Dhaka সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রধান শিক্ষককে জুতা দিয়ে পেটালেন আওয়ামী লীগ নেত্রী!

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি : 

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা সরকারি বহুমুখী মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খানকে জামার কলার চেপে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে জেলা যুব মহিলা লীগের সিনিয়র সভাপতি সামশাদ রানু ওরফে রাঙ্গা ভাবির বিরুদ্ধে।

বুধবার (৭ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যালয় চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। শ্রেণিকক্ষের তালা না খোলায় ঘণ্টাব্যাপী শিক্ষার্থীরা বাইরে অবস্থান করায় মারধর করেছেন বলে নিজেই সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন সামশাদ রানু। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় অনেকেই সামশাদ রানুর বিচার দাবি করেছেন।

সামশাদ রানু ওরফে রাঙ্গা ভাবি চুয়াডাঙ্গা জেলা যুব মহিলা লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি, জেলা কৃষকলীগের মহিলা সভানেত্রী ও আলমডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র।

জানা গেছে, স্কুলে দেরি করে আসায় ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ নেত্রী প্রথমে চড় থাপ্পড় ও পরে পায়ের স্যান্ডেল খুলে পেটান প্রধান শিক্ষককে। সামসাদ রানুর ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলের কাজে তিনি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্কুলে ঢুকে দেখতে পান প্রধান শিক্ষক উপস্থিত হননি। এরপর প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খান স্কুলে ঢোকেন ৯টা ৫০ মিনিটে। এতে ক্ষুব্ধ রাঙা ভাবি প্রধান শিক্ষককে ধাক্কাতে ধাক্কাতে অফিস কক্ষের ভেতরে নিয়ে যান। প্রধান শিক্ষক চেয়ারে বসলে দু’জনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় উত্তেজিত আওয়ামী লীগ নেত্রী (রাঙা ভাবি) প্রথমে প্রধান শিক্ষকের মুখে একের পর এক চড় মারতে থাকেন এবং একপর্যায়ে পায়ের স্যান্ডেল খুলে মারতে থাকেন। এরপরই তিনি স্কুল ছেড়ে চলে যান এবং তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে রাখেন।

এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রনি আলম নূর বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে অবিভাবকরা ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের নিকট লিখিতভাবে বা মোখিক অভিযোগ করতে পারবেন। কোনোভাবেই শিক্ষকদের শারীরিক লাঞ্চিত বা মারধর করতে পারেন না। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ঘটনা প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত সামশান রানুর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভুক্তোভোগী প্রধান শিক্ষক রবিউর ইসলাম খান বলেন, বিদ্যালয়ের মধ্যেই সবার সামনে শামশাদ রানুর আমাকে লাঞ্চিত করেছেন। মারধর করেছেন।

কী কারণে এমন ঘটনা ঘটল জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অর্ধ বার্ষিকী পরীক্ষা নেয়া হচ্ছিল। একই দিন ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষার দিন ছিল। অর্ধ বার্ষিকী পরীক্ষার জন্য সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা নিতে দেরি হচ্ছিল। ওই শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের মাঠে অবস্থান করছিল। এর মধ্যে সামশাদ রানুর ছেলে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী অর্ক ছিল। তার গায়ে রোদ লাগার কারণে আমি বিদ্যালয়ে আসতেই আমাকে কলার চেপে ধরে টানতে টানতে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যান। আমাকে কিলঘুষি মারতে থাকেন। তার পায়ের জুতা খুলেও মারধর করতে যান। অন্যান্য শিক্ষকরা এগিয়ে এলে জুতা দিয়ে মারতে পারেননি।

আকস্মিক মারধরে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। আমি বয়স্ক মানুষ। এমনিতেই শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছি। পরীক্ষা শেষে আমি বাড়ি চলে এসেছি। বিষয়টি মোবাইলে ইউএনওকে জানিয়েছি।

বিদ্যলয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ইলিয়ার হোসেন বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার কারণে সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা নিতে দেরি হওয়ায় ওই শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের মাঠে অবস্থান করছিল। ওই সময় বিদ্যুৎও ছিল না যে ক্লাস রুমে থাকবে। অর্ধবার্ষীর পরীক্ষার্থীদের বসানোর পরই তাদেরকে বসানো হতো। এ জন্য দেরি হয়েছে।

অভিযুক্ত সামশাদ রানু বলেন, বিদ্যালয়ের কক্ষ না খোলায় আমার ছেলেসহ প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের মাঠে অবস্থান করছিল। তীব্র তাপদহে শিক্ষার্থীরা হাসফাস অবস্থা। সোয়া ১০টার পর প্রধান শিক্ষকের বিদ্যালয়ে এলে আমি তার কাছে গিয়ে কক্ষের তালা খোলার কথা বলি।

তিনি জানান, এই দায়িত্ব আমার না, সহকারী প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস ও কর্মচারী সিদ্দীকের। তিনি আমাকে উল্টা বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ অন্যরা আপনাকে আমার পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে। আমি তার জবাবে বললাম, আমি এখানে কোনো নেত্রী হিসেবে না, আমি অবিভাবক হিসেবে এসেছি। এরপরই আমি তার জামার কলার চেপে ধরে টেনে নিয়ে ‘তালা খোল’ বলে কক্ষের তালা খুলাইছি। তখন শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বসে।

আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রনি আলম নূর বলেন, এই বিষয়টি লোক মারফতে জেনেছি। প্রধান শিক্ষকও আমার নিকট মোবাইল করেছিল। আমি তাকে আমার কার্যালয়ে আসতে বলেছি। কেউ যদি অন্যায় করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারেন। তবে কাউকে মারধর করাটা চরম অন্যায়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই নারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ইলিশের দাম বেশি থাকার যেসব কারণ জানালেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

প্রধান শিক্ষককে জুতা দিয়ে পেটালেন আওয়ামী লীগ নেত্রী!

প্রকাশের সময় : ১১:১৮:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ জুন ২০২৩

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি : 

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা সরকারি বহুমুখী মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খানকে জামার কলার চেপে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে জেলা যুব মহিলা লীগের সিনিয়র সভাপতি সামশাদ রানু ওরফে রাঙ্গা ভাবির বিরুদ্ধে।

বুধবার (৭ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যালয় চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। শ্রেণিকক্ষের তালা না খোলায় ঘণ্টাব্যাপী শিক্ষার্থীরা বাইরে অবস্থান করায় মারধর করেছেন বলে নিজেই সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন সামশাদ রানু। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় অনেকেই সামশাদ রানুর বিচার দাবি করেছেন।

সামশাদ রানু ওরফে রাঙ্গা ভাবি চুয়াডাঙ্গা জেলা যুব মহিলা লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি, জেলা কৃষকলীগের মহিলা সভানেত্রী ও আলমডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র।

জানা গেছে, স্কুলে দেরি করে আসায় ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ নেত্রী প্রথমে চড় থাপ্পড় ও পরে পায়ের স্যান্ডেল খুলে পেটান প্রধান শিক্ষককে। সামসাদ রানুর ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলের কাজে তিনি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্কুলে ঢুকে দেখতে পান প্রধান শিক্ষক উপস্থিত হননি। এরপর প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খান স্কুলে ঢোকেন ৯টা ৫০ মিনিটে। এতে ক্ষুব্ধ রাঙা ভাবি প্রধান শিক্ষককে ধাক্কাতে ধাক্কাতে অফিস কক্ষের ভেতরে নিয়ে যান। প্রধান শিক্ষক চেয়ারে বসলে দু’জনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় উত্তেজিত আওয়ামী লীগ নেত্রী (রাঙা ভাবি) প্রথমে প্রধান শিক্ষকের মুখে একের পর এক চড় মারতে থাকেন এবং একপর্যায়ে পায়ের স্যান্ডেল খুলে মারতে থাকেন। এরপরই তিনি স্কুল ছেড়ে চলে যান এবং তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে রাখেন।

এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রনি আলম নূর বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে অবিভাবকরা ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের নিকট লিখিতভাবে বা মোখিক অভিযোগ করতে পারবেন। কোনোভাবেই শিক্ষকদের শারীরিক লাঞ্চিত বা মারধর করতে পারেন না। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ঘটনা প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত সামশান রানুর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভুক্তোভোগী প্রধান শিক্ষক রবিউর ইসলাম খান বলেন, বিদ্যালয়ের মধ্যেই সবার সামনে শামশাদ রানুর আমাকে লাঞ্চিত করেছেন। মারধর করেছেন।

কী কারণে এমন ঘটনা ঘটল জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অর্ধ বার্ষিকী পরীক্ষা নেয়া হচ্ছিল। একই দিন ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষার দিন ছিল। অর্ধ বার্ষিকী পরীক্ষার জন্য সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা নিতে দেরি হচ্ছিল। ওই শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের মাঠে অবস্থান করছিল। এর মধ্যে সামশাদ রানুর ছেলে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী অর্ক ছিল। তার গায়ে রোদ লাগার কারণে আমি বিদ্যালয়ে আসতেই আমাকে কলার চেপে ধরে টানতে টানতে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যান। আমাকে কিলঘুষি মারতে থাকেন। তার পায়ের জুতা খুলেও মারধর করতে যান। অন্যান্য শিক্ষকরা এগিয়ে এলে জুতা দিয়ে মারতে পারেননি।

আকস্মিক মারধরে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। আমি বয়স্ক মানুষ। এমনিতেই শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছি। পরীক্ষা শেষে আমি বাড়ি চলে এসেছি। বিষয়টি মোবাইলে ইউএনওকে জানিয়েছি।

বিদ্যলয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ইলিয়ার হোসেন বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার কারণে সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা নিতে দেরি হওয়ায় ওই শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের মাঠে অবস্থান করছিল। ওই সময় বিদ্যুৎও ছিল না যে ক্লাস রুমে থাকবে। অর্ধবার্ষীর পরীক্ষার্থীদের বসানোর পরই তাদেরকে বসানো হতো। এ জন্য দেরি হয়েছে।

অভিযুক্ত সামশাদ রানু বলেন, বিদ্যালয়ের কক্ষ না খোলায় আমার ছেলেসহ প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের মাঠে অবস্থান করছিল। তীব্র তাপদহে শিক্ষার্থীরা হাসফাস অবস্থা। সোয়া ১০টার পর প্রধান শিক্ষকের বিদ্যালয়ে এলে আমি তার কাছে গিয়ে কক্ষের তালা খোলার কথা বলি।

তিনি জানান, এই দায়িত্ব আমার না, সহকারী প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস ও কর্মচারী সিদ্দীকের। তিনি আমাকে উল্টা বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ অন্যরা আপনাকে আমার পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে। আমি তার জবাবে বললাম, আমি এখানে কোনো নেত্রী হিসেবে না, আমি অবিভাবক হিসেবে এসেছি। এরপরই আমি তার জামার কলার চেপে ধরে টেনে নিয়ে ‘তালা খোল’ বলে কক্ষের তালা খুলাইছি। তখন শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বসে।

আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রনি আলম নূর বলেন, এই বিষয়টি লোক মারফতে জেনেছি। প্রধান শিক্ষকও আমার নিকট মোবাইল করেছিল। আমি তাকে আমার কার্যালয়ে আসতে বলেছি। কেউ যদি অন্যায় করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারেন। তবে কাউকে মারধর করাটা চরম অন্যায়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই নারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।