Dhaka মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সড়রক খানাখন্দ বেহাল দশা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের প্রধান সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। এ সড়কটি ছাড়া পৌর এলাকার প্রায় ৫০ ভাগ সড়ক চলাচলের অযোগ্য। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সংস্কার করা ওইসব সড়কের পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। ১৫০ বছরেরও বেশি পুরনো এই পৌরসভাটি কাগজে-কলমে প্রথম শ্রেণির হলেও এর অধিকাংশ সড়ক নিম্নশ্রেণির। যার ফলে অর্ধেকেরও বেশি সড়ক খানাখন্দে বেহাল দশা।

পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এই পৌরসভায় ২২৬ কিলোমিটার পাকা ও ৩১ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক রয়েছে।

পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ও বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ সড়কের পাশে কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। এতে দিনের পর দিন পানি জমে বেশিরভাগ জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দের। অধিকাংশ স্থানে পিচ-কংক্রিটের লেশমাত্র নেই। বৃষ্টির পানিতে সবগুলো সড়ক ডুবে গেছে। সড়কে জমে থাকা নোংরা পানি ও ময়লার দুর্গন্ধে পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি চলাচলে বিড়ম্বনায় পড়েন সাধারণ মানুষ। এরকম বেহাল দশার চিত্র চোখে পড়েছে ফকিরাপুল থেকে টান বাজার পর্যন্ত সড়কে। এ ছাড়াও ফুলবাড়িয়ার শ্যামলিবাড়ির মোড়, মুন্সেফপাড়া, পশ্চিম পাইকপাড়া, পশ্চিম মেড্ডা, মেড্ডা বাসস্ট্যান্ড, কলেজপাড়া ও দাতিয়ারা এলাকার চিত্রও অনুরূপ।

১৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভায় প্রায় তিন লাখ মানুষের বসবাস। সড়কের বেহাল দশার কারণে এখানকার খোদ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সাবেক পৌর কাউন্সিলর, সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, সংগীত শিল্পী, নারী নেত্রী, নাগরিক কমিটি, স্কুল শিক্ষক ও ছাত্রনেতারা পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। সম্প্রতি শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ডের ফুলবাড়িয়া এলাকার নাগরিকেরা সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করেছেন। এমনকি দ্রুত সড়ক সংস্কার না করা হলে পৌরসভা কার্যালয় ঘেরাও করারও হুঁশিয়ারি দেন তারা।

জানা যায়, শহরের প্রধান সড়কসহ পাড়া-মহল্লার সড়কগুলো দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ছয় হাজারেরও বেশি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিক্সা চলাচল করে। পৌরবাসীর ভাষ্যমতে, প্রায় প্রতিবছরই পৌরসভার পক্ষ থেকে কয়েকটি সড়ক সংস্কার করা হয়, যা খুবই দায়সারাভাবে। ফলে সংস্কারের কয়েক মাস না যেতেই সড়কগুলো পুরনো চেহারায় ফিরে যায়। আর দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করার ফলে কিছু সড়কে চলতে অবর্ণনীয় কষ্ট পোহায় মানুষ।

ফুলবাড়িয়া এলাকার শ্যামলিবাড়ি মোড়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে তিন নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের কোনো পৌরসভায় এত দীর্ঘ সময় ধরে সড়ক সংস্কারবিহীন অবস্থায় থাকে বলে মনে হয় না। এই জেলার কোথাও এর চেয়ে খারাপ সড়ক নেই। এই পৌরসভার চেয়ে অন্যান্য ইউনিয়নের সড়ক অনেক ভালো।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সভাপতি আবদুন নূর বলেন, পৌরসভার অধীনে সড়ক সংস্কার কাজের গুণগত মানে যথেষ্ট ঘাটতি আছে। যে কোনো কাজের গুণগত মান নিশ্চিত না হলে এবং স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার ঘাটতি থাকলে জনগণের ভোগান্তি থাকবেই। এজন্যই দুর্ভোগ এই পৌরসভার নাগরিকদের নিত্যসঙ্গী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রতন কান্তি দত্ত বলেন, ১৫৫ বছরের পুরনো একটি পৌরসভার রাস্তাঘাট এমন হবে তা মেনে নেওয়া যায় না। সড়কের পাশাপাশি এই শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থাও নাজুক। পানি নিষ্কাশনের জন্য শহরের একমাত্র টাউন খালই (প্রাকৃতিক) ভরসা। এ ছাড়া শহরের যত্রতত্র পড়ে থাকে ময়লা-আবর্জনা। এতে বোঝার জো নেই যে, এটি একটি জেলা শহরের পৌরসভা।

এ বিষয়ে পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, এই পৌরসভায় তহবিল সংকট রয়েছে। এ অবস্থায় নিজস্ব অর্থায়নে সড়ক সংস্কার ও ড্রেন নির্মাণে মোট ৬৫ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৫৪টির কাজ সমাপ্ত হয়েছে, বাকি ১১টি প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। আরও ১৪টি নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সম্প্রতি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

 

আবহাওয়া

বদলির চিঠি প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় ৮ কর কর্মকর্তা বরখাস্ত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সড়রক খানাখন্দ বেহাল দশা

প্রকাশের সময় : ০৪:১০:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জুলাই ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের প্রধান সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। এ সড়কটি ছাড়া পৌর এলাকার প্রায় ৫০ ভাগ সড়ক চলাচলের অযোগ্য। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সংস্কার করা ওইসব সড়কের পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। ১৫০ বছরেরও বেশি পুরনো এই পৌরসভাটি কাগজে-কলমে প্রথম শ্রেণির হলেও এর অধিকাংশ সড়ক নিম্নশ্রেণির। যার ফলে অর্ধেকেরও বেশি সড়ক খানাখন্দে বেহাল দশা।

পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এই পৌরসভায় ২২৬ কিলোমিটার পাকা ও ৩১ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক রয়েছে।

পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ও বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ সড়কের পাশে কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। এতে দিনের পর দিন পানি জমে বেশিরভাগ জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দের। অধিকাংশ স্থানে পিচ-কংক্রিটের লেশমাত্র নেই। বৃষ্টির পানিতে সবগুলো সড়ক ডুবে গেছে। সড়কে জমে থাকা নোংরা পানি ও ময়লার দুর্গন্ধে পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি চলাচলে বিড়ম্বনায় পড়েন সাধারণ মানুষ। এরকম বেহাল দশার চিত্র চোখে পড়েছে ফকিরাপুল থেকে টান বাজার পর্যন্ত সড়কে। এ ছাড়াও ফুলবাড়িয়ার শ্যামলিবাড়ির মোড়, মুন্সেফপাড়া, পশ্চিম পাইকপাড়া, পশ্চিম মেড্ডা, মেড্ডা বাসস্ট্যান্ড, কলেজপাড়া ও দাতিয়ারা এলাকার চিত্রও অনুরূপ।

১৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভায় প্রায় তিন লাখ মানুষের বসবাস। সড়কের বেহাল দশার কারণে এখানকার খোদ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সাবেক পৌর কাউন্সিলর, সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, সংগীত শিল্পী, নারী নেত্রী, নাগরিক কমিটি, স্কুল শিক্ষক ও ছাত্রনেতারা পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। সম্প্রতি শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ডের ফুলবাড়িয়া এলাকার নাগরিকেরা সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করেছেন। এমনকি দ্রুত সড়ক সংস্কার না করা হলে পৌরসভা কার্যালয় ঘেরাও করারও হুঁশিয়ারি দেন তারা।

জানা যায়, শহরের প্রধান সড়কসহ পাড়া-মহল্লার সড়কগুলো দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ছয় হাজারেরও বেশি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিক্সা চলাচল করে। পৌরবাসীর ভাষ্যমতে, প্রায় প্রতিবছরই পৌরসভার পক্ষ থেকে কয়েকটি সড়ক সংস্কার করা হয়, যা খুবই দায়সারাভাবে। ফলে সংস্কারের কয়েক মাস না যেতেই সড়কগুলো পুরনো চেহারায় ফিরে যায়। আর দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করার ফলে কিছু সড়কে চলতে অবর্ণনীয় কষ্ট পোহায় মানুষ।

ফুলবাড়িয়া এলাকার শ্যামলিবাড়ি মোড়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে তিন নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের কোনো পৌরসভায় এত দীর্ঘ সময় ধরে সড়ক সংস্কারবিহীন অবস্থায় থাকে বলে মনে হয় না। এই জেলার কোথাও এর চেয়ে খারাপ সড়ক নেই। এই পৌরসভার চেয়ে অন্যান্য ইউনিয়নের সড়ক অনেক ভালো।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সভাপতি আবদুন নূর বলেন, পৌরসভার অধীনে সড়ক সংস্কার কাজের গুণগত মানে যথেষ্ট ঘাটতি আছে। যে কোনো কাজের গুণগত মান নিশ্চিত না হলে এবং স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার ঘাটতি থাকলে জনগণের ভোগান্তি থাকবেই। এজন্যই দুর্ভোগ এই পৌরসভার নাগরিকদের নিত্যসঙ্গী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রতন কান্তি দত্ত বলেন, ১৫৫ বছরের পুরনো একটি পৌরসভার রাস্তাঘাট এমন হবে তা মেনে নেওয়া যায় না। সড়কের পাশাপাশি এই শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থাও নাজুক। পানি নিষ্কাশনের জন্য শহরের একমাত্র টাউন খালই (প্রাকৃতিক) ভরসা। এ ছাড়া শহরের যত্রতত্র পড়ে থাকে ময়লা-আবর্জনা। এতে বোঝার জো নেই যে, এটি একটি জেলা শহরের পৌরসভা।

এ বিষয়ে পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, এই পৌরসভায় তহবিল সংকট রয়েছে। এ অবস্থায় নিজস্ব অর্থায়নে সড়ক সংস্কার ও ড্রেন নির্মাণে মোট ৬৫ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৫৪টির কাজ সমাপ্ত হয়েছে, বাকি ১১টি প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। আরও ১৪টি নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সম্প্রতি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।