Dhaka শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দীর্ঘ দিন পর শতক হাকিয়ে যা বললেন মুমিনুল

  • স্পোর্টস ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৩০:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জুন ২০২৩
  • ২২৩ জন দেখেছেন

স্পোর্টস ডেস্ক : 

টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকে ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে ছিলেন মুমিনুল হক। টেস্টে টানা ফিফটির রেকর্ড করে তিনি উপাধি পান ‘লিটল ব্র্যাডম্যান’। তবে কয়েক বছর দারুণ ছন্দে থাকার পর তিনি ফর্ম হারিয়ে ফেলেন। ফলে এক সময় দল থেকেও বাদ পড়ে যান মুমিনুল। পরবর্তীতে গেল বছর ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে অনুষ্ঠিত টেস্ট দিয়ে তিনি দলে ফিরেছিলেন। খেলেন ৮৪ রানের ইনিংস।

ব্যাটের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে ১২টির মধ্যে ১০ ইনিংসেই দুই অংকে পৌঁছতে পারেননি, চারবার করেন আবার শূন্য। সেই ১০ ইনিংস ছিল এমন-০ , ০, ২, ৬, ৫, ২, ৯, ০, ০, ৪।

এরপর তাকে ফর্মে ফেরাতে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়েও খেলানো হয়। কিন্তু সেখানেও অনুজ্জ্বল মুমিনুল। সর্বশেষ সিলেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে চারদিনের ম্যাচে মুমিনুল দুই ইনিংসে করেন (৫+৫) মোটে ১০ রান। অবশেষে সে রানখরা কাটিয়ে ফেরা।

২৬ মাস পর টেস্ট সেঞ্চুরির দেখাও পেলেন। যার জন্য তার সময় লেগেছে দুই বছর। পরবর্তীতে ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন মুমিনুল। শুনিয়েছেন নিজের কঠিন সময়ের গল্প, ‘আমার যখন হয়েছে মনে হয়েছে পুরা দুনিয়া এক পাশে, আমি আরেক পাশে। ভেতরে কী গেছে শুধু আমিই জানি। মনে হয়েছে আমি পুরা শেষ!’

কেমন লাগছে? সেই রান করতে না পারার দিনগুলোইবা কেমন ছিল? আজ শুক্রবার শেরে বাংলায় দিনের খেলা শেষে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে মুমিনুল মানতে চাইলেন না, তিনি রান পাননি। সাবেক টেস্ট অধিনায়ক বোঝানোর চেষ্টা করেনন, তার প্রতি আসলে প্রত্যাশা বেশি।

তবে মুমিনুল বললেন, আপনি যদি শেষ চার ইনিংস দেখেন, রান অত খারাপ না। মানে আপনারা হয়তো প্রতি ম্যাচে ২০০ আশা করেন, এজন্য আপনাদের কাছে মনে হয় রানে নেই! আপনারা যেভাবে চিন্তা করেন রানে নেই আমি, তা না!

তাহলে কি কোনো আক্ষেপ ছিল না? মুমিনুলের জবাব, হ্যাঁ, আক্ষেপ ছিল যখন লম্বা ইনিংস ব্যাটিং করতে পারিনি, যেটা আমার অভ্যাস। এক-দুই-তিন-চার সেশন ব্যাটিং করা, ওইটা নিয়ে আক্ষেপ ছিল। আলহামদুলিল্লাহ করতে পারছি, দলের জন্য হেল্পফুল হইছে আর কিছু না।

তিনি আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টের তৃতীয় দিনশেষে সংবাদ সম্মেলনে আসেন। এর আগেই টেস্ট ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরি পান। সুযোগ পেয়ে মুমিনুলকে প্রশ্নটা করা। পেসারদের এমন করতে দেখে কি ভালো লাগে? প্রশ্নটা পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই তিনি বলে উঠেন, আলহামদুলিল্লাহ ভালো একটা প্রশ্ন।

আসল প্রশ্নটা ছিল আফসোস হয় কি না, সেটির জবাবে মুমিনুল বলেন, কোনো আফসোস কাজ করে না। সন্তুষ্টি তো কাজ করে? মুমিনুল বলেন, ‘সন্তুষ্টি কাজ করে। আপনারা (সাংবাদিকরা) যদি বলেন, তাহলে আরও সন্তুষ্টি কাজ করে। ’

অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর মুমিনুল পেয়েছেন প্রথম সেঞ্চুরি। নেতৃত্ব ছাড়ায় কি এখন একটু হালকা হয়ে খেলতে পারছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘ক্যাপ্টেন্সি না থাকলে একটা সুবিধা হয় এই যে এত এত কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। খালি ব্যাটিংটাতে মনোযোগ দিলেই হয়। ’

তিনি বলেন, আমি নিজে এটার ভেতর দিয়ে গিয়েছি, এটা ভয়ঙ্কর। যে এর মধ্যে দিয়ে যায় সেই বোঝে, আমার সময় মনে হয়েছে পুরো পৃথিবী একদিকে আমি আরেকদিকে। যার হয় সে ছাড়া কেউ বোঝে না, এর মধ্যে ঢুকতেও পারবেন না। ওই সময় শুধু প্রসেস ঠিক রাখতে পারেন, বাকিটা আল্লাহ যখন দেওয়ার তখন রান দেবে। শান্ত প্রসেস ঠিক রাখছে জানি না সাইকোলোজিক্যালি কী করছে। তবে আত্মবিশ্বাসী ছিল।

মুমিনুল শুধুই টেস্ট খেলেন। এমন ক্রিকেটারদের জন্য বাংলাদেশে বাস্তবতা বেশ কঠিন। বছরে পাঁচ-ছয়টা ম্যাচ খেলতে হয়। সেটাও বেশ বড় বড় বিরতি দিয়ে। এই সময়ে কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেন? মুমিনুল বলছেন, বিষয়টা বেশ কঠিন। তবে তিনি জানিয়েছেন নিজের প্রক্রিয়ার কথা।

মুমিনুল বলেন, আপনি যদি চিন্তা করেন এক বছর পর টেস্ট হোক ওটা আমার জন্য ভালো! যেটা হবে সেটাই ভালো সবার ক্ষেত্রেই। আপনি যদি এই সেটআপ করতে পারেন যে, এক বছর পরে হোক, বা পাঁচ মাস বা প্রতিদিন হোক আমার জন্য যেটা হবে ভালো। এক একেজনের হয়তো একেক রকম থাকে, আমার জন্য এটাই। তবে এটা হয়তো জাকির বা জয়ের জন্য প্রযোজ্য নয়। আমার এটা আগে থেকেই সেটআপ করা। যখন লম্বা সময় পাই তখন প্রতিপক্ষ যারা থাকে এমনকি যদি ভারত বা আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলি তখন কিন্তু লম্বা সময় পেলাম। তখন কিন্তু ভিজুয়েলাইশন বা মেডেটেশন ওটা দেখেই আপনি নিজেকে তৈরি করতে পারেন। যেটা আমার ক্ষেত্রে হয়, আরেকজনের কাছে হবে কি না জানি না। ওভাবে যে করতে পারে তার জন্য সময় থাকে। যদি প্রতিদিন একবার করে ভিজ্যুলাইজ করেন, ওটা যদি করতে পারে। ও সময়টা যদি আপনি পান। তবে তার মানে এই নয় যে করলেও সফলতা পাবেন। করলেই সফল হয়ে যাবে এরকম না। নাও হতে পারে। কিন্তু সফল হওয়ার চান্স বেশি থাকে! তখন মনে থাকবে না এতদিন পর ক্রিকেট খেলতেছি। এটা মাথায় আসবে না।

লম্বা সময় পর খেলার মানসিক সেট-আপ’ কী অভ্যাস হয়ে গেছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে মুমিনুল বলেন, ‘এছাড়া আমার কোনো অপশন নাই। আমার এটা অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। আমি যখনই আসবো, আপনি কিন্তু পারফর্ম খুঁজবেন। আপনি কিন্তু দেখবেন না আমি পাঁচ মাস পরে নামছি নাকি এক বছর। আমি পারফর্ম না করলে কিন্তু আপনি ওভাবেই লিখবেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

দীর্ঘ দিন পর শতক হাকিয়ে যা বললেন মুমিনুল

প্রকাশের সময় : ০৮:৩০:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জুন ২০২৩

স্পোর্টস ডেস্ক : 

টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকে ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে ছিলেন মুমিনুল হক। টেস্টে টানা ফিফটির রেকর্ড করে তিনি উপাধি পান ‘লিটল ব্র্যাডম্যান’। তবে কয়েক বছর দারুণ ছন্দে থাকার পর তিনি ফর্ম হারিয়ে ফেলেন। ফলে এক সময় দল থেকেও বাদ পড়ে যান মুমিনুল। পরবর্তীতে গেল বছর ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে অনুষ্ঠিত টেস্ট দিয়ে তিনি দলে ফিরেছিলেন। খেলেন ৮৪ রানের ইনিংস।

ব্যাটের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে ১২টির মধ্যে ১০ ইনিংসেই দুই অংকে পৌঁছতে পারেননি, চারবার করেন আবার শূন্য। সেই ১০ ইনিংস ছিল এমন-০ , ০, ২, ৬, ৫, ২, ৯, ০, ০, ৪।

এরপর তাকে ফর্মে ফেরাতে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়েও খেলানো হয়। কিন্তু সেখানেও অনুজ্জ্বল মুমিনুল। সর্বশেষ সিলেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে চারদিনের ম্যাচে মুমিনুল দুই ইনিংসে করেন (৫+৫) মোটে ১০ রান। অবশেষে সে রানখরা কাটিয়ে ফেরা।

২৬ মাস পর টেস্ট সেঞ্চুরির দেখাও পেলেন। যার জন্য তার সময় লেগেছে দুই বছর। পরবর্তীতে ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন মুমিনুল। শুনিয়েছেন নিজের কঠিন সময়ের গল্প, ‘আমার যখন হয়েছে মনে হয়েছে পুরা দুনিয়া এক পাশে, আমি আরেক পাশে। ভেতরে কী গেছে শুধু আমিই জানি। মনে হয়েছে আমি পুরা শেষ!’

কেমন লাগছে? সেই রান করতে না পারার দিনগুলোইবা কেমন ছিল? আজ শুক্রবার শেরে বাংলায় দিনের খেলা শেষে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে মুমিনুল মানতে চাইলেন না, তিনি রান পাননি। সাবেক টেস্ট অধিনায়ক বোঝানোর চেষ্টা করেনন, তার প্রতি আসলে প্রত্যাশা বেশি।

তবে মুমিনুল বললেন, আপনি যদি শেষ চার ইনিংস দেখেন, রান অত খারাপ না। মানে আপনারা হয়তো প্রতি ম্যাচে ২০০ আশা করেন, এজন্য আপনাদের কাছে মনে হয় রানে নেই! আপনারা যেভাবে চিন্তা করেন রানে নেই আমি, তা না!

তাহলে কি কোনো আক্ষেপ ছিল না? মুমিনুলের জবাব, হ্যাঁ, আক্ষেপ ছিল যখন লম্বা ইনিংস ব্যাটিং করতে পারিনি, যেটা আমার অভ্যাস। এক-দুই-তিন-চার সেশন ব্যাটিং করা, ওইটা নিয়ে আক্ষেপ ছিল। আলহামদুলিল্লাহ করতে পারছি, দলের জন্য হেল্পফুল হইছে আর কিছু না।

তিনি আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টের তৃতীয় দিনশেষে সংবাদ সম্মেলনে আসেন। এর আগেই টেস্ট ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরি পান। সুযোগ পেয়ে মুমিনুলকে প্রশ্নটা করা। পেসারদের এমন করতে দেখে কি ভালো লাগে? প্রশ্নটা পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই তিনি বলে উঠেন, আলহামদুলিল্লাহ ভালো একটা প্রশ্ন।

আসল প্রশ্নটা ছিল আফসোস হয় কি না, সেটির জবাবে মুমিনুল বলেন, কোনো আফসোস কাজ করে না। সন্তুষ্টি তো কাজ করে? মুমিনুল বলেন, ‘সন্তুষ্টি কাজ করে। আপনারা (সাংবাদিকরা) যদি বলেন, তাহলে আরও সন্তুষ্টি কাজ করে। ’

অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর মুমিনুল পেয়েছেন প্রথম সেঞ্চুরি। নেতৃত্ব ছাড়ায় কি এখন একটু হালকা হয়ে খেলতে পারছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘ক্যাপ্টেন্সি না থাকলে একটা সুবিধা হয় এই যে এত এত কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। খালি ব্যাটিংটাতে মনোযোগ দিলেই হয়। ’

তিনি বলেন, আমি নিজে এটার ভেতর দিয়ে গিয়েছি, এটা ভয়ঙ্কর। যে এর মধ্যে দিয়ে যায় সেই বোঝে, আমার সময় মনে হয়েছে পুরো পৃথিবী একদিকে আমি আরেকদিকে। যার হয় সে ছাড়া কেউ বোঝে না, এর মধ্যে ঢুকতেও পারবেন না। ওই সময় শুধু প্রসেস ঠিক রাখতে পারেন, বাকিটা আল্লাহ যখন দেওয়ার তখন রান দেবে। শান্ত প্রসেস ঠিক রাখছে জানি না সাইকোলোজিক্যালি কী করছে। তবে আত্মবিশ্বাসী ছিল।

মুমিনুল শুধুই টেস্ট খেলেন। এমন ক্রিকেটারদের জন্য বাংলাদেশে বাস্তবতা বেশ কঠিন। বছরে পাঁচ-ছয়টা ম্যাচ খেলতে হয়। সেটাও বেশ বড় বড় বিরতি দিয়ে। এই সময়ে কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেন? মুমিনুল বলছেন, বিষয়টা বেশ কঠিন। তবে তিনি জানিয়েছেন নিজের প্রক্রিয়ার কথা।

মুমিনুল বলেন, আপনি যদি চিন্তা করেন এক বছর পর টেস্ট হোক ওটা আমার জন্য ভালো! যেটা হবে সেটাই ভালো সবার ক্ষেত্রেই। আপনি যদি এই সেটআপ করতে পারেন যে, এক বছর পরে হোক, বা পাঁচ মাস বা প্রতিদিন হোক আমার জন্য যেটা হবে ভালো। এক একেজনের হয়তো একেক রকম থাকে, আমার জন্য এটাই। তবে এটা হয়তো জাকির বা জয়ের জন্য প্রযোজ্য নয়। আমার এটা আগে থেকেই সেটআপ করা। যখন লম্বা সময় পাই তখন প্রতিপক্ষ যারা থাকে এমনকি যদি ভারত বা আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলি তখন কিন্তু লম্বা সময় পেলাম। তখন কিন্তু ভিজুয়েলাইশন বা মেডেটেশন ওটা দেখেই আপনি নিজেকে তৈরি করতে পারেন। যেটা আমার ক্ষেত্রে হয়, আরেকজনের কাছে হবে কি না জানি না। ওভাবে যে করতে পারে তার জন্য সময় থাকে। যদি প্রতিদিন একবার করে ভিজ্যুলাইজ করেন, ওটা যদি করতে পারে। ও সময়টা যদি আপনি পান। তবে তার মানে এই নয় যে করলেও সফলতা পাবেন। করলেই সফল হয়ে যাবে এরকম না। নাও হতে পারে। কিন্তু সফল হওয়ার চান্স বেশি থাকে! তখন মনে থাকবে না এতদিন পর ক্রিকেট খেলতেছি। এটা মাথায় আসবে না।

লম্বা সময় পর খেলার মানসিক সেট-আপ’ কী অভ্যাস হয়ে গেছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে মুমিনুল বলেন, ‘এছাড়া আমার কোনো অপশন নাই। আমার এটা অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। আমি যখনই আসবো, আপনি কিন্তু পারফর্ম খুঁজবেন। আপনি কিন্তু দেখবেন না আমি পাঁচ মাস পরে নামছি নাকি এক বছর। আমি পারফর্ম না করলে কিন্তু আপনি ওভাবেই লিখবেন।