নিজস্ব প্রতিবেদক :
না ফেরার দেশে চলে গেলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক বুলবুল মহলানবীশ। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর শুক্রবার (১৪ জুলাই) ভোরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী লীনু বিল্লাহ মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। এ ছাড়া বুলবুল মহলানবীশের ভাইয়ের মেয়ে নাট্যকর্মী, অভিনেত্রী জয়ীতা মহলানবীশও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি তার ফুফুর বিদেহী আত্মার জন্য সবার কাছে প্রার্থনা কামনা করেন।
বুলবুল মহলানবীশ একাধারে কবি ও লেখক সংগীত, নাট্য ও আবৃত্তিশিল্পী হিসেবেও খ্যাতি লাভ করেছিলেন। পাশাপাশি তিনি টেলিশন-বেতার-মঞ্চে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান তিনি উপস্থাপনা করতেন। সর্বোপরী দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব।
তার চলে যাওয়া প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী তিমির নন্দী বলেন, সকালে ঘুম ভাঙল বুলবুল মহলানবীশ আপার মৃত্যু দুঃসংবাদ শুনে। এমন খবর শুনে আমি মানসিকভাবে ভীষণ আঘাত পেয়েছি। তাকে হারিয়ে আমরা আরও একজন সহযোদ্ধাকে হারালাম। আমি তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।
তার শেষকৃত্যানুষ্ঠান নিয়ে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বুলবুলের ছেলে আমেরিকায় থাকেন, ছেলের সঙ্গে আলাপ করে সব কিছু চূড়ান্ত হবে। দুদিন পরও হতে পারে।
১৯৫৩ সালের ১০ মার্চ বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন কৃতী শিল্পী ও সংগঠক বুলবুল মহলানবীশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও মাস্টার্স করেছেন। দেশে-বিদেশে শিক্ষকতা করেছেন দীর্ঘদিন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকালে সেই সময়কার রেসকোর্স ময়দানে যখন পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করছিল ঠিক সেই মাহন্দ্রেক্ষণে কলকাতার বালিগঞ্জের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয় ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ’- গানটি। বাঙালির বিজয়ের ঐতিহাসিক ক্ষণে কালজয়ী গানটিতে কণ্ঠ দেওয়া শিল্পীদের অন্যতম- বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল মহলানবীশ।
নজরুল সংগীতশিল্পী বুলবুল মহলানবীশ নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদের সহসভাপতি, সাধরণ সম্পাদক রবীন্দ্র একাডেমি। জাতীয় কবিতা পরিষদ, কচিকাঁচার মেল, উদীচী, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শিল্পী পরিষদসহ বহু সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তবে সব ছাপিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী-কণ্ঠযোদ্ধা পরিচয়টি তিনি বহন করতেন বিনম্র গৌরবে।
তার দুটি গানের অ্যালবাম রয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে ১২টির বেশি গ্রন্থ। মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব প্রস্তুতি ও স্মৃতি ৭১ তার বহুল আলোচিত বই। সাহিত্য-সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য পেয়েছেন- চয়ন স্বর্ণপদক, দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ফাউন্ডেশন সম্মাননা, পশ্চিমবঙ্গের নজরুল একাডেমি সম্মাননা পদক।