খুলনা জেলা প্রতিনিধি :
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার পতনের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেছে। এক দফার আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে গণতন্ত্রমনা সকল দল কর্মসূচি দিয়েছে। নিশ্চিত হয়েছে উনি আর ক্ষমতায় থাকতে পারছেন না।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) দুপুরে খুলনা মহানগরীর একটি অভিজাত হোটেলে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন আয়োজিত উপবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গুম-খুন, নির্যাতিত, অসহায় ও অসচ্ছল নেতাকর্মীদের পরিবারের সন্তানদের মাঝে এ উপবৃত্তির অর্থ তুলে দেওয়া হয়।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দেশ রক্ষার চূড়ান্ত আন্দোলন শেষ পর্যায়ে। সামনে যেসব কর্মসূচি আসবে সেখানে প্রত্যেকটি দেশপ্রেমিক নাগরিক, গণতন্ত্রকামী মানুষ অংশগ্রহণ করবেন। আমি মনে করি, রাজপথ আর ক’দিন দখলে রাখলে শেখ হাসিনার পতন অনিবার্য। আসুন, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজভী বলেন, ‘আজকে শেখ হাসিনার শিক্ষা ব্যবস্থা হলো খাতায় কিছু না লিখেও পাস করে দেওয়া হচ্ছে। দুই কলাম লিখেও এ প্লাস দেওয়া হচ্ছে। গোটা দেশকে মিথ্যার মডেল তৈরি করেছেন শেখ হাসিনা।’
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বিদেশিদের কাছে বলেছেন, ১৪ বছর ধরে তিনি দেশে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন দিচ্ছেন। দিনের ভোট রাতে করে, জনগনের সব ধরনের অধিকার কেড়ে নিয়ে উনি মিথ্যাচারের মডেলে পরিণত হয়েছেন। আইএমএফের চাপে সরকার স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে রিজার্ভ ২৩.৭ মিলিয়ন ডলার। এরা দুর্নীতির মাধ্যমে রিজার্ভ শেষ করেছে। অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। গণতন্ত্র শেষ করেছে। ব্যাংকগুলো এলসি খোলা বন্ধ করে দিয়েছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনগণের কাছে দেশের মালিকানা থাকলে আজকের রাজনীতি অন্য রকম হতো। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। যার মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে।
প্রধানমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাজিয়েছেন গুম খুন করার জন্য দাবি করে রিজভী বলেন, সমাজে তিনি আতঙ্ক তৈরি করেছেন। কিন্তু এসব বলে তিনি যে তামাশার চরিত্র হয়ে উঠছেন সেটা বুঝতে পারছেন না।
বুধবার (১২ জুলাই) ঢাকার সমাবেশ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, মাত্র তিন দিনের প্রস্তুতিতে তারেক রহমানের আহ্বানে নয়াপল্টনে জনগণের স্রোত আপনারা দেখেছেন। সেখানে নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ ছুটে এসেছিলেন। শত বাধা দিয়ে তাদেরকে আটকানো যায়নি।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শান্তি সমাবেশ করেছে। সেখানে হয়েছে চেয়ার ছোড়াছুড়ি। আবার নাম দিয়েছে শান্তি সমাবেশ। এ যেন একাত্তরের সেই পিস কমিটির কথাকে স্মরণ করিয়ে দেয়,’ যোগ করেন রিজভী।
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের জনকল্যাণমুখী কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্যাতন নিপীড়নের শিকার রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছে ফাউন্ডেশন। তাদের চিকিৎসা, শিক্ষা ও পুনর্বাসনে সহায়তা করা হচ্ছে। জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকতে এ ধরনের গণমুখী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রাজনীতিকে জনগণের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। আজ যাদেরকে শিক্ষা বৃত্তি দেওয়া হলো, তাদের লেখাপড়ার মানের দিকে সতর্ক নজর রাখার আহ্বান জানান রিজভী।
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের শিক্ষা উপবৃত্তি প্রকল্প উপকমিটির আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক প্রফেসর ড. মোর্শেদ হাসান খান, ফাউন্ডেশনের রিহ্যাবিলিটেশন কমিটির চেয়ারম্যান ডা. শাহ মো. আমানুল্লাহ, খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা, জেলা আহ্বায়ক আমির এজাজ খান, মহানগর সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন ও জেলা সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক নাজমুস সাদাত।