নিজস্ব প্রতিবেদক :
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে সংঘাতের ঝুঁকি বাড়ছে এবং তার এ বক্তব্য উসকানিমূলক ও নিজ দলের সন্ত্রাসীদের আশকারা দেওয়ার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে সংঘাতের ঝুঁকি বাড়ছে। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, তবে কর্মসূচির নামে রাস্তাঘাট বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য উসকানিমূলক এবং তাদের নিজের দলের সন্ত্রাসীদের আশকারা দেওয়ার শামিল। এর মাধ্যমে বিএনপির চলমান শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়তে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে চাই, বিএনপির কর্মসূচি পূর্বঘোষিত, একই দিন আওয়ামী লীগ শান্তি সভা কিংবা শান্তি মিছিল করলে তখন কি জনদুর্ভোগ হয় না?
তিনি বলেন, জনগণের আস্থাহীন এই অবৈধ সরকার সন্ত্রাস, হামলা ও মামলার এক শৃঙ্খল তৈরি করে দেশের জনগণকে বন্দি করে রেখেছে এবং গণতন্ত্রকে অন্ধকার কূপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আসলে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও বহুমত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা শুনলেই আওয়ামী লীগ মূর্ছা যায়। আওয়ামী নীতি নির্ধারকরা দেশের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে নির্মূল করে নব্য বাকশালী ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করার মতলব আঁটছে। সেই কারণে বিএনপির গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর হামলা চালিয়ে তারা একটি সংঘাতের পরিবেশ সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে।
তিনি আরও বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য অপরিণামদর্শী। তার বক্তব্য দিনকে দিন সংঘাতের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। জনগণের ভোগান্তির জন্য দায়ী ভোটারবিহীন শেখ হাসিনার সরকার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে কখনোই দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও নির্বাচনের মাঠ শান্তিপূর্ণ থাকে না।
রিজভী বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হওয়া, রক্তাক্ত হামলার প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুলিশ সরকারি সন্ত্রাসীদের পক্ষে পক্ষপাতিত্ব দেখায় অথবা তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। আর এই ভয়ঙ্কর সর্বনাশা সহিংস সন্ত্রাসের জন্য দায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তার নিয়ন্ত্রিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রটেকশনেই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা রক্তাক্ত হামলায় মেতে ওঠে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, একাত্তরের শান্তি কমিটির মতো আওয়ামী লীগ কেন শান্তি সমাবেশ করে, এটা তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জনগণের প্রশ্ন। আমরা মন্ত্রীকে বলতে চাই, বিএনপির কর্মসূচি ছিল পূর্বঘোষিত। ওই সময় আলীগের কর্মসূচি ছিল না। বিএনপি কর্মসূচি ঘোষণার পরপরই ওই একই দিন আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ বা শান্তি মিছিল ঘোষণা করে। তখন কি জনদুর্ভোগ হয় না, এটা স্বরাষ্টমন্ত্রীর কাছে আমার প্রশ্ন।
বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা চালাতেই আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ ডাকে অভিযোগ করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের উদ্দেশ্যই হলো বিএনপির কর্মসূচিতে আসা নেতাকর্মী ও জনগণের ওপর হামলা করা, জখম করা, খুন করা। এ উদ্দেশ্যেই তারা এটা করে। যাতে বিএনপি কর্মসূচি করতে ভয় পায়। কিন্তু যতবার তারা আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে, তার পরের কর্মসূচিতে আরও বেশি জনগণ সম্পৃক্ত হয়েছে। অপরাধকারীরা যখন আঘাত করে, তখন ন্যায়ের পক্ষের শক্তি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বিএনপির ওপর নিপীড়িন-নির্যাতনের পরও আন্দোলনে বিপুল মানুষের উপস্থিতি তারই প্রমাণ।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আগামী ২৭ জুলাই বৃহস্পতিবার ঢাকায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে বিএনপির উদ্যোগে আগামী ২৭ জুলাইয়ের মহাসমাবেশ সফল ও সার্থক করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বিএনপির এক দফা দাবির সঙ্গে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও শ্রমজীবী মানুষসহ সর্বস্তরের জনগণ সমর্থন জানিয়েছে। বিএনপির মহাসমাবেশে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ঢল নামবে।
যুবলীগের শান্তি সমাবেশ অশুভ উদ্দেশ্যে ২৪ জুলাইয়ের পরিবর্তে ২৭ জুলাই নির্ধারণ করা হয়েছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ২২ জুলাই তারুণ্যের সমাবেশ থেকে বিএনপি ২৭ জুলাই মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। যুবলীগের কর্মসূচি ছিল ২৪ জুলাই। বিএনপির সমাবেশ ঘোষণার পর কেন তারাও ২৭ জুলাই কর্মসূচি পিছিয়ে আনলো, সেই প্রশ্নের উত্তর অমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চাই। ওদের (যুবলীগ) ছিল ২৪ জুলাই, যেই বিএনপি ২৭ জুলাই ঘোষণা দিলো, ওরাও তখন ২৭ জুলাই দিলো। সহিংসতা উসকে দেওয়ার জন্যই এটা করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
পুলিশের সহায়তায় সারাদেশে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, দেশের জেলা সদর ও মহানগর, হাট-হাজার, গ্রাম-গঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার জন্য আওয়ামী সন্ত্রাসীদের রীতিমতো প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। সম্প্রতি দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর যৌথ প্রযোজনায় হামলা চালিয়েছে। এ হামলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কেউ নিহত হয়েছেন, কেউ চোখ হারিয়েছেন, কেউ হাত-পা হারিয়ে চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।
এসময় সারাদেশে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, খুন, বাড়িঘরে হামলা-লুটপাট ও হয়রানিমূলক মামলা দেওয়ার কিছু ঘটনা তুলে ধরেন রুহুল কবির রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন প্রমুখ।