স্পোর্টস ডেস্ক :
অস্ট্রেলিয়ার দয়ো রানের পাহাড় টপকে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দণ্ড হাসিল করতে হলে ভারতকে বিশ্বরেকর্ডই গড়তে হতো। চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে সেই পথ ধরেই হাটছিল রোহিত শর্মার দল! বিশেষ করে বিরাট কোহলি-আজিঙ্কা রাহানে জুটিতে ভারতের আশার পালে হাওয়া লেগেছিল।
পঞ্চম দিনে নতুন করে শুরু করার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে ব্যর্থ এই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার। উল্টো তাড়াহুড়া করতে গিয়ে বিপদই ডেকে আনেন তারা। তাতে পথ হারালো দল। ৭ উইকেট হাতে নিয়ে দিন শুরু করা ভারতের ইনিংস টিকল আজ মাত্র দুই ঘন্টা! তাতে টানা দুইবার সাদা পোশাকে শিরোপার খুব কাছে গিয়েও তা আর ছোঁয়া হলো না ভারতের। অন্যদিকে প্রথমবার ফাইনাল খেলতে নেমেই শিরোপার দেখা পেল অস্ট্রেলিয়া।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় আসরের ফাইনালের শেষদিন রোহিত শর্মার দলকে ২০৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
ভারতকে এই টেস্ট জিততে হলে অবশ্য বিশ্বরেকর্ডই গড়তে হতো। চতুর্থ ইনিংসে তাদের সামনে ৪৪৪ রানের বিশাল লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছিল প্যাট কামিন্সের দল।
পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রোহিত শর্মা আর শুভমান গিল শুরুটা করেছিলেন বেশ সাবলীল। রানও তুলছিলেন দুজনে বেশ ভালো গতিতেই। তবে দলীয় ৪১ রানের মাথায় গিয়ে স্কট বোল্যান্ডের বলে স্লিপে থাকান ক্যামেরন গ্রিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান গিল। ১৯ বলে ১৮ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন এই ওপেনার।
এরপর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে চেতেশ্বর পূজারাকে নিয়েও বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছিলেন রোহিত। তবে হঠাৎই ছন্দপতন। ৬০ বলে ৪৩ রান করে দলীয় ৯২ রানের মাথায় নাথান লায়নের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন রোহিত। পরের ওভারেই পূজারাকেও ফেরা অজি অধিনায়ক কামিন্স। ফেরার আগে পূজারা করেন ৪৭ বলে ২৭ রান।
৯৩ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় ভারত। সেখান থেকে দলের হাল ধরেন বিরাট কোহলি আর প্রথম ইনিংসে লড়াকু ব্যাটিংয়ে ভারতকে উদ্ধার করা আজিঙ্কা রাহানে। দুজন মিলে অপ্রাজিত ৭১ রানের জুটিতেই স্বস্তি এনে দিয়েছেন দলকে। হাতে ৭ উইকেট নিয়ে পঞ্চম ও শেষদিনে ভারতের জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৮০ রান।
বিরাট কোহলি আর আজিঙ্কা রাহানে যেমন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাট করছিলেন, তাতে ভারতীয় সমর্থকদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছিল। সবচেয়ে বড় ভয় ছিল পঞ্চম দিনের সকালটা নিয়ে। কিন্তু কোহলি-রাহানে সকালের প্রথম আধ ঘণ্টা কাটিয়ে দেন অনায়াসেই।
এরপরই স্কট বোল্যান্ডের দুর্দান্ত এক ওভার। হাফসেঞ্চুরির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা কোহলিকে ড্রাইভে উৎসাহিত করলেন বোল্যান্ড। ভারতীয় ব্যাটিং সেনসেশন ভুলটা করেই বসলেন। এজ হয়ে দ্বিতীয় স্লিপে স্মিথের ক্যাচ হলেন ব্যক্তিগত ৪৯ রানে।
এক বল পর রবীন্দ্র জাদেজাকেও ফিরিয়ে দিলেন বোল্যান্ড। ভারতীয় অলরাউন্ডার (০) ডিফেন্ড করেও এজ হয়ে হলেন উইকেটরক্ষকের ক্যাচ।
এক ওভারে এই দুই উইকেট হারিয়েই হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলে ভারত। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। কোহলি-রাহানের ৮৬ রানের জুটি ভাঙার পর রাহানে আর শ্রীকর ভরতের ৩৩ রানের জুটিতেই যা একটু লড়াই হয়েছে।
স্টার্ককে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে আউটসাইডেজ হয়ে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দিয়েছেন রাহানে। হাফসেঞ্চুরির কাছে এসে (৪৬) কোহলির মতো ফিরে যান তিনিও। তখনই আসলে ভারতের পরাজয় বলতে গেলে নিশ্চিত হয়ে গেছে।
পরের ওভারে শার্দুল ঠাকুরকে (০) এলবিডব্লিউ করে ফেরান নাথান লিয়ন। অসি এই অফস্পিনার ফিরতি ক্যাচ বানান শ্রীকর ভরতকেও (২৩)। শেষ পর্যন্ত ৬৩.৩ ওভার খেলে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩৪ রানে থামে ভারতের লড়াই। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে নাথান লিওন ৪ টি ও স্কট বোল্যান্ড নেন ৩টি উইকেট।
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে ট্রাভিস হেড আর স্টিভেন স্মিথের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৪৬৯ রানের বড় সংগ্রহ গড়েছিল। জবাবে ২৬৯ রানে অলআউট হয় ভারত।
দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেটে ২৭০ করে ইনিংস ঘোষণা করে অসিরা। ফলে ভারতের সামনে লক্ষ্য দাঁড়িয়েছিল ৪৪৪ রানের। ধারেকাছেও যেতে পারেনি রোহিতের দল।
প্রথম ইনিংসে চাপের মুখে ১৭৪ বলে ১৬৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলায় ফাইনাল-সেরা হয়েছেন ট্রাভিস হেড।