নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে স্বাস্থ্য সেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় ন্যাশনাল কনফারেন্স অন পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি প্যানেল ডিসকাশন শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের স্বাস্থ্যসেবা বিশ্বমানের করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর গত সাড়ে ১৪ বছরে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হয়েছে। বিনামূল্যে ইনসুলিন দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। এ জন্য নিবেদিত কূটনৈতিক তৎপরতার বিকল্প নেই। বাংলাদেশ পুরোভাগে থাকবে। আসুন, পুরো বিশ্ব একযোগে কাজ করি।
বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত করেছিল বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে স্বাস্থ্য সেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করি। আরও আড়াই হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করে এবং আমাদের স্থাপিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়। এতে গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আবারও ক্ষমতায় এসে আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চালু করি। সেসময় সবমিলিয়ে সাড়ে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা শুরু হয়। বর্তমানে সেগুলো থেকে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সবার পাশাপাশি মানুষকে বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এজন্য নিবেদিত কূটনৈতিক তৎপরতার বিকল্প নেই। বাংলাদেশ পুরোভাগে থাকবে। আসুন পুরো বিশ্ব একযোগে কাজ করি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয় যে, জাতিসংঘ আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। একইসঙ্গে এ উদ্ভাবনী চিন্তাকে বিশ্বের সব দেশকে অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছে জাতিসংঘ। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি অনন্য অর্জন।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে আমরা জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ২০১১ প্রণয়ন করেছি। এবার আমাদের লক্ষ্য দেশের জনগণের হাতে হেলথ আইডি কার্ড পৌঁছে দেওয়া। সে লক্ষ্যে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আমরা ডিজিটালাইজড করছি। দেশে প্রত্যেকের জন্য একটি হেলথ কার্ড হবে। এতে সবার স্বাস্থ্যের সব তথ্য থাকবে। অন্যান্য দেশেও এভাবে হেলথ কার্ড থাকে।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যা বাড়িয়েছি। একইসঙ্গে চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলোজিস্ট বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, কিডনি, গ্যাসট্রোলিভার, চক্ষু ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরি করেছি। আমরা শিশু মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে এনেছি। কোভিডকালীন শিশুদের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ছিল অন্যতম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন-২০১৮ পাস করেছি। শ্রমজীবী মানুষকে নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। চার মাসের বেতন-ভাতাসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণকে উন্নত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল।
মানুষের বর্তমান গড় আয়ু ৭৩ বছর জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ২০০৬ সালে মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৯ বছর। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছর হয়েছে। আমরা ৯৭ শতাংশ মানুষের কাছে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা পৌঁছে দিয়েছি। ইউনিয়ন পর্যায়ে দক্ষ দাত্রী দিয়ে প্রসব সেবা দেওয়া হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমরা বাল্যবিবাহে নিরোধের ব্যবস্থা নিয়েছি। বাল্যবিবাহ যাতে কম হয়, সেজন্য জনসচেতনতা তৈরি করছি এবং মেয়েদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু জনকল্যাণমুখী আধুনিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার যে ভিত গড়ে দেন, তার পথ ধরেই কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। ৭৫ পরবর্তী সামরিক একনায়কদের শাসনামলে জনস্বাস্থ্য কখনোই অগ্রাধিকার তালিকায় ছিল না। আবার বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের করোনা টিকা দেয়া ছাড়াও তাদের স্বাস্থ্যসেবার কথাও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সংকটময় সময়েও তাদের টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের কথা ভুলে যায়নি সরকার। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যু মূলত এদেশের মানবিক সংকট ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তাদের (রোহিঙ্গা) নিজ দেশে প্রত্যাবাসনই টেকসই সমাধান। আশা করি, মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে।
অনুষ্ঠানে জনস্বাস্থ্য আঞ্চলিক সহযোগিতা সংক্রান্ত পাঁচ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।