নিজস্ব প্রতিবেদক :
অসহনীয় দ্রব্যমূল্যে নাকাল মানুষ। প্রতিদিনই কোনো না কোনো পণ্যের দাম নিয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। হুটহাট দাম বেড়ে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের। এ নিয়ে ক্রেতাসাধারণের ক্ষোভ ও অভিযোগ থাকলেও বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরছে না। এ অবস্থায় ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন অধিকাংশ মানুষ। পণ্যভেদে দাম ২০-৫০ টাকা করে বেড়েই চলছে। মাঝে মধ্যে দু’একটি পণ্যের দাম কমলেও স্বস্তি নেই ক্রেতাদের।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দ্রব্যমূল্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র দেখা গেছে।
কোরবানির ঈদের পর বাজারে মাছ ও সবজির দাম কিছুটা কমেছে। তবে তা এখনো সহনীয় পর্যায়ে আসেনি। অন্যদিকে কাঁচা মরিচ, আদা, পেঁয়াজ, আলু, টমেটো, ভোজ্যতেল ও চিনি- এ সাতটি নিত্যপণ্যের দাম এখনো ঊর্ধ্বমুখী। এসব পণ্যের দাম কিছুতেই সাধারণ মানুষের নাগালে আসছে না। প্রতিদিন বাজারে গিয়ে অস্বস্তি নিয়ে ঘরে ফিরছেন নিম্নবিত্তরা। দাম বাড়তি থাকায় পকেটের টাকায় তারা কিনতে পারছেন না প্রয়োজনের সব পণ্য।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লাউ প্রতি পিস ৬০ টাকা, জালি কুমড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা কেজি, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা আর গোল বেগুন ১০০ টাকা, করলা (বড় সাইজ) ১২০ টাকা, করলা (ছোট) ১০০ টাকা, কাকরুল ৭০ টাকা, ধুন্দুল ৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও মূলা ৬০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, টমেটো ২৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি দরে। এক কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। পেঁয়াজের কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। প্রতিকেজি দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩১০ টাকায়। আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, আকারে ছোট চিংড়ি ৬০০ টাকা, মাঝারি আকারের চিংড়ি ৮০০ টাকা, পাবদা মাছ ৫০০ টাকা, রুই ৩০০-৪০০ টাকা, পাঙাস ২০০-২৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, পুঁটি ৮০০ টাকা, টেংরা ৮০০ টাকা, কাতলা ৩৫০ টাকা এবং কই মাছ ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে আসা ক্রেতা মঞ্জু মিয়া বলেন, এখন আর বাজারে এসে ব্যাগ ভরে বাজার করতে পারি না। মাংস আর আলু-পেঁয়াজ কিনলেই এক হাজার টাকা শেষ। মাছের বাজারও আগের মতো নেই, সেখানেও এখন আগুন। আগের এক-দুইশ টাকায় মাছ পাওয়া যেত। আর এখন ২৫০ গ্রাম মাছের দামই হয় এক-দুইশ টাকা।
তিনি আরও বলেন, বাজারে অনেকদিন পর পুঁটি মাছ দেখে দাম করলাম, বলল ৮০০ টাকা কেজি। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে বাজারে এসে মাছ শুধু দেখতে হবে।
শনির আখড়া বাজারের সবজিবিক্রেতা আকাশ হোসেন বলেন, গেল দুইদিন ঢাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কিছুটা কম ছিল। বিভিন্ন জেলা থেকে সবজির গাড়ি কম এসেছে। যে কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে। আমরা পাইকারি বাজার থেকে যে দামে কিনি সেই অনুযায়ী বিক্রি করি। বেশি লাভ করি না। বেশি দামে বিক্রি করলে কাস্টমার কিনে কম। তখন অনেক সবজি বিক্রি না হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। আর যে সবজির দাম বেশি সেটা কম পরিমাণে কিনে আনি।
অন্যদিকে গরুর মাংস ৮০০ টাকা ও খাসির মাংস এক হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ফার্মের মুরগির লাল ডিম গত সপ্তাহে ১৪৫ টাকা ডজন বিক্রি হলেও সেটি আজ ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও ফার্মের সাদা ডিমের ডজন ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। ঈদের আগে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল প্রতিকেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকায়। সোনালি মুরগির কেজি ২৮০ টাকায়, যা ঈদের আগে ছিল ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকার মতো।
দাম কমানোর পর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭৯ টাকা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা আগের দাম ১৮৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে কমেছে ৫ টাকা। খোলা সয়াবিন ১৫৯ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা দরে। আর ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৪৩ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৭৩ টাকা, দাম না কমায় তা বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯১০ টাকায়।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন খুচরা বাজারে কোথাও মিলছে না প্যাকেটজাত চিনি। গত কদিনের ব্যবধানে এ পণ্যটির দাম আরও বেড়ে এখন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কোথাওবা ১৫০ টাকা পর্যন্ত দাম রাখা হচ্ছে।
বাজার দরের অবস্থা জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে একরাশ হতাশা প্রকাশ করেন গার্মেন্টস কর্মী সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমগো খোঁজ কে রাখে? আপনি জিজ্ঞেস করছেন এইটাই অনেক। গার্মেন্টসে ওভার টাইম নাই। কেমনে চলুম মাথায় ধরে না। তার উপর সব কিছুর এমন দাম।
বাজারের উচ্চদরে ক্ষুব্ধ এই ক্রেতা। যা প্রতিয়মান হয় তার কথায়। তিনি বলেন, আমি তো গ্রাম থাইকাই ঢাকায় আইছি। গ্রামে তো বাপ-মা আছে। তারা এক কেজি পেঁপে কেনে ১০ টাকায়। আমার এইখানে কেনা লাগে ৪০ টাকায়। সব জিনিসের (সবজি) দাম তিন/চারগুণ। এইডা কি ফাইজলামি? দেখার মতো কেউ নাই?