Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাটুরিয়ায় সংযোগ সড়ক ছাড়াই সেতু নির্মাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দিঘুলিয়া ইউনিয়নে অপরিকল্পিতভাবে সংযোগ সড়ক ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে একটি সেতু। এতে করে গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের কাছে সেতুটি গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি বর্তমানে ‘হেলিকপ্টার সেতু’ নামে পরিচিত। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ইতোমধ্যে গ্রামের সবার স্বাক্ষর নিয়ে সেতুটি ভেঙে ফেলতে আবেদন দেওয়া হয়েছে প্রশাসন বরাবর। তবে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।

সরজমিনে গিয়ে দেখতে পায়, ইউনিয়নের আংগুটিয়া গ্রামের বর্তমান ইউপি মহিলা সদস্য সাবিনা ইয়াসমিনের বাড়ির সামনের একটি মরা খালের উপরে সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে। দুপাশে নেই কোনো সংযোগ সড়ক। রাস্তা থেকে প্রায় ৭ ফুট উপরে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সেতুটির নিচ দিয়ে মাটি ফেলে কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।

গ্রামবাসী এখন সেতুর উপর দিয়ে নয়, বরং সেতুর নিচ দিয়ে চলাচল করছেন। তবে গ্রামের কৃষকরা ধান, পাট, খড়সহ অন্যান্য জিনিস মাথায় করে এই সেতুর নিচ দিয়ে নিতে পারেন না। প্রায় এক কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। এ জন্য গ্রামবাসী দ্রুত এই সেতুটির অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।

সেতুটির তথ্যের জন্য উপজেলার প্রকৌশল বিভাগে গেলে সেখানকার প্রকৌশলীকে পাওয়া যায়নি। তবে অফিসের অন্য কর্মকর্তারা জানান, ওই প্রকৌশলী অফিসের কাজে ঢাকায় গেছেন। তাদের কাছে সেতুটির সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, এই সেতু সংক্রান্ত কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। কারণ দশ বছরের বেশি কোনো নথি তারা রাখেন না।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৯৮ সালে এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ওই সময় এখানে ৪৪ ফুট চওড়া একটা খাল ছিল। সেতুটি প্রায় খালের নিচের মাটির চেয়ে ৩০ ফুট উচ্চতায় ছিল। কিন্তু দুপাশের সংযোগ সড়ক না হওয়ায় দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর ধরে অকেজো পড়ে আছে। নির্মাণের পর থেকেই এই সেতু কোনো কাজে আসেনি।

বর্তমানে সেতুটির গায়ে শ্যাওলার আস্তরণ, জন্মেছে বটগাছ, কিছু কিছু জায়গায় ভেঙে বেরিয়ে গেছে রড়।

স্থানীয় বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া বলেন, প্রায় ২৫ বছর আগে এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে নির্মাণের পর থেকেই সংযোগ সড়ক না থাকায় কোনো কাজেই আসেনি সেতুটি। আমাদের কাছে এটা হেলিকাপটার সেতু নামে পরিচিত।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মানুষের চলাচলের রাস্তার চেয়ে অনেক উঁচু, শুধু দেখা যায় এর উপর দিয়ে চলাচল করতে পারি না সে জন্য এর নাম দেওয়া হয়েছিল হেলিকপ্টার সেতু।

তিনি আরও বলেন, এখনতো সেতুর উপর দিয়ে নয় বরং নিচে ব্রিজের ভেতর দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

গ্রামের কৃষকরা জানান, সেতু এখন তাদের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর নিচ দিয়ে মাঠ থেকে ফসল নিয়ে মাথায় করে বাড়িতে যেতে পারেন না। এক কিলোমিটার ঘুরে অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। শুধু তাই নয় বর্ষাকালে পানি হলে এই রাস্তা পানির নিচে চলে যায়। সে সময় নৌকা ছাড়া চলাচল করা যায় না। সেতু না থাকলে এই অল্প একটু রাস্তায় মাটি ফেলে ভরাট করলে বর্ষা মৌসুমেও চলাচল করা যেত।

দিঘুলিয়া ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য সাবিনা ইয়াসমিন জানান, এই সেতুটির সংযোগ সড়ক অথবা ভেঙে ফেলার জন্য উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।

সাটুরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শান্তা রহমান বলেন, ইতোমধ্যে সেতুটি দেখে এসেছি। সেতুটি কোন অফিস থেকে নির্মাণ করা হয়েছিল তা জানার জন্য সকল দফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অতিদ্রুত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

সাটুরিয়ায় সংযোগ সড়ক ছাড়াই সেতু নির্মাণ

প্রকাশের সময় : ০২:১৮:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ জুলাই ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দিঘুলিয়া ইউনিয়নে অপরিকল্পিতভাবে সংযোগ সড়ক ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে একটি সেতু। এতে করে গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের কাছে সেতুটি গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি বর্তমানে ‘হেলিকপ্টার সেতু’ নামে পরিচিত। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ইতোমধ্যে গ্রামের সবার স্বাক্ষর নিয়ে সেতুটি ভেঙে ফেলতে আবেদন দেওয়া হয়েছে প্রশাসন বরাবর। তবে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।

সরজমিনে গিয়ে দেখতে পায়, ইউনিয়নের আংগুটিয়া গ্রামের বর্তমান ইউপি মহিলা সদস্য সাবিনা ইয়াসমিনের বাড়ির সামনের একটি মরা খালের উপরে সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে। দুপাশে নেই কোনো সংযোগ সড়ক। রাস্তা থেকে প্রায় ৭ ফুট উপরে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সেতুটির নিচ দিয়ে মাটি ফেলে কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।

গ্রামবাসী এখন সেতুর উপর দিয়ে নয়, বরং সেতুর নিচ দিয়ে চলাচল করছেন। তবে গ্রামের কৃষকরা ধান, পাট, খড়সহ অন্যান্য জিনিস মাথায় করে এই সেতুর নিচ দিয়ে নিতে পারেন না। প্রায় এক কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। এ জন্য গ্রামবাসী দ্রুত এই সেতুটির অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।

সেতুটির তথ্যের জন্য উপজেলার প্রকৌশল বিভাগে গেলে সেখানকার প্রকৌশলীকে পাওয়া যায়নি। তবে অফিসের অন্য কর্মকর্তারা জানান, ওই প্রকৌশলী অফিসের কাজে ঢাকায় গেছেন। তাদের কাছে সেতুটির সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, এই সেতু সংক্রান্ত কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। কারণ দশ বছরের বেশি কোনো নথি তারা রাখেন না।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৯৮ সালে এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ওই সময় এখানে ৪৪ ফুট চওড়া একটা খাল ছিল। সেতুটি প্রায় খালের নিচের মাটির চেয়ে ৩০ ফুট উচ্চতায় ছিল। কিন্তু দুপাশের সংযোগ সড়ক না হওয়ায় দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর ধরে অকেজো পড়ে আছে। নির্মাণের পর থেকেই এই সেতু কোনো কাজে আসেনি।

বর্তমানে সেতুটির গায়ে শ্যাওলার আস্তরণ, জন্মেছে বটগাছ, কিছু কিছু জায়গায় ভেঙে বেরিয়ে গেছে রড়।

স্থানীয় বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া বলেন, প্রায় ২৫ বছর আগে এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে নির্মাণের পর থেকেই সংযোগ সড়ক না থাকায় কোনো কাজেই আসেনি সেতুটি। আমাদের কাছে এটা হেলিকাপটার সেতু নামে পরিচিত।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মানুষের চলাচলের রাস্তার চেয়ে অনেক উঁচু, শুধু দেখা যায় এর উপর দিয়ে চলাচল করতে পারি না সে জন্য এর নাম দেওয়া হয়েছিল হেলিকপ্টার সেতু।

তিনি আরও বলেন, এখনতো সেতুর উপর দিয়ে নয় বরং নিচে ব্রিজের ভেতর দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

গ্রামের কৃষকরা জানান, সেতু এখন তাদের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর নিচ দিয়ে মাঠ থেকে ফসল নিয়ে মাথায় করে বাড়িতে যেতে পারেন না। এক কিলোমিটার ঘুরে অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। শুধু তাই নয় বর্ষাকালে পানি হলে এই রাস্তা পানির নিচে চলে যায়। সে সময় নৌকা ছাড়া চলাচল করা যায় না। সেতু না থাকলে এই অল্প একটু রাস্তায় মাটি ফেলে ভরাট করলে বর্ষা মৌসুমেও চলাচল করা যেত।

দিঘুলিয়া ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য সাবিনা ইয়াসমিন জানান, এই সেতুটির সংযোগ সড়ক অথবা ভেঙে ফেলার জন্য উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।

সাটুরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শান্তা রহমান বলেন, ইতোমধ্যে সেতুটি দেখে এসেছি। সেতুটি কোন অফিস থেকে নির্মাণ করা হয়েছিল তা জানার জন্য সকল দফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অতিদ্রুত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।