Dhaka শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুষ্ঠু নির্বাচনের আইনি কাঠামো নিয়ে সন্তুষ্ট ইইউ: আইন সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের আইনি কাঠামো যথেষ্ট বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। জবাবে প্রতিনিধি দল সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

বুধবার (১২ জুলাই) সচিবালয়ে জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ মূল্যায়ন করতে আসা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ছয় সদস্যের নির্বাচনী অনুসন্ধানী দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার এ কথা জানান।

ইউরোপীয় প্রতিনিধি দলে ছিলেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও পর্যবেক্ষক রিকোর্ডো চেলেরি, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ দিমিত্রি আইওনাও ও আইন বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিনা ডোস রামোস আলভেস।

আইন সচিব বলেন, বাংলাদেশের আইনগত কাঠামো সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট কিনা; তা জানতে চেয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা। আমরা বলেছি, সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার জন্য আমাদের দেশের যে আইনগত কাঠামো আছে, সেটা যথেষ্ট। যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) পাশ হয়েছে, সেখানে ৯১ (এ) ধারায় নির্বাচন বন্ধ করে দেয়ার ব্যবস্থা আছে। তারপরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৯১ (এ)(এ) ধারা যুক্ত করে নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার ব্যবস্থা করেছেন। এতে তারা (ইউরোপীয় প্রতিনিধিরা) সন্তুষ্ট হয়েছে।

তিনি বলেন, আরেকটি বিষয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে সম্প্রতি যে আইন হয়েছে, এই উপমহাদেশে এমন আর কোনো আইন নেই। আমরা বলেছি, সার্চ কমিটির যে ফরমেশন আছে, সেখানে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, যিনি প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে মনোনীতি হবেন, চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া মহা হিসাব নিয়ন্ত্রক, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান এবং দুজন সুশীল সমাজের, যাদের একজন নারী থাকবেন, সদস্য ছিলেন। ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের কাছে আমরা আইনও দিয়েছি। এ বিষয়ে তারা আমাদের কাছ থেকে সঠিক তথ্য পেয়েছেন বলে জানান আইন সচিব।

নির্বাচন কমিশন গঠনের সার্চ কমিটির বিষয়ে তাদের বলা হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘তারা এটার বিষয়ে প্লিজড (সন্তুষ্ট) হয়েছেন। আইনটাও আমরা তাদের দিয়েছি। আরেকটি বিষয় তাদের জানিয়েছি, যেটি তারা হয়ত আগে জানতেন না। যেটি আমাদের আইন ও বিচার বিভাগের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সম্পৃক্ত, সেটি হলো- নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর একজন যুগ্ম জেলা জজ এবং একজন সিনিয়র সহকারী জজের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এটা তফসিলের শুরুর দিন থেকে নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট নোটিফিকেশন হওয়া পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ে নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিয়ম বা কারও কোনো অভিযোগ থাকলে তারা সেটার প্রতিবেদন তৈরি করে নির্বাচন কমিশনকে দেন। নির্বাচন কমিশন সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে।

সচিব আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন রিকুইজিশন দিলে আমরা সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাচন কমিশনে ন্যস্ত করি। আমরা যখন নির্বাচন কমিশনে ন্যস্ত করি, তখন তারা নির্বাচন কমিশনের অধীনে দায়িত্ব পালন করেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা নির্বাচনের আগে দুদিন, নির্বাচনের দিন ও নির্বাচনের পর দুদিনসহ মোট পাঁচদিন দায়িত্ব পালন করেন। তখন কোনো অনিয়ম হলে তারা সংক্ষিপ্ত বিচার (সামারি ট্রায়াল) ও আরপিওতে যে বিধানগুলো আছে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এটার বিষয়ে তারা প্রশংসা করেছে।

গোলাম সারওয়ার বলেন, আপনারা জানেন, বিচারবিভাগ স্বাধীন। ২০০৭ সালের নভেম্বরে বিচার বিভাগ আলাদা হওয়ার পরে যখন নির্বাচন কমিশন আমাদের একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চায়—যেটি আরপিও ৯১(এ) ধারায় আছে—সেক্ষেত্রে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য রিকুইজেশন দেওয়া হলে, আমরা সুপ্রিম কোর্টের সম্মতি নিয়ে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্বাচন কমিশনে ন্যস্ত করি। এরপর তারা নির্বাচন কমিশনের অধীন চলে যায়। সবকিছু ইলেকশন কমিশনের সুপারভিশনে তারা করেন। অর্থাৎ নির্বাচনের আগের ও পরের দুদিন এবং নির্বাচনের দিন—এই পাঁচ দিন তারা ইসির অধীন দায়িত্ব পালন করেন। তখন নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে তারা সামারি ট্রায়াল করেন। আরপিওর বিধান অনুসারে তারা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এ বিধানের তারিফ করেছে ইউরোপীয় প্রতিনিধিরা।

আরপিও সংশোধন নিয়ে তারা কিছু বলেছে কিনা জানতে চাইলে সচিব বলেন, আরপিওর ৯১ (এ) ধারায় কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাছে ক্ষমতা আছে, যে কোনো ভোট তারা বন্ধ করে দিতে পারে। পুরো আসনের ভোট তারা বন্ধ করে দিতে পারে। ৯১ (এ)(এ) ধারা অনুসারে তারা যে কোনো ভোট কেন্দ্রের রেজাল্ট উইথহোল্ড (ফল আটকে) দিতে পারে। যদি নির্বাচন কমিশন মনে করে যে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি, তাহলে যে কোনো ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দিতে পারেন। এ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের আছে।

তারা কোনো পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে গোলাম সারওয়ার বলেন, না, তারা জানতে চেয়েছেন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এ আইনি কাঠামো যথেষ্ট কি না! আমরা বলেছি, হ্যাঁ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের মেকানিজম আছে, আইনি কাঠামো আছে। এ আইনি কাঠামো যথেষ্ট অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্য কোনো কিছু করার প্রয়োজন নেই।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

অপতথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান সিইসির

সুষ্ঠু নির্বাচনের আইনি কাঠামো নিয়ে সন্তুষ্ট ইইউ: আইন সচিব

প্রকাশের সময় : ০৮:১৮:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ জুলাই ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের আইনি কাঠামো যথেষ্ট বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। জবাবে প্রতিনিধি দল সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

বুধবার (১২ জুলাই) সচিবালয়ে জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ মূল্যায়ন করতে আসা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ছয় সদস্যের নির্বাচনী অনুসন্ধানী দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার এ কথা জানান।

ইউরোপীয় প্রতিনিধি দলে ছিলেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও পর্যবেক্ষক রিকোর্ডো চেলেরি, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ দিমিত্রি আইওনাও ও আইন বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিনা ডোস রামোস আলভেস।

আইন সচিব বলেন, বাংলাদেশের আইনগত কাঠামো সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট কিনা; তা জানতে চেয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা। আমরা বলেছি, সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার জন্য আমাদের দেশের যে আইনগত কাঠামো আছে, সেটা যথেষ্ট। যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) পাশ হয়েছে, সেখানে ৯১ (এ) ধারায় নির্বাচন বন্ধ করে দেয়ার ব্যবস্থা আছে। তারপরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৯১ (এ)(এ) ধারা যুক্ত করে নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার ব্যবস্থা করেছেন। এতে তারা (ইউরোপীয় প্রতিনিধিরা) সন্তুষ্ট হয়েছে।

তিনি বলেন, আরেকটি বিষয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে সম্প্রতি যে আইন হয়েছে, এই উপমহাদেশে এমন আর কোনো আইন নেই। আমরা বলেছি, সার্চ কমিটির যে ফরমেশন আছে, সেখানে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, যিনি প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে মনোনীতি হবেন, চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া মহা হিসাব নিয়ন্ত্রক, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান এবং দুজন সুশীল সমাজের, যাদের একজন নারী থাকবেন, সদস্য ছিলেন। ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের কাছে আমরা আইনও দিয়েছি। এ বিষয়ে তারা আমাদের কাছ থেকে সঠিক তথ্য পেয়েছেন বলে জানান আইন সচিব।

নির্বাচন কমিশন গঠনের সার্চ কমিটির বিষয়ে তাদের বলা হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘তারা এটার বিষয়ে প্লিজড (সন্তুষ্ট) হয়েছেন। আইনটাও আমরা তাদের দিয়েছি। আরেকটি বিষয় তাদের জানিয়েছি, যেটি তারা হয়ত আগে জানতেন না। যেটি আমাদের আইন ও বিচার বিভাগের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সম্পৃক্ত, সেটি হলো- নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর একজন যুগ্ম জেলা জজ এবং একজন সিনিয়র সহকারী জজের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এটা তফসিলের শুরুর দিন থেকে নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট নোটিফিকেশন হওয়া পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ে নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিয়ম বা কারও কোনো অভিযোগ থাকলে তারা সেটার প্রতিবেদন তৈরি করে নির্বাচন কমিশনকে দেন। নির্বাচন কমিশন সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে।

সচিব আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন রিকুইজিশন দিলে আমরা সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাচন কমিশনে ন্যস্ত করি। আমরা যখন নির্বাচন কমিশনে ন্যস্ত করি, তখন তারা নির্বাচন কমিশনের অধীনে দায়িত্ব পালন করেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা নির্বাচনের আগে দুদিন, নির্বাচনের দিন ও নির্বাচনের পর দুদিনসহ মোট পাঁচদিন দায়িত্ব পালন করেন। তখন কোনো অনিয়ম হলে তারা সংক্ষিপ্ত বিচার (সামারি ট্রায়াল) ও আরপিওতে যে বিধানগুলো আছে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এটার বিষয়ে তারা প্রশংসা করেছে।

গোলাম সারওয়ার বলেন, আপনারা জানেন, বিচারবিভাগ স্বাধীন। ২০০৭ সালের নভেম্বরে বিচার বিভাগ আলাদা হওয়ার পরে যখন নির্বাচন কমিশন আমাদের একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চায়—যেটি আরপিও ৯১(এ) ধারায় আছে—সেক্ষেত্রে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য রিকুইজেশন দেওয়া হলে, আমরা সুপ্রিম কোর্টের সম্মতি নিয়ে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্বাচন কমিশনে ন্যস্ত করি। এরপর তারা নির্বাচন কমিশনের অধীন চলে যায়। সবকিছু ইলেকশন কমিশনের সুপারভিশনে তারা করেন। অর্থাৎ নির্বাচনের আগের ও পরের দুদিন এবং নির্বাচনের দিন—এই পাঁচ দিন তারা ইসির অধীন দায়িত্ব পালন করেন। তখন নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে তারা সামারি ট্রায়াল করেন। আরপিওর বিধান অনুসারে তারা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এ বিধানের তারিফ করেছে ইউরোপীয় প্রতিনিধিরা।

আরপিও সংশোধন নিয়ে তারা কিছু বলেছে কিনা জানতে চাইলে সচিব বলেন, আরপিওর ৯১ (এ) ধারায় কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাছে ক্ষমতা আছে, যে কোনো ভোট তারা বন্ধ করে দিতে পারে। পুরো আসনের ভোট তারা বন্ধ করে দিতে পারে। ৯১ (এ)(এ) ধারা অনুসারে তারা যে কোনো ভোট কেন্দ্রের রেজাল্ট উইথহোল্ড (ফল আটকে) দিতে পারে। যদি নির্বাচন কমিশন মনে করে যে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি, তাহলে যে কোনো ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দিতে পারেন। এ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের আছে।

তারা কোনো পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে গোলাম সারওয়ার বলেন, না, তারা জানতে চেয়েছেন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এ আইনি কাঠামো যথেষ্ট কি না! আমরা বলেছি, হ্যাঁ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের মেকানিজম আছে, আইনি কাঠামো আছে। এ আইনি কাঠামো যথেষ্ট অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্য কোনো কিছু করার প্রয়োজন নেই।