নিজস্ব প্রতিবেদক :
ফরিদপুরের তালমা-জয়বাংলা আঞ্চলিক সড়কের দুই কিলোমিটার অংশ খানাখন্দে বেহাল অবস্থা। ১৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির ওই দুই কিলোমিটার অংশ পড়েছে নগরকান্দা পৌরসভার মধ্যে। পৌরসভার ভেতরের ওই দুই কিলোমিটার বাদে তালমার মোড় থেকে মোল্লার মোড় পর্যন্ত সড়কটির ১২ কিলোমিটার অংশ এবং নগরকান্দা পৌরসভার ঈশ্বরদী সেতু থেকে জয়বাংলা পর্যন্ত বাকি পাঁচ কিলোমিটার অংশ মাঝে মধ্যে সংস্কার করায় চলাচল উপযোগী।
সড়কটির ১৯ কিলোমিটারের মধ্যে পৌরসভার বাজার মসজিদ থেকে ঈশ্বরদী সেতু পর্যন্ত দুই কিলোমিটার অংশ এলাকাবাসী কাছে দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সড়ক দিয়ে বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, জিপ, অ্যাম্বুলেন্স, অটোরিকশা, মাহেন্দ্র, মোটরসাইকেল ও ভ্যানে প্রতিদিন হাজারো মানুষ চলাচল করে।
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের নগরকান্দা উপজেলার তালমার মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে চলে গেছে ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৪ ফুট প্রস্থের একটি আঞ্চলিক সড়ক। সড়কটি মিশেছে নগরকান্দা উপজেলার জয়বাংলা মোড়ে, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে। ১৯ কিলোমিটারের এ সড়ক নগরকান্দা উপজেলার তালমা, লস্করদিয়া, নগরকান্দা পৌরসভা, কোদালিয়া-শহীদনগর, চরযশোরদী ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে গেছে।
নগরকান্দা মহল্লার বাসিন্দা মহেন্দ্র নারায়ণ একাডেমির শিক্ষক জাহিদ হোসেনের বাসার সামনে, নগরকান্দা কলেজের সামনে ও নগরকান্দা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সামনে সবচেয়ে বেশি ভাঙাচোরা। এসব জায়গা দিয়ে যান চলাচল করে হেলেদুলে। বৃষ্টিতে এসব জায়গার অবস্থা আরও বেহাল হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানা গেছে, এটি এ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। ফরিদপুর থেকে খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ভাঙা গোলচত্বর হয়ে গেলে ফরিদপুর বা রাজবাড়ী যেতে অন্তত ১২ কিলোমিটার পথ বেশি লাগে। সেক্ষেত্রে তালমা হয়ে এ সড়ক দিয়ে জয় বাংলার মোড় হয়ে গেলে সময় ও পথ দুটোই কমে। এ কারণে সড়কটি এ অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর এই সড়কের গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। ফরিদপুর শহর থেকে এই সড়ক ব্যবহার করে খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল ও গোপালগঞ্জ অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াতে এ সড়ক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সড়কের এই দুই কিলোমিটার অংশের বেহাল দশায় ভোগান্তির পাশাপাশি গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে ভোগান্তি মেনে নিয়ে চলাচল করছেন।
ওই সড়কে ভ্যান চালান নগরকান্দার বাউতিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সুশীল মন্ডল। তিনি বলেন, এই রাস্তায় ভ্যান চালাই অনেক বছর ধরে। আগে যখনই রাস্তা খারাপ হতো, তখন দ্রুত ঠিক করত। এই রাস্তাটুকু প্রায় তিন বছর ধরে এই অবস্থায় থাকলেও কেউ ঠিক করতেছে না। এতে ভোগান্তিতে আছি আমরা। জোরে চালাতে পারি না। জোরে চালালে ঝাঁকিতে কোমর ও বুক ব্যাথা হয়ে যায়।
ফরিদপুর থেকে গোপালগঞ্জের মকসুদপুরগামী পুরাতন আসবাবপত্র বহনকারী এক ট্রাকচালক ইদ্রিস খলিফা বলেন, রাস্তা কমানোর জন্য এই রাস্তায় ঢুকছিলাম। ভাঙার উপর দিয়ে গেলে দশ-বারো কিলোমিটার পথ বেশি ঘুরতে হয়। এই রাস্তার যা অবস্থা দেখলাম তাতে মনে হচ্ছে ভাঙা মোড় হয়ে গেলে রাস্তা একটু বেশি হলেও আগে গোপালগঞ্জ পৌঁছাতে পারতাম।
ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের হিসাববিজ্ঞানের মাস্টার্স শ্রেণির শিক্ষার্থী নগরকান্দার চরযশোরদী গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মণ চন্দ্র মন্ডল বলেন, বৃষ্টি হলে এই রাস্তা কাঁদামাটিতে ভরে যায়। তখন অনেকসময় কাঁদায় গাড়ির চাকা আটকে যায়। এমন অবস্থায় আমি প্রায় তিন বছর ধরে দেখছি। এতে ভোগান্তিতে পড়ে আমার মত হাজারো যাত্রী। তাছাড়া বৃষ্টি না থাকলেও রাস্তার পিচ ও ইট উঠে গিয়ে মাটি বের হয়ে যাওয়ায় ধুলায় যা-তা অবস্থা হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে কথা হলে সড়কের বেহাল দশায় যাত্রীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করেন নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র নিমাই চন্দ্র সরকার। তিনি বলেন, এ সড়কটি সংস্কার করার খরচ বহনে কোনো বরাদ্দ নেই। পৌরসভার বাইরের বাকি ১৭ কিলোমিটার এলজিইডি নিয়মিত সংস্কার করে সচল রাখে। তবে পৌরসভার এই অংশে তাদের হাত দেওয়ার অধিকার নেই বলে তারা হাত দেয় না। যেহেতু নগরকান্দা পৌরসভা আর্থিকভাবে সচ্ছল নয় সেজন্য আমি এলজিইডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের পরামর্শ মত অনাপত্তি পত্রও দিয়েছি। আমরা এলজিইডির কাজের অপেক্ষায় আছি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে এলজিইডির নগরকান্দা উপজেলা প্রকৌশলী মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ১৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ওই আঞ্চলিক সড়কের দুই কিলোমিটার অংশ পৌরসভার মধ্যে পড়ায় আমাদের পক্ষে সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। তবে পৌরসভা আমাদের কাজ করে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছে। আমরা সড়কের জরিপ কাজ সম্পন্ন করেছি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প অনুমোদন পাওয়া সাপেক্ষে সড়কের ওই অংশের সংস্কার কাজ করা যেতে পারে।