নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশের একটি সরকারি ওয়েবসাইট থেকে লাখ লাখ নাগরিকের গোপন ও ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা বিটক্রেক সাইবার সিকিউরিটির গবেষক ভিক্টর মার্কোপোলোস এমন দাবি করেছেন।
বিশ্বখ্যাত ওয়েবসাইট টেকক্রাঞ্চের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের একটি ওয়েবসাইট থেকে নাগরিকদের নাম, ফোন নম্বর, ইমেল আইডি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়েছে।
মারকোপাওলোস জানান, গত ২৭ জুন হঠাৎ করেই তিনি তথ্যগুলো দেখতে পান। এর কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি বাংলাদেশ সরকারের কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিমের (বিজিডি ই-গভ সার্ট) সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
খবরটির সত্যতা যাচাই করেছে তথ্যপ্রযুক্তির খবর দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চ।
তারা বলছে, সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটের একটি পাবলিক সার্চ টুলে প্রশ্ন করার অংশটি ব্যবহার করে এ পরীক্ষা চালানো হয়েছে। এতে ডেটাবেজের মধ্যে থাকা অন্য তথ্যগুলোও ওই ওয়েবসাইটে পাওয়া গেছে।
তবে সরকারের কোন ওয়েবসাইট থেকে তথ্য ফাঁস হয়েছে, তার নাম উল্লেখ করেনি টেকক্রাঞ্চ।
এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশের বিজিডি ই-গভ সার্ট, সরকারের প্রেস অফিস, ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এবং নিউইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশি কনস্যুলেটের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল টেকক্রাঞ্চ। তবে সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে তারা।
বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়সী প্রত্যেককে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। যেটির প্রত্যেকটির আলাদা নম্বর থাকে। জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। এই পরিচয়পত্রের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট, জমি বেচা-কেনা ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলাসহ সব কাজ করা হয়।
সিইআরটি, বাংলাদেশ সরকারের প্রেস অফিস, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এবং নিউইয়র্কের বাংলাদেশের কনস্যুলেটের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ভিক্টর মার্কোপোলোস।
মারকোপাওলোস টেকক্রাঞ্চকে জানান, তথ্যগুলো খুব সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। গুগলে সার্চ করার সময় তথ্যগুলো আপনাআপনিই হাজির হয়েছে। তথ্যগুলো খোঁজার কোনো চেষ্টা তিনি করেননি। গুগলে একটি এসকিউএল এরর সার্চ করার সময় দ্বিতীয় ফলাফল হিসেবে এগুলো হাজির হয়। এসকিউএল হলো ডেটাবেজে ডেটা ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে তৈরি একটি প্রোগ্রামিং ভাষা।
যেসব তথ্য ফাঁস হয়েছে সেগুলোই বেশ ঝুঁকির। কিন্তু এসব তথ্য ব্যবহার করে পরবর্তীতে বিভিন্ন অনলাইনের আবেদনে ঢোকা, পরিমার্জন বা আবেদন মুছে ফেলা এমনকি জন্মনিবন্ধনের তথ্যের ভ্যারিফিকেশনও দেখা যাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
ভিক্টর মারকোপাওলোস জানান,“.gov.bd” ডোমেইনে থাকা একটি বাংলাদেশি সরকারি ওয়েবসাইটে এসব তথ্য উন্মুক্ত অবস্থায় আছে।
এ তথ্যগুলো সরকারি পরিষেবা পেতে নাগরিকরা আবেদন করার সময় দিয়েছিলেন। সেখানে লেনদেন আইডি এবং আবেদনকারীদের অর্থ প্রদানের মতো তথ্যও রয়েছে বলে জানান তিনি।
নাগরিকের গোপন তথ্য প্রকাশ্যে থাকার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিজিডি ই-গভ সিআইআরটির প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম খান জানান, সিআইআরটি এ ধরনের কোনো সমস্যা সম্পর্কে জানে না। তারা এ ধরনের কোনো গোপনীয়তা লঙ্ঘনের বিষয় চিহ্নিতও করেনি।