরিবর্তে রুপি ও টাকার বিনিময়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বাণিজ্য শুরু হওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এবার আমরা দুই দেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে আরও এগিয়ে যেতে পারব। ডলারের পরিবর্তে রুপি এবং টাকার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুরু হওয়ায় আমাদের অর্থনীতি আরও গতি পাবে।