নিজস্ব প্রতিবেদক :
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার ঢাকা সফরে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে এবং আমি এটি বাদ দিচ্ছি না। কিন্তু এটি নির্বাচনকেন্দ্রিক সফর এটি ভাবাও ঠিক হবে না।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দল শুধু নির্বাচন নিয়েই কথা বলতে আসছে—এ ধরনের তথ্য আমার কাছে নেই। এটি আমাদের মধ্যে যে মেকানিজমগুলো আছে সেটির একটি ধারাবাহিকতা। অনেক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে এবং তার মধ্যে নির্বাচন আসতে পারে।’ কিন্তু এখানে অনেক ইস্যু আছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
তিনি বলেন, মানবাধিকার, রোহিঙ্গা, শ্রমাধিকার, বাণিজ্য—সুতরাং আমেরিকার সঙ্গে অনেক মেকানিজম কাজ করছে। মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতা একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং তার কাজের ক্ষেত্র অনেক ব্যাপক। তার সঙ্গে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তারমধ্যে একটি হয়তো থাকতে পারে নির্বাচন।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, চার দিনের সফরে ১১ জুলাই একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নাগরিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জিয়া বাংলাদেশ সফরে আসছেন। তবে তাদের এই সফর বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্রিক নয়।
আগামী ১১ থেকে ১৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নাগরিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জিয়া ঢাকা সফর করবেন। তার সফরসঙ্গী হিসেবে সঙ্গে থাকছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং ইউএসএইডের এশিয়া ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অঞ্জলি কৌর।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের অনেকগুলো মেকানিজম কাজ করছে। লেবার ইস্যু আছে, ট্রেড ইস্যু আছে। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাবেন।
এদিকে বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) ইস্যুতে আলোচনা করতে ঢাকায় এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) সৌরভ কুমার। ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) সৌরভ কুমারের সফরের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফরের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।
বিমসটেক ইস্যুতে আলোচনা করতেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব পূর্ব ঢাকায় এসেছেন। কিন্তু তার সফরের সময়ে ঢাকায় নেই বিমসটেকের সেক্রেটারি জেনারেল।
তাহলে বাংলাদেশর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নয়া দিল্লির প্রতিনিধির সঙ্গে কোনো আলোচনা হলো কি না-জানতে চাওয়া হলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এগুলো একেবারেই অমূলক। বিভিন্ন ধরনের স্পেকুলেশান আমরা দেখেছি। এটি ঠিক নয়। কারণ বিমসটেকের সেক্রেটারি জেনারেলের মা মারা গেছেন। তিনি সে কারণে এখানে নেই।
সৌরভ কুমারের সফরের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফরের কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ডেটগুলো সব আগেই ঠিক করা হয়েছে। ভারতের সচিব এলেন তার সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদল আসছেন, বিষয়টা এ রকম না। একটা দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সিরিজ অব সফর বা মিটিং হয়। আমাদের তো কমই হয়।
তিনি বলেন, এগুলো একটার সঙ্গে আরেকটার কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু একের পর এক হয়ে যাচ্ছে হয়তো। একই সময়ে তিন-চারটি ডেলিগেশন আসছে, এর মানে তো এই না প্রত্যেকটা ডেলিগেশন অরগাইজ করে বা কোঅর্ডিনেট করে করছে। সুতরাং, এখানে এতো রিট করার কিছু নেই। প্রত্যেকটার আলাদা ব্র্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে বলেও জানান তিনি।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, মালিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন বন্ধের মূল কারণ হলো- মালি সরকারের অসম্মতি। গত জুনে মালির অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তিরক্ষীদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান। স্বাগতিক দেশের সম্মতি ছাড়া শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা অসম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। একই মন্তব্য করেন নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধিও।
২০১৩ সাল থেকে এ শান্তিরক্ষা মিশনের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরু থেকেই মালিতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা মালিতে শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্বরত আছে। বর্তমানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনী মিলিয়ে প্রায় ১৭০০ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী মালি মিশনে দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন।
বাংলাদেশ ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি দেশের শান্তিরক্ষীরা মালি শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছে। গৃহীত রেজ্যুলেশন অনুযায়ী- মালি মিশনে দায়িত্বরত সব শান্তিরক্ষীদের প্রত্যাহার করা হবে। জাতিসংঘের ম্যান্ডেটের অধীন ভবিষ্যতে যে কোনো শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রস্তুতি সবসময় রয়েছে।
সুদানে চলমান গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষিতে দেশটি থেকে বাংলাদেশিদের ফেরানোর বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সুদানের সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে গত ১৫ এপ্রিল সংঘর্ষ চলমান। এ পর্যন্ত ছয়শোর অধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকার সুদানে অবস্থানরত ১০৬২ জন বাংলাদেশি নাগরকিকে সুদান থেকে ফিরিয়ে এনেছে। প্রথমপর্যায়ে ৯০৩ জন বাংলাদেশিকে গত মে মাসে সরকারি খরচে সুদান থেকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়েছে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, দ্বিতীয়পর্যায়ে গত ১ জুলাই বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে (বিজি-৩২৬) ৮০ জন, ২ জুলাই বাংলাদেশ বিমানের আরেক ফ্লাইটে (বিজি-২২৬) ৫৯ জন ও ৩ জুলাই বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বিজি৩২৬-তে আরো ২০ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। সুদানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বদর এয়ারলাইন্সে সরকারি খরচে সুদান থেকে দোহায় পরিবহন করা হচ্ছে। দোহা পৌঁছামাত্র তাদেরকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের ফ্লাইটে বোর্ডিং করিয়ে দেওয়া হয়। প্রত্যাবাসিত প্রত্যেকেই দেশে ফেরার পর পকেটমানি হিসাবে পাঁচ হাজার টাকা ও খাদ্যসামগ্রী উপহার দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পোর্ট সুদান বা দোহা- কোনো স্থানেই যেন প্রবাসীদের কোনো অসুবিধা না হয় সেজন্য উভয় জায়গায় প্রবাসীদের জন্য খাদ্য, পানীয়, চিকিৎসা ও সাময়িক বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবার প্রচেষ্টায় আটকেপড়া সব বাংলাদেশিকে নিরাপদে আমরা দেশে ফিরিয়ে আনতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আগামী ৩০ নভেম্বর থাইল্যান্ডে বিমসটেক সামিট অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সামিটে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) সৌরভ কুমার ঢাকায় এসেছেন। তার সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। বিমসটেকের পরবর্তী সেক্রেটারি জেনারেল হবে ভারত। আর বাংলাদেশ হবে চেয়ারম্যান। সে কারণে আমরা বিমসটেককে শক্তিশালীকরণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছি।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বিমসটেকের রোড ও রেলের বাইরে বিদ্যুতের গ্রিড কানেক্টিভিটি বাড়াতে চাই। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র মোহাম্মাদ রফিকুল আলম জানান, গত ৩০ জুন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতভাবে রেজুলেশন ২৬৯০ পাস হয়। এ রেজুলেশনের মাধ্যমে কার্যত মালিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ম্যান্ডেট বাতিল এবং মালি মিশন থেকে সব শান্তিরক্ষাীদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আগামী ৩১ ডিসেম্বর মধ্যে সব শান্তিরক্ষীদের মালি থেকে প্রত্যাহার করা হবে এবং এ বিষয়ে মালি সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে।
তিনি জানান, মালিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন বন্ধের মূল কারণ হলো মালি সরকারের অসম্মতি। গত জুনে মালির অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তিরক্ষীদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান। স্বাগতিক দেশের সম্মতি ব্যতীত শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা এবং শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা অসম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। একই মন্তব্য করেন নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধি।
২০১৩ সাল থেকে এ শান্তিরক্ষা মিশনের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরু থেকেই মালিতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা মালিতে শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্বরত আছে। বর্তমানে সেনা বাহিনী ও পুলিশ বাহিনী মিলে প্রায় ১৭০০ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী মালি মিশনে দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। বাংলাদেশ ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি দেশের শান্তিরক্ষী মালি শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছে। গৃহীত রেজুলেশন অনুযায়ী মালি মিশনে দায়িত্বরত সব শান্তিরক্ষীদের প্রত্যাহার করা হবে। জাতিসংঘের ম্যান্ডেটের অধীন ভবিষ্যতে যে কোনো শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রস্তুতি সবসময় রয়েছে বলে জানান এ মুখপাত্র।