গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :
বাংলাদেশ পুলিশের প্রধান (আইজিপি) আব্দুল্লাহ আল-মামুন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এদেশের সব মানুষ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ। যে কোনো ধরনের চক্রান্ত রুখে দেওয়ার সামর্থ্য বাংলাদেশ সরকারের আছে।
শনিবার (২৪ জুন) বিকেল ৩ টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক পরিদর্শন শেষে বাইপাইল ত্রিমোড়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আইজিপি বলেন, এদেশের সম্মান, স্বাধীনতা বিনষ্ট করার জন্য দেশীয় যে কুচক্রী মহল জড়িত রয়েছে তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। পাশপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একনিষ্ঠভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে সেই স্বড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে কাজ করছে।
তিনি বলেন, আমরা দেশের সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের সদস্যরা মাঠে থাকবে। আমরা আরেকটি কথা জানাতে চাই, ঈদে ঢাকা ছেড়ে যারা গ্রামের বাড়িতে যাবেন তারা মূল্যবান সম্পদসহ আবাসনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যাবেন। আমাদের সদস্যরা বিভিন্ন ফ্ল্যাট-বাড়ি এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে।
ঈদ যাত্রায় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি বলেন, যে কোন প্রয়োজনে আপনারা পুলিশের সহায়তা নিন এবং জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ এ কল করে আমাদের জানান। এই পরিস্থিতিতে আমাদের মোটরসাইকেল টিম সবসময় সড়কে থাকবে। আমাদের সদস্যরা ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করছেন কিনা তা মনিটরিংয়ের জন্য পুলিশের সিনিয়র সদস্যরাও মাঠে থাকবেন। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য যা করা দরকার, আমরা তা করছি।
গরুর ট্রাক নিয়ে হাঁটে টানা-হেঁচড়া করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মন্তব্য করে আইজিপি বলেন, রোজার ঈদে যেভাবে মানুষ নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছে সেই কথা মাথায় রেখে এবারও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজিয়েছি।
পুলিশ প্রধান বলেন, অন্যদিকে পশুবাহী ট্রাক সড়ক-মহাসড়কে এবং নৌকা যাতায়াত করবে নদীতে। এ ছাড়াও যেহেতু এখন মৌসুমি ফলের সময় তাই সে গাড়িগুলোও আসবে। সব কিছু বিবেচনায় রেখেই বিভিন্ন মুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এবারেও গরুর হাটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অটুট থাকবে। কোনো কোনো সময় দেখা যায় বিভিন্ন গরুর হাঁটে টানা-হেঁচড়া এবং চাঁদাবাজি হয়। এ ক্ষেত্রে যদি কেউ কোনো ট্রাক বা নৌকা যে গন্তব্যে যাবে ওই গন্তব্যের আগে থামাতে চায় তাদের আইনানুগভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনুগ্রহ পূর্ব ওই কাজটি কেউ করতে যাবেন না, গেলে আইনের যে প্রয়োগ করার দরকার সেই প্রয়োগ করা হবে। গরুর হাটের ইজারাদার এবং ব্যবসায়ীরা যদি কেউ কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখিন হন কাছের পুলিশের সহায়তা নিন। অথবা কাছাকাছি কাউকে না পেলে ৯৯৯ এ ফোন করুন। আপনারা আমাদের সহায়তা নিন, আমরা আপনাদের সেবায় নিয়োজিত আছি। ঈদের সময় আইনশৃংখলা রক্ষা এবং যাত্রী সাধারণের যাতায়াত সুগম করার জন্য পুলিশ আপনাদের পাশে রয়েছে। সমস্যা সমাধানের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি গত ঈদের মতো এবারও সকলের যাত্রাপথ সুগম রাখতে পারব। অনেক সময় আবহাওয়ার কারেণ জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়। তারপরও যানজটের বিষয়ে যে শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে আমরা রাস্তায় থেকে আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করব।
জাল টাকার বিস্তাররোধে এবং অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বন্ধে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি মার্কেটে জাল টাকা শনাক্তে মেশিন আমাদের কাছে থাকবে। কারও সহযোগিতা প্রয়োজন হলে আমরা সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছি। জাল টাকার জড়িতদের গ্রেফতারসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। টাকা পরিবহনে সমস্যা হলে সেখানেও পুলিশ সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, গত ঈদের চেয়ে এবারের ঈদযাত্রা চ্যালেঞ্জিং হবে। গতবার মহাসড়কে শুধু যাত্রী পারের গাড়ি ছিল। এবার একদিকে যাত্রীরা গন্তব্যে যাবেন। অন্যদিকে, পশুবাহী ট্রাক, নৌযান মহাসড়ক ও নদীতে চলাচল করবে। তাছাড়া ফলবাহী যানবাহনও আসবে এগুলোকে আটকানো যাবে না। সবকিছু বিবেচনায় রেখে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, সরকার এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।
আইজিপি বলেন, ঈদযাত্রা নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সভা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দফতর, সড়ক পরিবহন, রেলওয়ে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, পুলিশ সদরদফতর এবং প্রত্যেকটি জেলায় সব স্টেকহোল্ডার, মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে মিটিং করেছি। আমরা সবাই একসঙ্গে একযোগে কাজ করছি। আশা করছি, এবারও সবার সহযোগিতায় যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।
তিনি বলেন, গতবারের ঈদের যাতায়াত ব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুন্দর ছিল। ওই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে আমরা নিরাপত্তা সাজিয়েছে। প্রকৌশলীসহ রাস্তাঘাটের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। জেলায় জেলায় প্রশাসকরা বৈঠক করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একযোগে কাজ করছে, নির্ধারিত সময়ে সাধারণ মানুষ যেন গন্তব্যে যেতে পারে।
পুলিশপ্রধান বলেন, আগে রাস্তাঘাটে খানাখন্দ ভরা ও দুরবস্থা ছিল। আগের চেয়ে রাস্তার অবস্থা অনেক ভালো হয়েছে। সরকার অনেক উন্নয়ন কাজ করেছে। এখনও কার্যক্রম চলমান আছে।
এ সময় তার সঙ্গে অতিরিক্ত আইজিপি (হাইওয়ে) শাহাবুদ্দিন খান, ডিআইজি (অপারেশন) হায়দার আলী খান, গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মাহবুব রহমান, পুলিশের সদরদফতরের এআইজি (মিডিয়া) মঞ্জুর রহমানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।