নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশে রাজনীতিতে কাউকেই বাধা দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু বিএনপি-জামাত আবারও অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে জনগণের সম্পদ ধ্বংস করলে, কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। বিএনপি-জামায়াত মানুষকে কিছু দিতে পারে না। তাদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করুন।
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) আখাউড়া-লাকসাম ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের ৭২ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ নৌকায় ভোট দিয়ে সুযোগ দিয়েছিল বলেই দেশের উন্নয়ন করতে পারছি। জনগণকে বলবো, সন্ত্রাসী বিএনপি-জামায়াতের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করুন। এরা সৃষ্টি নয়, ধ্বংস করতে পারে। লুটপাট করতে পারে; কিন্তু মানুষকে কিছু দিতে পারে না।
তিনি বলেন, এদের হাত থেকে দেশবাসী রক্ষা পাক, সেটাই আমরা চাই। আমরা তাদের রাজনীতিতে বাধা দিচ্ছি না। তবে রেল ও মানুষের কোনো ক্ষতি করলে, তারা কিন্তু ছাড়া পাবে না। সব জায়গায় আমাদের ক্যামেরা থাকবে। একেবারে বেছে বেছে, ছেঁকে ছেঁকে তাদের শাস্তি দেয়া হবে।
নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে রেলখাতের সম্পদ ধ্বংস করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আসলে ওরা সন্ত্রাসী দল, ওরা এটা ছাড়া কিছুই বোঝে না। এদের কাজই হলো ধ্বংস করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে যত পরামর্শ দিক, দেশটা আমাদের। আর এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন আমাদেরই করতে হবে। সেই চিন্তা থেকে আমি দেশ চালাই। কবে কে কী পরামর্শ দিয়েছে সেটা নয়, মানুষের উন্নতি ও সমৃদ্ধির কথা চিন্তা করে আমরা পদক্ষেপ নিই। আমার দেশ, আমার চিন্তা, আমার দেশের মানুষের কিসে মঙ্গল সেটা আমরাই ভালো বুঝি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে লোকসানের কারণে রেললাইন বন্ধ করতে চেয়েছে। রেলের কর্মচারীদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বিদায়ও দেয়, কিন্তু তাদের পাওনা বুঝিয়ে দেয়নি। ঠিক সেসময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে রেল কীভাবে উন্নত হয়, সে পদক্ষেপ নিই। পরে আবার দ্বিতীয়বার ২০০৯ সালে এসে আলাদা মন্ত্রণালয় করে দেই। আমি দেখলাম, আলাদা মন্ত্রণালয় না করলে আর বাজেটে তাদের জন্য আলাদা বরাদ্দ না থাকলে রেল উন্নত করতে পারবো না।
বিএনপি বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে রেলখাতকে প্রায় বন্ধের পথে নিয়ে গিয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, যে যত পরামর্শ দিক না কেনো এই মাটি ও মানুষের ভালোমন্দ বুঝি। কে কোন পরামর্শ দিলো, তা শুনে উন্নয়ন করে না আওয়ামী লীগ সরকার। আমাদের দেশের মানুষের মঙ্গল-অমঙ্গল বুঝে বা বিবেচনায় নিয়ে কাজ করছি আমরা।
শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০১৪ সালে যখন নির্বাচন হয়, বিএনপি তখন জানতো তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না, এটা জেনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিএনপি সন্ত্রাসী তাণ্ডব শুরু করে। বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। জনগণ তাদের আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য এ সরকারকে আবার ক্ষমতা আনতে হবে জনগণকে। বিএনপি মানুষকে হত্যা ও লুটপাটের রাজনৈতি করে। তারা সমাবেশ করছে, আমি বাধা দিচ্ছি না। যদি বিএনপি- জামায়াত আন্দোলনের নামে আবার বাস-ট্রেনে আগুন দেয়, তাহলে তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় এ দেশে প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ দারিদ্র ছিল। স্বাধীন দেশকে জাতির পিতা প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত একটি দেশ অনেক কষ্ট করে পুনর্গঠন করছেন তিনি। অথচ একটি চক্র ও যারা স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না তারা জাতির পিতাকে হত্যা করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখনই ক্ষমতায় আসি, তখনই রেলওয়ের উন্নয়ন করি, অথচ বিএনপি ক্ষমতায় এসে রেল চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিলো, তারা মনে করতো রেল লোকসান, তাই বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে তারা বন্ধ করে দেয়, আমরা ক্ষমতায় এসে আলদা রেল মন্ত্রণালয় গঠন করি। এছাড়া, আমরা বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেল লাইন স্থাপন করি।
এ সময় বিএনপি-জামায়াত জালাও পোড়াও লুটপাট ছাড়া কিছুই বোঝে না উল্লেখ করে, জনগণকে সতর্ক থাকার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়ার পরিবার বিদেশে মানিলন্ডারিং করে দেশের সম্পদ পাচার করেছে। তারপর এ সম্পদ আওয়ামী লীগ সরকার ফিরিয়ে এনেছে। বিএনপি বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে রেলকে অলাভজনক দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল কিন্তু আওয়ামী লীগই আবার দেশজুড়ে রেলের উন্নয়ন করছে।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের নেওয়া নানা উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে বলেন, আগামীতে পদ্মাসেতু হয়ে পুরো দক্ষিণাঞ্চলও রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। নতুন উদ্বোধন হওয়া লাকসাম-আখাউড়া ৭২ কিলোমিটার ডাবল রেললাইনের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচলে প্রায় ১ ঘণ্টা সময় কমবে বলেও উল্লেক করেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ ২০১৪-এর নির্বাচনে সরকারে আসার পর রেলের ব্যাপক উন্নয়নে হাত দিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দল ক্ষমতায় এসে দেশের যতটুকু উন্নয়ন করে, বিএনপি ক্ষমতায় ফিরে সেগুলো নষ্ট করে।
তিনি বলেন,দেশের অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক যোগাযোগ এবং বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য রেলখাতকে নিয়ে বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। পদ্মা সেতু থেকে একেবারে বরিশাল, ঝালকাঠি ও বরগুনা পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ করব। সেখানে খাল-বিল বেশি থাকায় মাটি নরম হওয়ায় কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে। তবে এখন আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছি আমরা। নতুন এসব লাইন ডুয়েল গেজ হবে।
এর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লাকসাম রেলওয়ে জংশন প্রান্ত থেকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও রেলপথ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন বক্তব্য দেন।