নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি :
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ বুঝে গেছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে তাদের ভাত নাই। তারা ৩০টি আসনও পাবে না। তাই তারা নিজেদের সরকারের অধীনে আবারো পাতানো নির্বাচন দিতে চায়। দেশের জনগণ এবার তা হতে দিবে না। পদযাত্রার মাধ্যমেই জনগণ তাদের পতন করে এক দফার বাস্তবায়ন ঘটাবে।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকেলে নোয়াখালী শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে বিএনপির সহযোগী সংগঠন কৃষক দল, শ্রমিক দল, মৎস্যজীবী দল তাঁতি দল ও জাসাস আয়োজিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় পদযাত্রা পূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমরা সভা করছি, দাবি জানাচ্ছি, মিছিল করেছি। কিন্তু আমরা একটা জিনিস করিনি, সেটি হলো হরতাল। আমরা অবরোধ করিনি। পদযাত্রা করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের সকল হেডকোয়ার্টার দখল করে নেব। আমরা হরতাল-অবরোধ দেইনি, পদযাত্রা করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকার ফেলে দেব।
মির্জা ফখরুল বলেন, মিথ্যা মামলায় আমাদের নেত্রীকে সাজা দিয়ে কারাগারে রেখেছে সরকার। এক দিন দুই দিন না, ২০০৮ সাল থেকে বন্দি রেখেছে সরকার। তিনি এখন বাসায় আছেন, কিন্তু তিনি বাসায় ছিলেন না। তিনি একটা অন্ধকার রুমে ছিলেন। সেটি ছিল স্যাঁতস্যাঁতে। পলেস্তারা খসে পড়তো। ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি করতো। যিনি গণতন্ত্রের জন্য আপসহীন হিসেবে সব সময় ছিলেন। তিনি আপনাদের বৃহত্তর নোয়াখালীর সন্তান। আজকে খালেদা জিয়া গৃহবন্দী, তাকে চিকিৎসার জন্য বাহিরে যেতে দেয় না এই ভয়াবহ সরকার।
শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে ফখরুল বলেন, আমাদের বলে তাদের অধীনে নাকি ভোট দিতে হবে। ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা আমাদের ডেকে বলে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে সবাই ভোট করতে পারবেন। সবাইকে বলেন ভোট করতে, আমি কোনো বাধা দেব না। আমরা ভাবলাম বোধ হয় শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। কি করা যাবে বলেন। ভূতের মুখের রাম রাম। আগের রাতে ভোট হয়ে গেল। এখন আমার বলছে আমরা সুন্দর ভোট করব। আমাদের অধীনেই ভোট হবে। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশান হবে। আহারে কী আবদার। শিয়ালের কাছে বার বার কুমিরের বাচ্চা দেওয়া যাবে না। বারবারই খেয়ে ফেলবে। আমরা এবার আর খেতে দেব না।
তিনি বলেন, সরকার বিদেশিদের কি বোঝাচ্ছে জানি না। আমরা বিদেশি বুঝি না। একটাই বুঝি এ সরকারকে দেশের জনগণ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই তারা জেগে উঠেছে। কৃষক-শ্রমিক জোট বেঁধে আজ রাজপথে নেমেছে। তাই এক দফা ঘোষণা করা হয়েছে।
ওবায়দুল কাদেরের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তিনি বলেছে তাদেরও এক দফা শেখহাসিনার অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। কী আবদার, কী আবদার! দেশের মানুষকে এতো বোকা ভাববেন না। তারা সজাগ হয়েছে। তারা এবার নিজের ভোট নিজে দিতে চায়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান তরুণ প্রজন্মের নেতা। যার দিকে সাড়া বাংলাদেশ তাকিয়ে আছে। যিনি অত্যন্ত পরিশ্রম করে আমাদেরকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেই নেতা মিথ্যা মামলায় নির্বাসিত হয়েছেন। তাকে একটার পর একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়েছে, শুধু তাই নয় তাকে নির্যাতন করে কোমর ভেঙে দিয়েছে। এই অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি চাই। আমরা খালেদা জিয়াকে বাসায় দেখতে চাই না, আমরা তাকে নোয়াখালীতে দেখতে চাই এবং বাহিরে দেখতে চাই। সব থেকে বড় জিনিস যেটা, সেটা হলো আমরা আমাদের ভোটটা দিতে চাই। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব।
তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, আর কোনো সময় নেই, তাদের সময় শেষ। আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি। আবারো বলছি, ভালো ছেলের মতো সুবোধ বালক-বালিকার মতো পদত্যাগ করেন, সংসদ ভেঙে দেন। যদি ভালোই ভালোই শুনে পদত্যাগ করেন তাহলেতো ভালো। তা না হলে ফয়সালা হবে রাজপথে।
এ সময় তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ, দফা এক দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’ স্লোগান দেন।
বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে ফখরুল বলেন, আর কতদিন আমরা এই অত্যাচার নীরবে সহ্য করব। আপনারা কি সহ্য করতে রাজি আছেন?’ সবাই এ সময় সমস্বরে ‘না’ সূচক জবাব দেন।
মির্জা ফখরুল আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, তারা বলে নির্বাচন আমাদের অধীনে হবে। আমরাই ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করব। আমরাই ভোট দেওয়াবো, আমাদের মতো করে সকলকে ভোট দিতে হবে। নইলে চলে যেতে হবে। এমনকি আমাদের ভোটারদের এখনো বলে ভোট কাকে দিবা। যদি বিএনপিকে ভোট দিতে চাও তাহলে তোমার ভোট হয়ে গেছে। ভোট কেন্দ্রে যাইতেই দেয় না।
দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। এটা একটা লুটের রাজত্বে পরিণত করেছে। ব্যাংকগুলো সব লুট করতে করতে খালি করে দিয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। আবার পাচারের টাকা দেশে নিয়ে আসার একটা বিধান করেছে। দেশে নিয়ে এলে আবার আড়াই পার্সেন্ট ইনসেন্টটিভ পাবে। কী মজা, আমাদের পকেট থেকে টাকা কেটে রেখে ট্রাক্সের টাকা নিয়ে তারা আবার চোরদের পুরস্কার দিচ্ছে। এ সমস্যা শুধু বিএনপির নয়, এ সমস্যা শুধু খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নয়। এ সমস্যা সমগ্র জাতির। আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব আজকে বিপন্ন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, কৃষক ভাইদের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। আগে সার ৩০০ টাকা বস্তা ছিল, এখন ১২০০। সারের দাম বেড়ে গেছে। বিদ্যুতের দাম তিনগুণ, চারগুণ, পাঁচগুণ বেড়েছে। মানুষ সেচ করতে পারে না। বীজের দাম বেড়ে গেছে। অথচ ফসল বাজারে বিক্রি করতে গেলে দাম পায় না। কি এক দেশে আমরা বাস করি।
মসজিদের খুতবা সরকার ঠিক করে দেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুক্রবার জুমার খুতবায় কী বলবে কী বলবে না তা সরকার ঠিক করে দেয়। বলে দেয় এই খুতবা পড়বেন আর এই খুতবা পড়বেন না। আমাদের খুতবাও নিয়ন্ত্রণ করবে তারা। আমাদের অনেক আলেম-উলামাকে গ্রেপ্তার করেছে, ফাঁসি দিয়েছে অনেককে, খুন করেছে অনেককে। আমাদের নেতাদেরকে বিনা কারণে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে সাজা দিয়েছে। তার দৃষ্টান্ত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে বন্দী রেখেছে। আজ আট বছর হয়ে গেছে।’
‘দেশ বাঁচাতে মেহনতি মানুষের পদযাত্রা’ এই স্লোগান নিয়ে কর্মসূচির আয়োজন করে বিএনপির চার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন কৃষক দল, শ্রমিক দল, তাঁতি দল ও মৎসজীবী দল। এই পদযাত্রায় বৃহত্তর নোয়াখালীর পাঁচটি জেলার নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে পদযাত্রাটি শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামের সামনে থেকে শুরু হয়ে একলাশপুর বাজারে গিয়ে শেষ হয়। কৃষক দল, শ্রমিক দল, তাঁতী দল ও মৎসজীবী দলের আয়োজনে ফেনী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও নোয়াখালীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এই পদযাত্রায় অংশ নেন।