নিজস্ব প্রতিবেদক :
কয়েকদিন ধরে দেশব্যাপী তীব্র দাবদাহের সঙ্গে লোডশেডিংয়ের কারণে গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। ফলে বেড়েছে চার্জার ফ্যানের চাহিদা। তবে কিনতে চাইলেও বাজারে তা মিলছে না। বাজাওে দেখা দিয়েছে চার্জার ফ্যানের সঙ্কট। ঘনঘন লোডশেডিংয়ে চার্জার লাইট ও ফ্যানের চাহিদা বৃদ্ধিতে ১ হাজার টাকার ফ্যান ৩-৪ হাজার হাঁকাচ্ছেন দোকানি।
ক্রেতাদের অভিযোগ, মোটা মুনাফার লোভে সংকট তৈরি করা হচ্ছে। দোকান, শোরুমে যাও পাওয়া যাচ্ছে, সরবরাহ কমের কথা বলে সেগুলোর জন্য কয়েকগুণ বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে।
রাজধানীসহ সারা দেশের ফ্যানের বাজার পরিস্থিতি একই রকম। চার্জার ফ্যান নিয়ে ক্রেতাদের এই অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার যেন কেউ নেই। মাঠে দেখা যায়নি কোনো সরকারি তদারককারী কোনো সংস্থার তৎপরতা।
স্থানীয় বাজার ঘুরে রাজবাড়ী প্রতিবেদক জানিয়েছেন, দোকান ও শোরুমে চার্জার ফ্যানের সংকট রয়েছে। বুধবার (৭ জুন) রাজবাড়ী শহরের বড়বাজারে একটি ফ্যানের শোরুমে চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছিলেন সোহান খান। তিনি বলেন, অসহনীয় লোডশেডিং থেকে বাঁচতে চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছিলাম। দোকানের লোকজন বলছেন, সব ফ্যান বিক্রি হয়ে গেছে।
বড়বাজারে আরেক ক্রেতা মেহেদী হাসান বলেন, গরমে ছেলেমেয়েরা রাতে ঘুমাতে পারে না। তাই হাতপাখা কিনতে আসলাম। কিন্তু ৩০ টাকার পাখা চাচ্ছে ৮০ টাকা। দামাদামির সুযোগ নেই। বেশি দাম হলেও বাধ্য হয়ে কিনতে হলো।
একই চিত্র দেখা গেছে বাগেরহাটের রামপালেও। এ উপজেলার উজলকুড় গ্রামের বাসিন্দা খাদেমুল ইসলাম জানান, স্থানীয় ফয়লা বাজারে চার্জার ফ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। যাও পাওয়া যাচ্ছে দাম নিচ্ছে দ্বিগুণ। ২ হাজার ৫০০ টাকার ফ্যান এখন ৫ হাজার টাকা!
তিনি আরও জানান, একটি সোলার ফ্যান যার বাজারমূল্য ছিল ৫০০ টাকা, তা এখন ৯৫০ থেকে এক হাজার টাকা। আইপিএসের দামও দ্বিগুণ, ২৫ হাজার টাকার আইপিএস তা এখন ৫০ হাজার টাকা ছুঁয়ে গেছে।
ফয়লা বাজারের সুন্দরবন গ্যাস হাউস অ্যান্ড ইলেকট্রনিকসের স্বত্বাধিকারী হাফেজ আল আমিন বলেন, ‘আমরা মোকাম থেকে অতিরিক্ত দামে কিনলেও স্বল্প লাভে কাস্টমারকে দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে মোকামে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পাচ্ছি না।
স্থানীয় বাজার ঘুরে রাজশাহীর প্রতিবেদক জানান, রাজশাহীতে গরমের কারণে বেড়েছে ফ্যানের চাহিদা। এর মধ্যে বিক্রির শীর্ষে রয়েছে চার্জার ফ্যান। চার্জার ফ্যান বিক্রি বাড়ায় বাজারে এক ধরনের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ফলে যে দোকানগুলোতে চার্জার ফ্যান রয়েছে তারাও বেশি দামে বিক্রি করছেন এমন অভিযোগ ক্রেতাদের। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কিছুদিন থেকে সারাদেশের মতো রাজশাহীতেও ঠিকমত বিদ্যুৎ থাকছে না। এমন অবস্থায় গরম থেকে পরিত্রাণ পেতে মানুষ চার্জার ফ্যানের দিকে ঝুঁকছে। তাই চার্জার ফ্যান বিক্রি বেড়েছে। ফলে দোকানগুলোতে চার্জার ফ্যানের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
বিকেলে রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার এলাকার ইলেকট্রনিক্সের দোকানগুলোতে দেখা গেছে চার্জার ফ্যান কিনতে ক্রেতাদের ভিড়। বিদ্যুৎ ঠিকঠাক না থাকায় চার্জার ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। তাই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ফ্যানগুলো। দোকানগুলোতে অনেকটাই একদামে ফ্যানগুলো বিক্রি হচ্ছে এমন অভিযোগ ক্রেতাদের। দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ওয়ালটন ছাড়াও বিভিন্ন ব্যান্ডের মধ্য ডিফেন্ডার, ভিক্টর, মিয়াকো, নোভা ব্র্যান্ডের চার্জার ফ্যান বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন সাইজের এসব চার্জার ফ্যানের দাম ৩ হাজার থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজারে বুধবার (৭ জুন) সন্ধ্যায় চার্জার ফ্যান কিনতে আসা রায়হানুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ গেলে আর আসে না। এলে বেশিক্ষণ থাকে না। গরমের কারণে কোথায় শান্তি নেই। দুপুরে গোলস করে ওঠার পর শরীর ঘেমে যায়। এজন্য চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছি। কিন্তু এক সপ্তাহর ব্যবধানে ফ্যানের দাম ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা বেড়েছে। তারপরেও কিনলাম। বাড়িতে ১৫ মাসের ভাগ্নে বেড়াতে এসেছে। গরমে কষ্ট পাচ্ছে।
চার্জার ফ্যান কিনতে আসা সাবিনা ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ আসতে সময় লাগে, কিন্তু যেতে সময় লাগে না। কিছুদিন থেকে রাজশাহীতে প্রচুর গরম পড়ছে। সাতে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এই গরমে চার্জার ফ্যান থাকলে বিদ্যুৎ যাওয়ার পরেও অনন্ত কিছুক্ষণ আরামে থাকা যাবে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগে রাতে বিদ্যুৎ গেলে। তখন গরমে ঘুম ভেঙে যায়।
সামিউল ইসলাম বলেন, এই গরমে শিশুদের বেশি সমস্যা। বিদ্যুৎ গেলে তারা জেগে যচ্ছে। গরমের কারণে ঘুমাতে পারে না। বিদ্যুৎ গেলে যতক্ষণ পাখা দিয়ে বাতাস করা হচ্ছে ততক্ষণ ঘুমাচ্ছে। পাখা বন্ধ হলেই কান্না শুরু করে দিচ্ছে। বিদ্যুৎ একবার গেলে ঘণ্টা পার হয়ে যায় তবুও আসার নাম কথা নেই। এই চার্জার ফ্যানগুলো থাকলে অনন্ত শিশুরা আমারে ঘুমিয়ে থাকবে।
সাহেব বাজারের মেলেডি ইলেকট্রনিক্সের বিক্রেতা প্রদীপ বলেন, দোকানে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের মধ্যে সবেচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ফ্যান। তারমধ্যে বিক্রিতে শীর্ষে রয়েছে চার্জার ফ্যান। তবে আমাদের দোকানে চার্জার ফ্যান নেই। যেগুলো ছিল সব বিক্রি হয়ে গেছে। ঢাকায় চার্জার ফ্যানের অর্ডার দিয়েছি। তারা আমাদের দিতে পাড়ছে না ফ্যান। আর ঢাকাতেই চার্জার ফ্যানের দাম ১৫০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা বেড়েছে। তবে রাজশাহীতে খুব অল্প সংখ্যাক দোকানে চার্জার ফ্যান রয়েছে।
রাজধানীর বেশিরভাগ শোরুম ও দোকানে ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতারা চার্জার ফ্যানের জন্য আসছেন, না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এই ক্রেতাদের ঠিকানা এখন সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট ও নবাবপুর মার্কেটে। গতকাল এই দুই মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।
সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের কয়েকটি দোকানের বিক্রয়কর্মী ও মালিকদের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, আগে ৮ ইঞ্চির ফ্যান ২ হাজার টাকা বিক্রি হতো, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। ১২ ইঞ্চির ফ্যানের দাম ছিল ৩ হাজার টাকা, তা এখন ৫ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আবার ১৬ ইঞ্চি ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার টাকায়, যার পূর্ব মূল্য ছিল ৪ হাজার টাকা। ১৮ ইঞ্চি ফ্যান ১১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৯ হাজার টাকা। আবার ব্র্যান্ড ভেদে হাজার টাকা কম-বেশিতেও বিক্রি হচ্ছিল।
সুন্দরবন মার্কেটের মেসার্স সায়মা ট্রেড হাউসের সামনে কথা হয় রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ফ্যান কিনতে আসা রাকিবুল হাসানের সঙ্গে। তিনি জানান, একটি ৮ ইঞ্চি চায়নিজ চার্জার ফ্যান কিনেছেন ৩ হাজার ৫০০ টাকায়, যা কয়েকদিন আগেও ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকায় পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, ফ্যান কেনার জন্য খুঁজতে খুঁজতে বসুন্ধরা থেকে গুলিস্তানে আসতে হয়েছে। এই মার্কেটে এসেও দেখলাম ফ্যান থাকতেও অনেকে তা বিক্রি করতে চান না।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযোগ উপবিভাগের উপপরিচালক মাসুম আরেফিন বলেন, ভোক্তাদের এই অভিযোগ সম্পর্কে অবগত হয়ে আমাদের মহাপরিচালক ইতোমধ্যে সারা দেশে তদারকি কার্যক্রম চালানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।