স্পোর্টস ডেস্ক :
আগের দুই ম্যাচে পরাজিত হওয়ায় প্রথমবারের মতো আফপগানদের কাছে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে টাইগাররা তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের সামনে বাংলাদেশ সামান্যতম প্রতিরোধও গড়ে তুলতে পারেনি। সিরিজের শেষ ম্যাচে এসে সেই টাইগাররাই যেন অন্য এক দল। ইতোমধ্যে সিরিজ খোয়ালেও তৃতীয় ওয়ানডেতে আফগানদের ভালোভাবেই চেপে ধরে স্বাগতিকরা। শেষে এসে জ্বলে উঠলো। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে আফগানিস্তানকে উড়িয়ে শেষটা রাঙালো লাল-সবুজের দল।
প্রথম দুই ম্যাচে পরাজিত হওয়ায় ইতোমধ্যে প্রথমবারের মতো আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হেরে বসে আছে বাংলাদেশ। সিরিজের শেষ ম্যাচটি ছিল তাই শুধুই আনুষ্ঠানিকতার। নিয়মরক্ষার সেই ম্যাচে টাইগারদের বোলিং তোপে ১২৬ রানেই অলআউট হয় সফরকারীরা। জবাবে মাত্র তিন উইকেট হারিয়েই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
আফগানিস্তানের ছুঁড়ে দেওয়া ১২৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি। তৃতীয় ওভারেই প্রথম উইকেট হারায় টাইগাররা। রানের খাতা খোলার আগেই পেসার ফজল হক ফারুকির ছোঁড়া অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে ইনসাইড এজে বোল্ড হন ওপেনার নাঈম শেখ।
শুরুতে ধাক্কা খাওয়ার পর লিটন দাসের সঙ্গে মিলে রান তোলার চেষ্টায় মনোযোগী ছিলেন আরেক ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু সপ্তম ওভারের শেষ বলে ফারুকীর দ্বিতীয় শিকার হন তিনি। ফারুকির ফুলার লেংথের বলের লাইন বুঝতে না পেরে ড্রাইভ করতে গিয়ে বোল্ড হন শান্ত। আউট হওয়ার আগে তিনি ১৫ বলে দুই চারে ১১ রান করেন।
দলীয় ২৮ রানে দুই উইকেট হারালেও লিটন এবং সাকিবের ব্যাটে চড়ে জয়ের পথে এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় উইকেটে দুজন মিলে ৬১ রানের জুটি গড়েন। তবে ১৮তম ওভারে সাকিবের বিদায়ে সেই জুটি ভেঙে যায়। শর্ট লেংথে নবির বলে ব্যাট চালালেও টাইমিংয়ে গড়বড় হওয়ায় মিড অন থেকে পেছনে ছোটা আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদির হাতে ধরা পড়েন সাকিব। সাজঘরে ফেরার আগে ৩৯ বলে পাঁচ বাউন্ডারিতে ৩৯ রান করেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার।
পাঁচে নামা তৌহিদ হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে অবশ্য অনায়াসেই বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান লিটন। ২২তম ওভারে মুজিব উর রহমানকে চার মেরে ফিফটি পূর্ণ করেন লিটন। পরের ওভারের তৃতীয় বলে আরেকটি চার মেরে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটের জয় এনে দেন তিনি। ৬০ বলে তিনটি বাউন্ডারি ও দুই ছক্কায় অপরাজিত ৫৩ রান করেন লিটন। অন্যদিকে, ১৯ বলে এক চারে ২২ রানে অপরাজিত থাকেন হৃদয়।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় আফগানিস্তান। একাদশে তিনটি পরিবর্তন নিয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর মিশনে মাঠে নামে স্বাগতিকরা। চোটের কারণে এবাদত হোসেন মাঠের বাইরে আর মোস্তাফিজুর রহমান ও হাসান মাহমুদকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে দলে জায়গা পেয়েছেন তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও তাইজুল ইসলাম।
শুরু থেকেই আঁটসাঁট বোলিং করে আগের ম্যাচে ২৫৬ রানের রেকর্ড জুটি গড়া ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরানকে চাপে রাখেন তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম। তৃতীয় ওভারেই সাফল্যের দেখা পায় টাইগাররা। শরিফুল ইসলামের করা ওই ওভারের প্রথম বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ইব্রাহিম জাদরান (১)। ওই ওভারেরই পঞ্চম বলে রহমত শাহকেও একইভাবে সাজঘরে পাঠান শরিফুল।
শরিফুলের জোড়া আঘাতের পর দৃশ্যপটে আসেন আরেক পেসার তাসকিন আহমেদও। নিজের তৃতীয় ওভারে তিনি গত ম্যাচের বিধ্বংসী ব্যাটার রহমানউল্লাহ গুরবাজের উইকেট তুলে নেন। তাসকিনের শর্ট বলে মুশফিকুর রহিমের দারুণ ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে ২২ বলে ৬ রান করেন গুরবাজ।
ইনিংসের নবম ওভারে দলীয় ১৫ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। শরিফুল ইসলামের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন মোহাম্মদ নবী (১)। আফগান ব্যাটার রিভিউ নিলেও আম্পায়ারের আগের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। প্রথম পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করে মাত্র ২১ রান দিয়ে চার উইকেট পায় বাংলাদেশ।
পেসারদের ধ্বংসযজ্ঞের পর সাফল্যের দেখা পান স্পিনাররাও। ষোড়শ ওভারের শেষ বলে সাকিব আল হাসানের ঘুর্ণিজাদুতে এলবিডব্লিউ হন নাজিবউল্লাহ জাদরান। আউট হওয়ার আগে ১০ রান করেন এ আফগান ব্যাটার।
সাকিবের পর উইকেটের দেখা পান আরেক বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামও। টানা তিন ওভারে একটি করে চার মেরে হাশমতউল্লাহ শহীদী যখন রানের চাকা সচল করতে চাইলেন, তখনই তাকে থামান তাইজুল। ২২তম ওভারে ৫৪ বলে চারটি বাউন্ডারিতে ২২ রান করা আফগান অধিনায়ককে বোল্ড করেন তিনি।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে চতুর্থ উইকেট তুলে নেন শরিফুল। তার বলে ২০ বলে ৪ রান করা আব্দুল রহমানের তুলে দেওয়া ক্যাচ ডিপে দৌড়ে এসে দুর্দান্তভাবে তালুবন্দি করেন তাইজুল। ৬৮ রানে সপ্তম উইকেট হারায় আফগানিস্তান।
৬৮ রানে ৭ উইকেট পড়ার পর জিয়া উর রহমান ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই প্রতিরোধ গড়েন। ইনিংসের ৩৬তম ওভারে সেই জুটি ভেঙে দেন তাইজুল ইসলাম। জিয়াকে ৫ রানে বোল্ড করেন বাংলাদেশি স্পিনার। ৮৯ রানে আফগানিস্তানের অষ্টম উইকেটের পতন হয়।
আফগানিস্তানের ব্যাটারদের আসা যাওয়ার মিছিলে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ছিলেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। দলের বাকিদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় এক প্রান্ত আগলে রেখে ৬৭ বলে অর্ধশতক তুলে নেন এ আফগান ক্রিকেটার। এক ওমরজাইয়ের ওপর ভর করেই এগোতে থাকে সফরকারীদের ইনিংস।
আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছিলেন মুজিব উর রহমান। নবম উইকেটে দুজন মিলে গড়েন ৩৬ রানের জুটি। মেহেদি হাসান মিরাজের করা ৪৫তম ওভারের শেষ বলে সেই জুটি ভেঙে যায়। ডিপ মিডউইকেটে আফিফ হোসেনের হাতে ক্যাচ দেন ১১ রান করা।
পরের ওভারেই শেষ হয় আফগানিস্তানের ইনিংস। স্রোতের বিপরীতে লড়াই করা আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে মোহাম্মদ নাইমের ক্যাচ বানিয়ে সফরকারীদের গুটিয়ে দেন তাসকিন আহমেদ। দলের শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে ৭১ বলে এক চার ও তিন ছক্কায় ৫৬ রান করেন আজমতউল্লাহ।
বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে শরিফুল সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নেন। তাসকিন এবং তাইজুল শিকার করেন দুই উইকেট। এছাড়া, দুই স্পিনার সাকিব আর মিরাজ একটি করে উইকেট ভাগাভাগি করেন।