স্পোর্টস ডেস্ক :
বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিলো ব্রাজিল। এরপর গত মার্চে মরক্কোর বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে মাঠে নেমেও দেখতে হয়েছে হারের মুখই। অবশেষে জয়ের দেখা পেলো ব্রাজিল, গিনির বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে ৪-১ গোলে বড় জয়ই পেয়েছে সেলেসাওরা।
ম্যাচটি ব্রাজিল খেলতে নেমেছিলো কিছুদিন আগেই ভিনিসিয়াস জুনিয়রের প্রতি বর্ণবাদী আচরণের প্রতিবাদ হিসেবে। বর্ণবাদ বিরোধী প্রচারণার অংশ হিসেবেই ব্রাজিল এদিন প্রথমার্ধে কালো জার্সি পরে খেলতে নাম। নিজেদের ইতিহাসে এই প্রথমবার কালো মার্সিতে মাঠে নামে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
শনিবার (১৭ জুন) দিবাগত রাত দেড়টায়। হতাশার স্মৃতি সঙ্গে নিয়েই আফ্রিকান দেশ গিনির বিপক্ষে প্রথম প্রীতি ম্যাচে মাঠে নামে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। আর ম্যাচে আফ্রিকান দেশটিকে উড়িয়ে দিয়ে বিশাল ব্যবধানে জয় পেয়েছে সেলেসাওরা।
ঐতিহ্যবাহী হলুদ জার্সির পরিবর্তে কালো জার্সি পরে খেলতে নামা ব্রাজিলকে দেখতে যেমন অপরিচিত লাগছিলো, শুরু থেকে মাঠের খেলাও ছিলো না ঠিক ব্রাজিলসুলভ। ব্রাজিলের তুলনায় আক্রমণের ধার বেশি ছিল আফ্রিকার দেশ গিনিরই। ব্রাজিলের খেলায় ছিলো অনেকটা ছন্নছাড়া ভাব।
বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে শুরু হওয়া এ ম্যাচে দলের প্রাণভোমরা নেইমার জুনিয়রকে ছাড়াই খেলতে নেমেছিল সেলেসাওরা। তবে দলে ছিলেন ভিনিসিয়াসসহ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকা আরও ১৪ জন। ম্যাচের শুরুতেই গিনির ফুটবলার ন্যাভি কেইতার ফাউলের শিকার হলে ফ্রি-কিক পায় ব্রাজিল। তবে নিজেদের অর্ধে পাওয়া সে ফ্রি-কিক থেকে তেমন কোনো সুবিধা আদায় করতে পারেনি লাতিন আমেরিকার দেশটি। এরপর ষষ্ঠ মিনিটে প্রথমা আক্রমণে যায় ব্রাজিল। কিন্তু লুকাস পাকেতার করা এসিস্টে আর্টন লুকাসের বা পায়ের নেওয়া জোরালো শট ফিরিয়ে দেন গিনির গোলরক্ষক।
এরপর ম্যাচের ২৭ মিনিটেই আরও দুইবার গোল করার সুযোগ পায় ব্রাজিল। রিচার্লিসননের করা হেডে বল চলে যায় গোলপোস্টের একেবারে কাছে দিয়ে। তখন ক্যাসেমিরের নেওয়া শটও আবার ফিরিয়ে দেন গিনির গোলরক্ষক। তবে সেলেসাওরা প্রথম গোলের দেখা পান সেই ২৭ মিনিটেই। ক্যাসেমিরোর শট ফিরিয়ে দিলেও তা হাতে রাখতে পারেননি প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক। তখন জোয়েলিনটনের নেওয়া শটে বল খুঁজে পায় জালের ঠিকানা।
এক গলের লিড নিয়ে দ্বিগুন আক্রমণে নামে সেলেসাওরা। আর সফলতাও পায় ৩ মিনিট পরই। ৩০ মিনিটে রিয়াল মাদ্রিদ তারকা রদ্রিগো গুজের নেওয়া ডান পায়ের শটে দ্বিতীয়বার লক্ষ্যভেদ করে ব্রাজিল। দুই গোল হজম করে গিনিও অবশ্য সময় নেয়নি একটি ফেরত দিতে। ৩৬ মিনিটে গোলের দেখা পায় তারাও। সারহু গিরাসির হেডে লক্ষ্যভেদ করে তারা।
এক গোলে এগিয়ে থেকে বিরতির পর আবারও গলের দেখা পায় ব্রাজিল। ৪৭ মিনিটে এডার মিলিতাওয়ের হেডে তৃতীয়বার লক্ষ্যভেদ করে তারা। ম্যাচের ৪৭ মিনিটে গিনির জালে তৃত্রীয়বার বল জড়ান ব্রাজিলের সেন্টার ব্যাক এডার মিলিতাও। রিচার্লিসনের শট কোনে দারুণ সেভ না করলে ব্রাজিলের স্কোর ৫৮ মিনিটে ৩-০ হতে পারতো।
৭৬ মিনিটে ব্রাজিলকে ভয় ধরিয়ে দেয় গিনি। এডারসন পরপর দুইবার সেভ করে সেলেসাওদের বাঁচান। প্রথমবার ডানদিকে ঝাঁপিয়ে, পরেরবার বাঁ পা দিয়ে গিনির খেলোয়াড়দের শট ঠেকান। দুই মিনিট পর রিচার্লিসন সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন। শট নিতে তিনি বেশ সময় নেওয়ায় কোনে ট্যাকল করে বল বিপদমুক্ত করেন।
দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণাত্মক খেলেও আর গোলের দেখা পাচ্ছিলো না ব্রাজিল। অবশেষে গোল আসে নেইমারের অনুপস্থিতিতে এই ম্যাচে ব্রাজিলের ১০ নম্বর জার্সি গায়ে মাঠে নামা ভিনিসিয়াসের পা থেকে। শেষদিকে গিনির ফুটবলারের বাজে ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় ব্রাজিল। আর ৮৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল আদায় করে নেন ভিনিসিয়াস। শেষ পর্যন্ত আর গোল না হওয়ায় ৪-১ ব্যবধানে ম্যাচ জিতে ব্রাজিল।
এদিকে হেরে গেলেও পুরো ম্যাচ জুড়েই লড়াইয়ের চেষ্টা করেছে গিনি। ৪২ শতাংশ সময় বল নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল তারা। পুরো ম্যাচে গোল করার জন্য ১২টি শট নিয়ে ৮টিই লক্ষ্যে রাখতে পেরেছিল তারা। বিপরীতে গিনি ৭টি শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখতে পেরেছিল ৫টি। ম্যাচে জয় পরাজয় থাকলেও এর মাধ্যমে মূলত বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল দুই দলের ফুটবলাররা। আর বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার জন্য কালো জার্সি পরে মাঠে নামে ব্রাজিল।
মঙ্গলবার (২০ জুন) সেনেগালের বিপক্ষে আরেকটি ম্যাচ খেলবে ব্রাজিল। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দেশ পর্তুগালে হবে ম্যাচটি।