Dhaka সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কেঁদে কেঁদে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় তামিমের

  • স্পোর্টস ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০২:২৩:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই ২০২৩
  • ১৯০ জন দেখেছেন

স্পোর্টস ডেস্ক : 

সব ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন তামিম ইকবাল। তবে বিমর্ষ অবস্থায় থাকা তামিমের মুখ দিয়ে যেন কথা বেরোচ্ছিল না। কান্নার জন্য ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না।

বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) চট্টগ্রামের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা টাইগার ওয়ানডে অধিনায়ক।

দুপুর ১ টা ১৫ মিনিটেই নির্ধারিত হোটেলে পৌঁছান তামিম। শুরু থেকেই দেখা যায় তাঁর চোখ ভেজা। মিনিট দশেক পর কথা শুরু করেই তামিম জানান, বুধবার (৬ জুলাই) আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচটিই ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার শেষ ম্যাচ। এসময় বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন তামিম

সংবাদ সম্মেলনে অশ্রুসজল চোখে তামিম বলেন, আফগানিস্তানের বিপক্ষে বুধবার (৬ জুলাই) ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেকদিন ধরেই আমি এটা নিয়ে ভাবছি। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি এটা নিয়ে।

জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে কোলাহলের মধ্যে তামিম এসে সবাইকে অনুরোধ করেন, আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে দুইটা মিনিট কথা বলতে দেন। এরপর অবসরের ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে তামিম বলেছেন, আমার কাছে মনে হয়েছে এটাই সঠিক সময় সরে দাঁড়ানোর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। সবাইকে ধন্যবাদ জানানো প্রয়োজন।

তামিম শুরুতেই বলেন, নরম্যালি এমন সময়ে যেকোনো মানুষই স্পিচ লিখে নিয়ে আসে, কিন্তু এমন কিছু আমি করিনি। খুব বেশি বড় করবনা, ছোট করেই শেষ করবো আমার কথা।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন তামিম

১৬ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের জন্য সতীর্থ, কোচ, বিসিবি, পরিবার ও সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্যারিয়ারের এই দীর্ঘ পথচলায় আমার সব সতীর্থ, সব কোচ, বিসিবির কর্মকর্তাগণ, আমার পরিবার ও যারা আমার পাশে ছিলেন, নানাভাবে সহায়তা করেছেন, ভরসা রেখেছেন এবং আমার ভক্ত-সমর্থক, বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনুসারী, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের সবার অবদান ও ভালোবাসায় আমি চেষ্টা করেছি সব সময় দেশের জন্য নিজের সবটুকু উজাড় করে দিতে।

এরপর তামিমের গলা ধরে আসে। কান্নাভেজা কণ্ঠে কিছুটা ডুকরে উঠে সময় নিয়ে বলেন, আমি সব সময়ই একটা বলেছি, আমি ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্নপূরণ করার জন্য। আমি জানি না তাকে কতটা গর্বিত করতে পেরেছি এই ১৬ বছরে। আমি শুধু একটি কথাই বলতে চাই, আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।

সংবাদ সম্মেলনে কেঁদেছেন তামিম

তামিম এই কথাগুলো বলার সময়ও কেঁদেছেন। এরপর বলেন, আমি আরও কয়েকজনকে ধনন্যবাদ জানাতে চাই। আমার সবচেয়ে ছোট চাচা, যিনি ইন্তেকাল করেছেন, তাঁর নাম আকবর খান, যাঁর হাত ধরেই আমি প্রথম ক্রিকেট বলে টুর্নামেন্ট খেলেছি। চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে তপন দা নামে একজন কোচ আছেন, তাঁর কাছে আমি ঋণী।

তামিম এই কথাগুলো বলার সময় পিনপতন নীরবতা নেমে এসেছিল সংবাদ সম্মেলনে। শুধু ক্যামেরার শাটার ক্লিকের আওয়াজ শোনা গেছে আর তামিমের ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠার শব্দ।

ধরে আসা গলাতেই বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা এই ওপেনার বলেছেন, আসলে আমার খুব বেশি কিছু বলার নেই। আমি একটা জিনিসই বলতে চাই সেটি হলো, আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি ভালো খেলার। আমি আসলেই নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। আমি কতটা ভালো খেলোয়াড় ছিলাম, আদৌ ভালো ছিলাম কিনা, আমি জানি না। তবে আমি সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি।আমি যখনই মাঠে নেমেছি আমি আমার শতভাগ দিয়েছি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন তামিম

আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেই ছিল তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। শতভাগ ফিট না হয়েই এই ম্যাচে খেলার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন তামিম। সে ম্যাচে তিনি খেলেছেনও যাতে বৃষ্টি আইনে হেরেছে বাংলাদেশ। পুরোপুরি ফিট না থাকায় ব্যাট হাতে মাত্র ১৩ রান করেই আউট হয়েছেন তিনি। এদিকে অধিনায়কের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ছিলেন বিসিবি সভাপতি এবং কোচ। এসব নিয়েই দেশসেরা ওপেনারের আলোচনা-সমালোচনায় সরগরম ছিল দেশের ক্রিকেটাঙ্গন। এর মাঝে রাতেই টাইগার অধিনায়ক জানিয়েছিলেন বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) দুপুর ১২ টায় সংবাদ সম্মেলন করবেন তিনি। আজ গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কান্নাভেজা চোখে বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেট খেলাকে বিদায় জানালেন তিনি।

মাসখানেক ধরেই কোমরের চোটে ভুগছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। যে কারণে সর্বশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচটিও খেলতে পারেননি টাইগার এই ওপেনার। এরপর শঙ্কা জেগেছিল ওয়ানডে সিরিজে খেলা নিয়েও। নিয়মিত অনুশীলন চালিয়েও শতভাগ ফিট হয়ে উঠতে পারেননি তামিম। তবে আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের আগে সংবাদ সম্মেলনে তামিম জানিয়ে দেন শতভাগ ফিট না হলেও প্রথম ওয়ানডে খেলবেন তিনি। শেষমেশ খেলেছেনও।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে তামিম

তামিমের এমন সিদ্ধান্তে কিছুটা রাগান্বিত হন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। দেশের একটি দৈনিককে তিনি বলছিলেন, ‘এটি তো আর পাড়া-মহল্লার কোনো ম্যাচ নয়, আন্তর্জাতিক একটা ম্যাচ। এমন সিরিজের আগের দিন অধিনায়ক বলছে সে ফিট না। কিন্তু খেলবে। খেলে নিজের ফিটনেস বোঝার চেষ্টা করবে। এটা তো পেশাদার কোনো আচরণ হতে পারে না।

বিসিবি সভাপতির এমন মন্তব্যের পরপরই মূলত অবসরের ঘোষণাটা দিলেন তামিম। এর আগে ২০২২ সালের ১৬ জুলাই হঠাৎই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তামিম। এবারো অনেকটা হুট করেই বিদায়ের কথা জানালেন।

গত বছর ১৬ জুলাই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী তামিম। এবার ওয়ানডে ও টেস্ট থেকেও অবসরের ঘোষণা দিলেন। ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তামিমের। ২০০৭ সালের কেনিয়ার বিপক্ষে দেশের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন। সর্বশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে প্রথম ওয়ানডেতে এই সংস্করণেই শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ২৪১ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩৬.৬২ গড়ে তিনি ৮ হাজার ৩১৩ রান করেছেন। সেঞ্চুরি ১৪টি, হাফ সেঞ্চুরি ৫৬টি।

অবসরের ঘোষণা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তামিম।

এছাড়া ৭০ টেস্টে ৩৮.৮৯ গড়ে তার সংগ্রহ ৫ হাজার ১৩৪ রান। ৩১ হাফ সেঞ্চুরির সঙ্গে করেছেন ১০টি সেঞ্চুরি। এই সংস্করণে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরি করেছেন তামিম।

টি-টোয়েন্টিতে ৭৪ ম্যাচে ১৭০১ রান করেছেন তামিম। এই সংস্করণে দেশের হয়ে শুধু তামিমই সেঞ্চুরি করেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৫ সেঞ্চুরি করা তামিম তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৫ হাজারের বেশি রান করেছেন। দেশের আর কোনো ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত রান করতে পারেননি।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

বিমানের ফ্লাইটে ফের ত্রুটি, শারজাহ না গিয়ে ফিরে এলো ঢাকায়

কেঁদে কেঁদে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় তামিমের

প্রকাশের সময় : ০২:২৩:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই ২০২৩

স্পোর্টস ডেস্ক : 

সব ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন তামিম ইকবাল। তবে বিমর্ষ অবস্থায় থাকা তামিমের মুখ দিয়ে যেন কথা বেরোচ্ছিল না। কান্নার জন্য ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না।

বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) চট্টগ্রামের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা টাইগার ওয়ানডে অধিনায়ক।

দুপুর ১ টা ১৫ মিনিটেই নির্ধারিত হোটেলে পৌঁছান তামিম। শুরু থেকেই দেখা যায় তাঁর চোখ ভেজা। মিনিট দশেক পর কথা শুরু করেই তামিম জানান, বুধবার (৬ জুলাই) আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচটিই ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার শেষ ম্যাচ। এসময় বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন তামিম

সংবাদ সম্মেলনে অশ্রুসজল চোখে তামিম বলেন, আফগানিস্তানের বিপক্ষে বুধবার (৬ জুলাই) ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেকদিন ধরেই আমি এটা নিয়ে ভাবছি। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি এটা নিয়ে।

জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে কোলাহলের মধ্যে তামিম এসে সবাইকে অনুরোধ করেন, আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে দুইটা মিনিট কথা বলতে দেন। এরপর অবসরের ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে তামিম বলেছেন, আমার কাছে মনে হয়েছে এটাই সঠিক সময় সরে দাঁড়ানোর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। সবাইকে ধন্যবাদ জানানো প্রয়োজন।

তামিম শুরুতেই বলেন, নরম্যালি এমন সময়ে যেকোনো মানুষই স্পিচ লিখে নিয়ে আসে, কিন্তু এমন কিছু আমি করিনি। খুব বেশি বড় করবনা, ছোট করেই শেষ করবো আমার কথা।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন তামিম

১৬ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের জন্য সতীর্থ, কোচ, বিসিবি, পরিবার ও সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্যারিয়ারের এই দীর্ঘ পথচলায় আমার সব সতীর্থ, সব কোচ, বিসিবির কর্মকর্তাগণ, আমার পরিবার ও যারা আমার পাশে ছিলেন, নানাভাবে সহায়তা করেছেন, ভরসা রেখেছেন এবং আমার ভক্ত-সমর্থক, বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনুসারী, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের সবার অবদান ও ভালোবাসায় আমি চেষ্টা করেছি সব সময় দেশের জন্য নিজের সবটুকু উজাড় করে দিতে।

এরপর তামিমের গলা ধরে আসে। কান্নাভেজা কণ্ঠে কিছুটা ডুকরে উঠে সময় নিয়ে বলেন, আমি সব সময়ই একটা বলেছি, আমি ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্নপূরণ করার জন্য। আমি জানি না তাকে কতটা গর্বিত করতে পেরেছি এই ১৬ বছরে। আমি শুধু একটি কথাই বলতে চাই, আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।

সংবাদ সম্মেলনে কেঁদেছেন তামিম

তামিম এই কথাগুলো বলার সময়ও কেঁদেছেন। এরপর বলেন, আমি আরও কয়েকজনকে ধনন্যবাদ জানাতে চাই। আমার সবচেয়ে ছোট চাচা, যিনি ইন্তেকাল করেছেন, তাঁর নাম আকবর খান, যাঁর হাত ধরেই আমি প্রথম ক্রিকেট বলে টুর্নামেন্ট খেলেছি। চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে তপন দা নামে একজন কোচ আছেন, তাঁর কাছে আমি ঋণী।

তামিম এই কথাগুলো বলার সময় পিনপতন নীরবতা নেমে এসেছিল সংবাদ সম্মেলনে। শুধু ক্যামেরার শাটার ক্লিকের আওয়াজ শোনা গেছে আর তামিমের ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠার শব্দ।

ধরে আসা গলাতেই বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা এই ওপেনার বলেছেন, আসলে আমার খুব বেশি কিছু বলার নেই। আমি একটা জিনিসই বলতে চাই সেটি হলো, আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি ভালো খেলার। আমি আসলেই নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। আমি কতটা ভালো খেলোয়াড় ছিলাম, আদৌ ভালো ছিলাম কিনা, আমি জানি না। তবে আমি সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি।আমি যখনই মাঠে নেমেছি আমি আমার শতভাগ দিয়েছি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন তামিম

আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেই ছিল তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। শতভাগ ফিট না হয়েই এই ম্যাচে খেলার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন তামিম। সে ম্যাচে তিনি খেলেছেনও যাতে বৃষ্টি আইনে হেরেছে বাংলাদেশ। পুরোপুরি ফিট না থাকায় ব্যাট হাতে মাত্র ১৩ রান করেই আউট হয়েছেন তিনি। এদিকে অধিনায়কের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ছিলেন বিসিবি সভাপতি এবং কোচ। এসব নিয়েই দেশসেরা ওপেনারের আলোচনা-সমালোচনায় সরগরম ছিল দেশের ক্রিকেটাঙ্গন। এর মাঝে রাতেই টাইগার অধিনায়ক জানিয়েছিলেন বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) দুপুর ১২ টায় সংবাদ সম্মেলন করবেন তিনি। আজ গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কান্নাভেজা চোখে বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেট খেলাকে বিদায় জানালেন তিনি।

মাসখানেক ধরেই কোমরের চোটে ভুগছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। যে কারণে সর্বশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচটিও খেলতে পারেননি টাইগার এই ওপেনার। এরপর শঙ্কা জেগেছিল ওয়ানডে সিরিজে খেলা নিয়েও। নিয়মিত অনুশীলন চালিয়েও শতভাগ ফিট হয়ে উঠতে পারেননি তামিম। তবে আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের আগে সংবাদ সম্মেলনে তামিম জানিয়ে দেন শতভাগ ফিট না হলেও প্রথম ওয়ানডে খেলবেন তিনি। শেষমেশ খেলেছেনও।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে তামিম

তামিমের এমন সিদ্ধান্তে কিছুটা রাগান্বিত হন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। দেশের একটি দৈনিককে তিনি বলছিলেন, ‘এটি তো আর পাড়া-মহল্লার কোনো ম্যাচ নয়, আন্তর্জাতিক একটা ম্যাচ। এমন সিরিজের আগের দিন অধিনায়ক বলছে সে ফিট না। কিন্তু খেলবে। খেলে নিজের ফিটনেস বোঝার চেষ্টা করবে। এটা তো পেশাদার কোনো আচরণ হতে পারে না।

বিসিবি সভাপতির এমন মন্তব্যের পরপরই মূলত অবসরের ঘোষণাটা দিলেন তামিম। এর আগে ২০২২ সালের ১৬ জুলাই হঠাৎই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তামিম। এবারো অনেকটা হুট করেই বিদায়ের কথা জানালেন।

গত বছর ১৬ জুলাই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী তামিম। এবার ওয়ানডে ও টেস্ট থেকেও অবসরের ঘোষণা দিলেন। ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তামিমের। ২০০৭ সালের কেনিয়ার বিপক্ষে দেশের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন। সর্বশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে প্রথম ওয়ানডেতে এই সংস্করণেই শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ২৪১ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩৬.৬২ গড়ে তিনি ৮ হাজার ৩১৩ রান করেছেন। সেঞ্চুরি ১৪টি, হাফ সেঞ্চুরি ৫৬টি।

অবসরের ঘোষণা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তামিম।

এছাড়া ৭০ টেস্টে ৩৮.৮৯ গড়ে তার সংগ্রহ ৫ হাজার ১৩৪ রান। ৩১ হাফ সেঞ্চুরির সঙ্গে করেছেন ১০টি সেঞ্চুরি। এই সংস্করণে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরি করেছেন তামিম।

টি-টোয়েন্টিতে ৭৪ ম্যাচে ১৭০১ রান করেছেন তামিম। এই সংস্করণে দেশের হয়ে শুধু তামিমই সেঞ্চুরি করেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৫ সেঞ্চুরি করা তামিম তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৫ হাজারের বেশি রান করেছেন। দেশের আর কোনো ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত রান করতে পারেননি।