Dhaka বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সড়ক নয় যেন মৃত্যুফাঁদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে জনগুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কে বিপজ্জনক বাঁকগুলো এখন রীতিমতো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি পার্শ্ব রাস্তাগুলো ডেকে আনছে ঘন ঘন দুর্ঘটনার বিপদ। গত এক বছরে চরম ঝুঁকিপূর্ণ এসব বাঁকে ছোট-বড় শতাধিক দুর্ঘটনায় অন্তত ১৫-২০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো কয়েক শতাধিক শিশু, নারী-পুরুষ। চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন অনেকেই। তবে এবার কোরবানি ঈদে এ সড়কে আরো দুর্ঘটনা বাড়বে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এলাকাবাসী, পুলিশ ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের কয়েকটি আঞ্চলিক সড়কের মধ্যে অন্যতম কালিয়াকৈর-ফুলবাড়িয়া-মাওনা সড়ক। যোগাযোগ সহজ হওয়ায় বেড়েছে সড়কটির গুরুত্বও। সড়কে যাত্রী ও পণ্য নিয়ে হাজার হাজার যানবাহন প্রতিদিন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটছে। কিন্তু এ সড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার অংশের প্রায় ১৯ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯টি বাঁকই ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো হলো- নামাশুলাই একটি, খালপাড় কমিনিউটি ক্লিনিকের উত্তর ও দক্ষিণে দুটি, মেদীআশুলাই পুকুরপাড় একটি, মেদীআশুলাই জামে মসজিদের পশ্চিম ও উত্তর পাশে তিনটি, ভাঙ্গাবাড়ী একটি, কাঞ্চানপুর একটি, টেকিবাড়ি একটি, হবুয়ারচালা তিনটি, মজিদচালা একটি, বড়চালা একটি, বাশাকৈর একটি, ফুলবাড়িয়া বাজারের পূর্বপাশে একটি ও সালদোপাড়া একটি।

বেশিরভাগ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও পার্শ্ব রাস্তায় সতর্কতামূলক সংকেত থাকলেও এখনো অনেক বাঁক অরক্ষিত। আবার সংকেত থাকলেও তা মানছেন না চালকরা। সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া ট্রাক, মাছবাহী ট্রাক, অবৈধ সিএনজি ও মোটরসাইকেলগুলো। তবে সড়ক সংশ্লিষ্টদের ভাঙ্গাবাড়ির ভুল সংকেত অনুস্মরণ করলে নির্ঘাত দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হবে। অপরদিকে ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অবগত নয় সিএনজি-অটোরিকশার চালকরা। এছাড়াও সংকেত ও চিহ্ন থাকার পরও বিপজ্জনক বাঁকে ওভারটেকিং, অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালানো, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি, সড়কের ওপর যানবাহন থামিয়ে যাত্রী ও মালামাল ওঠানো-নামানোর কারণে প্রায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানিও।

আর দুর্ঘটনার ফলে বিভিন্ন সময় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষমাণ থাকতে হচ্ছে যানবাহন। জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি সময়ক্ষেপণ ও অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। এছাড়াও চাপাইর এলাকার তুরাগ নদীর ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজটি ভেঙে বড়ো দুর্ঘটনা আশঙ্কা থাকলেও সেদিকে নজর নেই যেন কারো। যোগাযোগ খাতে এ সড়কের পরিধি ও সংস্কার বাড়লেও যাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যাপারটি উপেক্ষিত।

এবার কোরবানি ঈদকে ঘিরে এ সড়কে দুর্ঘটনা বৃদ্ধির আশঙ্কাতেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কালিয়াকৈর, শ্রীপুর ছাড়াও ঢাকার ধামরাই, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার শত শত গ্রামের মানুষ চলাচল করছেন। তবে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো প্রশস্তকরণের মাধ্যমে দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি সচেতন মহলের।

গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী অভি আহম্মেদ সুজন জানান, দুর্ঘটনা রোধে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্কতামূলক সংকেত দেওয়া হয়েছে। তবে দায়সারা বক্তব্য দিয়ে খবরটি প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, সম্প্রতি ওই সড়কে দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ট্রাফিক ও সড়ক বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হবে। এছাড়াও দুর্ঘটনা রোধে মোবাইল টিমের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

২০০ মিটার কাঁচা রাস্তায় পাঁচ প্রতিষ্ঠানে চলাচলে দুর্ভোগ

সড়ক নয় যেন মৃত্যুফাঁদ

প্রকাশের সময় : ০১:২৫:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ জুন ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে জনগুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কে বিপজ্জনক বাঁকগুলো এখন রীতিমতো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি পার্শ্ব রাস্তাগুলো ডেকে আনছে ঘন ঘন দুর্ঘটনার বিপদ। গত এক বছরে চরম ঝুঁকিপূর্ণ এসব বাঁকে ছোট-বড় শতাধিক দুর্ঘটনায় অন্তত ১৫-২০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো কয়েক শতাধিক শিশু, নারী-পুরুষ। চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন অনেকেই। তবে এবার কোরবানি ঈদে এ সড়কে আরো দুর্ঘটনা বাড়বে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এলাকাবাসী, পুলিশ ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের কয়েকটি আঞ্চলিক সড়কের মধ্যে অন্যতম কালিয়াকৈর-ফুলবাড়িয়া-মাওনা সড়ক। যোগাযোগ সহজ হওয়ায় বেড়েছে সড়কটির গুরুত্বও। সড়কে যাত্রী ও পণ্য নিয়ে হাজার হাজার যানবাহন প্রতিদিন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটছে। কিন্তু এ সড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার অংশের প্রায় ১৯ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯টি বাঁকই ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো হলো- নামাশুলাই একটি, খালপাড় কমিনিউটি ক্লিনিকের উত্তর ও দক্ষিণে দুটি, মেদীআশুলাই পুকুরপাড় একটি, মেদীআশুলাই জামে মসজিদের পশ্চিম ও উত্তর পাশে তিনটি, ভাঙ্গাবাড়ী একটি, কাঞ্চানপুর একটি, টেকিবাড়ি একটি, হবুয়ারচালা তিনটি, মজিদচালা একটি, বড়চালা একটি, বাশাকৈর একটি, ফুলবাড়িয়া বাজারের পূর্বপাশে একটি ও সালদোপাড়া একটি।

বেশিরভাগ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও পার্শ্ব রাস্তায় সতর্কতামূলক সংকেত থাকলেও এখনো অনেক বাঁক অরক্ষিত। আবার সংকেত থাকলেও তা মানছেন না চালকরা। সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া ট্রাক, মাছবাহী ট্রাক, অবৈধ সিএনজি ও মোটরসাইকেলগুলো। তবে সড়ক সংশ্লিষ্টদের ভাঙ্গাবাড়ির ভুল সংকেত অনুস্মরণ করলে নির্ঘাত দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হবে। অপরদিকে ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অবগত নয় সিএনজি-অটোরিকশার চালকরা। এছাড়াও সংকেত ও চিহ্ন থাকার পরও বিপজ্জনক বাঁকে ওভারটেকিং, অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালানো, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি, সড়কের ওপর যানবাহন থামিয়ে যাত্রী ও মালামাল ওঠানো-নামানোর কারণে প্রায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানিও।

আর দুর্ঘটনার ফলে বিভিন্ন সময় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষমাণ থাকতে হচ্ছে যানবাহন। জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি সময়ক্ষেপণ ও অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। এছাড়াও চাপাইর এলাকার তুরাগ নদীর ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজটি ভেঙে বড়ো দুর্ঘটনা আশঙ্কা থাকলেও সেদিকে নজর নেই যেন কারো। যোগাযোগ খাতে এ সড়কের পরিধি ও সংস্কার বাড়লেও যাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যাপারটি উপেক্ষিত।

এবার কোরবানি ঈদকে ঘিরে এ সড়কে দুর্ঘটনা বৃদ্ধির আশঙ্কাতেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কালিয়াকৈর, শ্রীপুর ছাড়াও ঢাকার ধামরাই, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার শত শত গ্রামের মানুষ চলাচল করছেন। তবে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো প্রশস্তকরণের মাধ্যমে দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি সচেতন মহলের।

গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী অভি আহম্মেদ সুজন জানান, দুর্ঘটনা রোধে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্কতামূলক সংকেত দেওয়া হয়েছে। তবে দায়সারা বক্তব্য দিয়ে খবরটি প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, সম্প্রতি ওই সড়কে দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ট্রাফিক ও সড়ক বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হবে। এছাড়াও দুর্ঘটনা রোধে মোবাইল টিমের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।