সিলেট জেলা প্রতিনিধি :
ইভিএম নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেন। এটার কিন্তু পরীক্ষা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এর ভেতরে জিন-ভূত, প্রেত থাকে বলে অনেকেই বলেছেন। কিন্তু আমরা এরকম কোনো কিছু পাইনি। অনেক ওঝা ঝাড়ফুঁক করেও কিছুই পায়নি। এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়াল।
শনিবার (১০ জুন) দুপুরে জালালাবাদ গ্যাস টি অ্যান্ড ডি সিস্টেম লি. অডিটোরিয়ামে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন-২০২৩ উপলক্ষ্যে প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা দুইটি পদ্ধতিতে বিশ্বাস করি। শরিয়ত ও মারেফত। শরিয়তের পদ্ধতিতে ভোট কোথাও যায় না। কিন্তু এখন মারেফতের পদ্ধতিতে এক জায়গার ভোট অন্য জায়গায় চলে যাওয়ার বিষয়ে আমি বলতে পারবো না। কারণ আমি মারেফত বুঝি কম। কাজেই শরিয়তের পদ্ধতিতে কোনোভাবেই একজনের ভোট অন্যজন দিতে পারে না। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন তাহলে আমি নিজেই এর দায়ভার নিবো। তাই আপনারা সময়মতো ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন। কোনো বিলম্ব করবেন না।
সিইসি বলেন, এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম’র মাধ্যমে ভোট হবে। ইভিএমে একজনকে ভোট দিলে অন্যজনের প্রতীকে যায় না। আমি আগেও বলেছি একশো পেজের একটা ব্যালট পেপারের বান্ডিল যে কেউ ছিনিয়ে নিতে পারে সিল মারতে পারে, ভরতে পারেন বক্সে। কিন্তু ইভিএমে সেটা কোনোভাবে সম্ভব নয়। এটা ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে ওপেন করতে হয়। যদি কারও ফিঙ্গার প্রিন্ট না মিলে তাহলে ওটিপি দিয়ে কেন্দ্রের অনুমতি নিয়ে এক ভাগ ভোট দিতে হয়। এটি প্রথম দিকে এরকম দু-একটা ভোটের অনুমতি দিতে হলেও এখন যে কয়েকটি ভোট হয়েছে এর একটি ভোটেরও অনুমতি দিতে হয়নি।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব ভোটকেন্দ্র সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে ভোট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা সিসিটিভির মাধ্যমে সব কেন্দ্রের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবো। কোনো ভোটার যদি সঠিকভাবে ভোট দিতে না পারেন তাহলে আপনারা চিৎকার করে জানাবেন। আমরা সেখান থেকে বসে ব্যবস্থা নিব। কাজেই কেউ চাইলেই অনিয়ম করতে পারবেন না। তাই আমাদের প্রতি আস্থা রাখুন। আমরা আপনাদের খুব ভালো নির্বাচন উপহার দিতে পারবো।
আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের সর্তক করে সিইসি বলেন, আচরণবিধির অভিযোগ এলে প্রার্থিতা বাতিল হবে। আপনারা এমন কিছু করবেন না যাতে প্রার্থীতা বাতিল হয়ে যায়। এর আগে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল করেছি। আমরা চেষ্টা করছি লেভেল প্লেন ফিল্ড তৈরি করতে। আপনারাও আচরণবিধি মেনে চলবেন। কেউ যদি নির্বাচনের দিন বা নির্বাচনের আগে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পলিথিনে মোড়ানো ব্যানার-পোস্টার ও রঙিন পোস্টার প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা এতো নিষ্ঠুর হতে পারবো না। এটা নিয়ে আইন আছে। পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পলিথিনে মোড়ানো ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলতে পারে। আর পলিথিন একটা বৈশ্বিক সমস্যা। পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই জিনিসটা করা যাবে না।
প্রচারণায় ব্যাপারে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভবিষ্যতে প্রচারণার ধরণও পাল্টে যেতে পারে। নেপালে আমি গিয়ে দেখেছি, তাদের নির্বাচনে কোনো ব্যানার পোস্টার নেই। তারা শুধু ঘরে ঘরে গিয়ে লিফলেট দিয়ে আসেন। আমাদেরও প্রচারণা নিয়ে ভাবতে হবে। এটা সময়ের প্রয়োজনে হয়ে যাবে। আপনি চাইলে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে ও বা একটি এ্যাপস্ করে প্রচারণা চালাতে পারেন। তথ্যপ্রযুক্তি এখন অনেক এগিয়ে গেছে। এক সময় আর্টিফিশিয়াল টেকনোলজি আসবে। তখন আপনার প্রচারণা চালোই লাগবে না রোবট আপনার প্রচারণা চালাবে, লিফলেট বিলি করবে।
নির্বাচনী ব্যয়সীমা নিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনের ব্যয় নির্ধারিত করা হয়েছিল ২০০৮ সালে। এই ব্যয় এখন অনেক বেড়ে গেছে। আগামীতে ব্যয়সীমা বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো। তবে এটাও সত্য যে দৃশ্যমান ব্যয় করছেন ২ লাখ। তবে অনেকে বাস্তবে ব্যয় করছেন ২ কোটি টাকা। সেটা আমরা চোখে দেখছিনা। যা অদৃশ্য খরচ এটাও একটা বাস্তবতা। সেটা আমাদের মধ্যে দৃশ্যমান হয়না। যদি কেউ দৃশ্যমান ব্যয়ের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয় করেছে দেখাতে পারেন আরর যদি নির্বাচন কমিশনের বিবেচনায় সেটা সীমা লঙ্ঘন হয়, আচরণবিধি লঙ্ঘন হয় তাহলে নির্বাচন কমিশন কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিবে।
মতবিনিম সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাংগীর আলম, সিলেট মেট্রোপলিট পুলিশের কমিশনার ইলিয়াছ শরীফ বিপিএম (বার) পিপিএম, সিলেট জেলা প্রশাসক মো.মজিবর রহমান, সিলেট জেলার পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার ফয়সল কাদের প্রমুখ।