নিজস্ব প্রতিবেদক :
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে যে ঋণ দিয়েছে, তা কয়েকজন মিলেই শোধ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইএমএফের এখানে কী? তারা যে ঋণ দিয়েছে, তা এই যে কয়েকজন আছেন এখানে, আমরা নিজেরাই শোধ দিতে পারব। আমরা কয়েকজন মিলেই (শোধ দিতে পারব)…। আইএমএফ নামটা অনেক বড়। কিন্তু কী দিয়েছে, জানেন? সেটা আমাদের দুই মাসের রেমিট্যান্সের পরিমাণ। দুই মাসের রেমিট্যান্স হলো তাদের কাছ থেকে পাওয়া আমাদের ঋণ। তাই এটা শোধ করা আমাদের জন্য কোনো ব্যাপার না।
তাহলে ঋণ নেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল কি- সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা আমরা বুঝতে পারিনি। যুদ্ধ কতদিন থাকবে… যেভাবে আমাদের ঘাটতি পড়ছিল, আমরা যেসব জিনিস নিয়মিত ব্যবহার করি। তাতে আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমরা তো তখন এটা বুঝতে পারিনি।
বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রতিবেদন নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের গেল কয়েক বছরের সামষ্টিক অর্থনীতির দৃশ্যপট আপনারা দেখতে পারেন। যেমন প্রবৃদ্ধির হারের গেল তিন বছরের ফিগার আছে। ২০২০-২০২১, ২০২১-২০২২ ও ২০২২-২০২৩। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ২০২১-২০২২ সালে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, ২০২২-২০২৩ সালে ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ।
মুস্তফা কামাল বলেন, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রপ্তানি অনেকটা পড়ে গিয়েছিল। তখন এটি ছিল ৩৮ বিলিয়ন ডলার। পরের বছরে সেটা ছিল ৫২ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে সেই রপ্তানি হয়েছে ৫৫ বিলিয়ন ডলারের। রেমিট্যান্স আসাও বেড়েছে। ২০২০-২০২১ বছরে আমাদের রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২৪ বিলিয়ন ডলার।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ‘কাঁচা মরিচের কেজি ৪০০-৫০০ টাকা’ শুনে অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, কাঁচা মরিচ সারাবছর কেনেননি কেন? আপনারা তো একদিনের জন্য কাঁচা মরিচ কেনেন। বর্ষা এলেই কাঁচামরিচের দাম বেড়ে যায়, তাই অনেকেই অতিরিক্ত কিনে রাখেন। এজন্য এখন বাজারে কাচাঁমরিচের দাম অস্বাভাবিক।
কাঁচা মরিচ প্রসঙ্গে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, কাঁচা মরিচ সারাবছর কেনেননি কেন? আপনারা একদিনের জন্য কাঁচা মরিচ কেনেন। কেউ তৈরি করবে বলেন? ক্ষেত লাগবে। কাঁচা মরিচ যদি ৪০০-৫০০ টাকায় কিনতে পারেন, তাহলে সবাই ইনভেস্ট করে কাঁচা মরিচ কম কম লাগাবেন।
মানুষ কষ্টে আছে এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের মানুষ কষ্ট রয়েছে। আমরা দুনিয়ার বাইরে নয়। দুনিয়ার চিন্তা করলে আমরা খুব ভালো অবস্থানে রয়েছি। বাংলাদেশ বিশ্বের বাইরে নয়। সংকট বিশ্বব্যাপী। আর এখন কোনো মানুষ না খেয়ে মারা যায় না।
মূল্যস্ফীতি কী শুধু টাকার অঙ্কে মূল্যায়ন করা যায়? প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ২৬ হাজার পরিবারকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। যাদের খাবার কেনার টাকা নেই তাদের এ কার্ডের মাধ্যমে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কম দামে খাবার দেওয়া, যাদের কম ইনকাম তাদের কাছ থেকে কম ট্যাক্স নেওয়া হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে যাদের খাবার নেই, তাদের খাবার দিতে হবে। আমরা খাবার দিচ্ছি। ভ্যাট মাফ করতে হবে। আয়কর কম নিতে হবে। সেই কাজটি আমরা করছি।
মানুষ না খেয়ে নেই ঠিক আছে, কিন্তু যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে মানুষ কষ্টে আছে এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষ কষ্ট করছে সারা পৃথিবীতে। আমরা পৃথিবীর বাহিরে নয়। আর আমাদের হাতে কিছু করার নেই। আমাদের হাতে যা আছে, তাদে দিয়ে চেষ্টা করছি। এতে করে আমরা ভালো অবস্থানে আছি। খুব ভালো অবস্থানে রাখতে পারলে আমরা আরও খুশি হতাম।
জাইকা নতুন কোনো সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলেছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের প্রকল্পগুলো বর্তমানে কী অবস্থায় আছে, তারা তা দেখতে এসেছে। কিছু কিছু নতুন প্রকল্পও আসবে। নতুন যে প্রকল্পগুলো আসবে, সেগুলোর অধিকাংশই প্রযুক্তি সম্পর্কিত।
জাইকার বাজেট সহায়তাও আছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের যে বাজেট, তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে যেসব জায়গায় হাত দিতে হবে, কিছু কিছু জায়গা আছে, তারা নিজেরা আমাদের সহায়তা করতে পারে।
কৃচ্ছ্রতা থেকে আমরা কবে নাগাদ বের হতে পারবো? এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, কোনো জায়গায় আপনি খারাপ দেখেছেন। এ বছর আমেরিকায় তিনটি ব্যাংক ব্যর্থ হয়েছে। এতে বোঝা যায়, বিশ্ব অর্থনীতি কোন জায়গায় গেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি আপনারা যদি বিবেচনা করেন, তাহলে আপনাকে মেনে নিতে হবে যে আমাদের অর্জন তুলনামূলক অন্যদের চেয়ে অনেক ভালো।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান, জাইকার নির্বাহী সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়ামাদা জুনিচি প্রমুখ।