নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঈদে প্রতিকূল আবহাওয়ায় ঝড়বৃষ্টির মধ্যেও যেন মুসল্লিরা জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করতে পারেন, সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
মঙ্গলবার (২৭ জুন) বেলা ১১টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতি পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মেয়র এ কথা বলেন।
শেখ তাপস বলেন, ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও যেন মুসল্লিরা জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন, সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঈদের দিন আমরা প্রতিকূল আবহাওয়ার আশঙ্কা করছি। সেজন্য কোনো ধরনের যাতে সমস্যা না হয়, সে কারণে আজকের এই পরিদর্শন। পরিবার নিয়ে স্বাচ্ছন্দে যেন ঈদের জামাত আদায় করতে পারে সেই আয়োজন আমরা প্রায় শেষ করে ফেলেছি। এখানে প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। আমরা সেই প্রস্তুতি নিয়েছি।
তাপস বলেন, অল্প বৃষ্টিতে নামাজ অবশ্যই সম্ভব হবে। আমরা আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে যেটা তথ্য পেয়েছি যে, ঈদের দিন ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। ঝড় হলেও যেন মুসল্লিরা সুষ্ঠুভাবে জামাত আদায় করতে পারেন সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। কোথাও যেন পানি না পড়ে এবং পানি পড়ার জায়গায় যেন জলাবদ্ধতা না হয় সেই ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি।
জাতীয় ঈদগাহের ঈদের জামাতের নিরাপত্তা নিয়ে মেয়র বলেন, আমরা কোনো নাশকতার আশঙ্কা করছি না। তারপরও আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিদর্শন করবেন। নিরাপত্তার জন্য তারা কার্যক্রম নিচ্ছে। সিসি ক্যামেরাসহ নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হয়েছে। সুতরাং আমরা কোনো নাশকতার আশঙ্কা করছি না। শান্তিপূর্ণভাবে এখানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে মেয়র নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মেয়র জাতীয় ঈদগাহে এসে নামাজ আদায় করার আহ্বান জানান।
ঈদুল আজহার তৃতীয় দিনে কোরবানি দিলে বর্জ্য অপসরণকারীদের জন্য বর্জ্য অপসারণ করা অমানবিক হয়ে যায় বলে মন্তব্য করে ফজলে নূর তাপস বলেন, কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। আমি সবাইকে আহ্বান করব যেন দুই দিনের মধ্যে কোরবানি সম্পন্ন করে ফেলেন। তৃতীয় দিনের জন্য যেন না রাখা হয়।
বর্জ্য অপসারণ নিয়ে মেয়র বলেন, ঈদের আগের রাত ১২টা থেকেই আমরা পশুর হাটের বর্জ্য অপসারণ শুরু করব। ঈদের দিন দুপুর ২টা থেকে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে তদারকি শুরু করব এবং বর্জ্য অপসারণ শুরু করব।
তিনি আরও বলেন, গতবছর আমরা বলেছিলাম, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করব, আমরা সফল হয়েছি। এবারও আমাদের সেরকম প্রস্তুতি রয়েছে। বর্জ্য অপসারণে আমরা ৩৫০ এর উপর যন্ত্রপাতি ব্যবহার করব। আমাদের প্রায় ১০ হাজার জনবল মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত থাকবে। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে তদারকি করব, আমাদের কর্মকর্তাদের সুনির্দিষ্ট করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অঞ্চলভিত্তিক, ওয়ার্ড-ভিত্তিক এবং হাটভিত্তিক তদারকি করার জন্য। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি এবং এবারও আমরা সফল হব।
মেয়র তাপস বলেন, আমি নিবেদন করব, তৃতীয় দিনের জন্য যেন কোনো পশু রেখে দেওয়া না হয়। এটা আমার বিনীত নিবেদন থাকবে। আমরা দেখেছি তৃতীয় দিনেও অনেকেই কোরবানি দিয়ে থাকে, সেই জায়গাটায় আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। কারণ আমাদের সব কার্যক্রমে ৭২ ঘণ্টার পরে কিন্তু বিশ্রাম দিতে হবে। আমাদের কার্যক্রম একটানা ৭২ ঘণ্টা চলবে। সুতরাং এটা একটা অমানবিক হয়ে যায় যে, তাদের দিয়ে আবার কাজ করানো। এজন্য আমি সবার কাছে বিনীত অনুরোধ করব।
এক প্রশ্নে জবাবে মেয়র বলেন, বর্জ্য রাখার জন্য থলে, স্যাভলন, ব্লিচিং পাউডার দিচ্ছি। বর্জ্য সংগ্রহ করার জন্য যে সামগ্রী দরকার সেগুলো আমরা দিচ্ছি। মাঠ পর্যায়ে সকল প্রস্তুতি আমাদের নেওয়া হয়েছে।
ডেঙ্গু প্রসঙ্গে মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে অনেকেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছেন না। আমরা লক্ষ্য করি এক জায়গায় গেলে সেখানে যখন আমরা লার্ভা পাই; তিন চার সপ্তাহ পর সেখানে গেলে আমরা আবারও লার্ভা পাই।
ঈদের সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়া নিয়ে এক প্রশ্নে মেয়র বলেন, ডেঙ্গু মশাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমাদের ব্যাপক কার্যক্রম চলছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শুরু করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম আরো গতিশীল এবং বেগবান করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা জরিমানা করবো। কারণ আমরা দেখেছি এখনো অনেকেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছেন না। কারণ বেশিরভাগ মানুষই অসচেতন। সুতরাং আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানার কার্যক্রম চালিয়ে যাবো। ইতোমধ্যে আমরা কয়েক হাজার স্থান আবাসস্থল শনাক্ত করেছি। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করি এক জায়গায় গেলে সেখানে যখন আমরা লার্ভা পাই। তিন চার সপ্তাহ পর সেখানে গেলে আমরা আবারও লার্ভা পাই। সুতরাং সেভাবে আমাদের জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি হচ্ছে না। এজন্য আমরা চিরুনি অভিযান যেটাকে বলে সেভাবে আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবো।