নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করতে দেশজুড়ে রেল নেটওয়ার্ক তৈরি করছে তার সরকার।
রোববার (৪ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নীলফামারীর চিলাহাটি-টু-ঢাকা রুটে দিবাকালীন নতুন আন্তঃনগর ট্রেন ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ উদ্বোধনের আগে দেয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, দুর্ঘটনা এড়াতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও যাত্রীসহ সবাইকে সচেতন হতে হবে। সারা দেশে রেল যোগাযোগ উন্নত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার।
মোবাইল ফোন কানে দিয়ে রেললাইনে হাঁটা এবং রেলগেট পড়ার পরও গাড়ি চলাচলের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। এর ফলে অল্প খরচে মানুষ যাতায়াত করতে পারে। আরামদায়ক ভ্রমণ করতে পারে।
তিনি বলেন, ভারতে কী ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে, আপনারা দেখেছেন। এরকম দুর্ঘটনা সচরাচর চোখে দেখা যায় না। একসঙ্গে তিনটি রেল দুর্ঘটনায় কবলি হয়ে ২৮৮ জন মারা গেছেন। আমি তাদের ও পরিবারের প্রতি শোক জানাচ্ছি। আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়ে শোক বার্তা জানিয়েছি। এ ঘটনা খুবই দুঃখজনক। আমাদের দুজন বাংলাদেশিও আহত আছেন। এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা সত্যি চিন্তার বিষয়।
তিনি আরো বলেন, আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে আমাদের রেলপথ, সড়ক পথ, নৌপথ সবকিছু যাতে চালু হয় তার ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের বিমানবন্দরগুলো উন্নত করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্টি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে জ্বালানি ও নিত্যপণ্যসহ সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। এর প্রভাবে বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ও লোডশেডিংয়ে দেশের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। একদিকে দ্রব্যমূল্য মূল্যস্ফীতি আর অপরদিকে এখন বিদ্যুৎ নেই- এই দুটো কষ্ট আমার দেশের মানুষ পাচ্ছে। আর একবার যদি বিদ্যুতের পাঙ্খায় বাতাস খাওয়ার অভ্যাস হয়ে যায় তারপরে না পেলে তো আরও কষ্ট হয়ে যায়। এটাও তো বাস্তব কথা। যুদ্ধটা যদি না বাধত আর স্যাংশন যদি না থাকত তাহলে আমাদের কোনো অসুবিধাই হতো না, আমরা ঠিকই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে সারা বিশ্বব্যাপী গ্যাস, তেল, কয়লা সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়াতে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না- এরকমই অবস্থা দাঁড়িয়েছে। যার জন্য আমি জানি এই গরমে মানুষের তো কষ্ট হচ্ছে।
সরকারপ্রধান বলেন, করোনাভাইরাস, বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তার ওপর স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশনের ফলে বিশ্বব্যাপী প্রত্যেকটা পণ্যের মূল্য বেড়ে গেছে। জ্বালানির মূল্য বেড়েছে, গ্যাসের মূল্য বেড়েছে, খাদ্যপণ্যের মূল্য বেড়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, গম-চিনি যা কিছুই আমরা কিনতে যাচ্ছি সবকিছুর দাম বেড়েছে। যুদ্ধের কারণে পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে, সঞ্চালন ব্যয় বেড়ে গেছে। এমনকি বিদেশে আমরা যে ঋণ নিয়েছি তারা সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। যার ফলে আমাদের অর্থনীতির ওপর একটা চাপ আছে। সেটা মোকাবিলার জন্য আমাদের নিজেদেরও কিছু উদ্যোগ আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখনো সেই অবস্থায় পড়েনি। ইনশাআল্লাহ পড়বেও না। তবে সেজন্য আমাদের দেশের মানুষকে একটা কাজ করতে হবে। আমি বারবার যেটা বলছি- আমাদের যত অনাবাদী জমি আছে সব জমি আমাদের চাষ করতে হবে, উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের যত জলাধার আছে সেখানে মাছের চাষ করতে হবে। তাছাড়া মাছ, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল যে যা পারেন সবাই কিছু না কিছু কাজ করবেন, উৎপাদন বাড়াবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন আমের মৌসুম, ম্যাংগো এক্সপ্রেস চালু করা হয়েছে। সেজন্য রেলকে ধন্যবাদ জানাই। আজকে সারা বাংলাদেশের মানুষ উত্তরাঞ্চলের আম খেতে পারবে। আমাদের বন্ধুত্বপ্রতীম দেশগুলোতে আম পাঠাবো, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো তো আম পাঠাবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭৫ এর পরে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা এদেশের উন্নয়ন চায়নি। তারা দেশটাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। জনগণেন ভোটের অধিকার, খাবার অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। প্রতি রাতে কারফিউ, মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা সুযোগ ছিল না। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করার এক প্রক্রিয়া চলছিল এ দেশে।
২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা ক্ষমতায় এসেছিলাম যে স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে পারে না। উত্তরবঙ্গে সবসময় মন্দা লেগেই থাকতো, আওয়ামী লীগ যেত, তাদের জন্য লঙ্গরখানা খুলতাম। তাদের দুর্দশা আমি স্বচক্ষে দেখেছি।
ইউরোপের উদাহরণ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, গত শীতের সময় ইউরোপের দেশগুলো; তারা গরম পানি ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ সব কিছু ইলেকট্রিসিটিতে চলে। গরম পানি বন্ধ, হিটিং বন্ধ— এ রকম তাদের দুরবস্থা। এমনকি বাজারে গেলে সীমিতভাবে কিনতে হবে। একটি পরিবার ছয়টির বেশি ডিম কিনতে পারবে না। ১ লিটারের বেশি তেল কিনতে পারবে না, ৩টার বেশি টমেটো কিনতে পারবে না—ঠিক এই অবস্থাটা। বাংলাদেশ এখনো সেই দুরবস্থায় পড়ে নাই, ইনশাআল্লাহ পড়বেও না। তবে সেখানে আমাদের দেশের মানুষকে একটা কাজ করতে হবে, আমি বারবার যেটা বলছি— আমাদের যত অনাবাদি জমি আছে সব জমি চাষ করতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের যত জলাধার আছে সেখানে মাছের চাষ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা বাংলাদেশে বাজেট দিয়েছি। ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের আমলে বাজেট ছিল মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকা। আর ১ জুন আমরা যে বাজেট দিয়েছি, সেটি ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট। বাংলাদেশের ইতিহাসে সব থেকে বড় বাজেট আমরা দিয়েছি। এ বাজেট বাস্তবায়ন করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং আমরা তা পারব। আওয়ামী লীগ পারবে।
তিনি বলেন, আমি জানি অনেকে অনেক কথাই বলার চেষ্টা করেন; কিন্তু আমরা বাংলাদেশকে চিনি, জানি, আর এই বাংলাদেশের মানুষের অবস্থাটাও আমাদের জানা। অবশ্য ঢাকা শহরে বসে… আমরা এখন বিদ্যুৎ দিয়েছি, সেখানে এয়ারকন্ডিশন রুমে বসে; আমি এতগুলো টেলিভিশন বেসরকারি খাতে খুলে দিয়েছি, সেখানে বসে টকশোর সুবিধা পাচ্ছেন। ভালোমতো টকশোও দিচ্ছেন এবং আমরা যা কাজ করি, সেখানেই একটা সমালোচনা, সেখানেই একটা কিন্তু খুঁজে বেড়ানো। আর মানুষকে হতাশ করার কতগুলো কথা বলে বেড়ায়।
তিনি আরও বলেন, আর বাংলাদেশের বদনাম বিদেশিদের কাছে বলে বলে নিজেরা সেখান থেকে বোধ হয়…কী পায় আমি জানি না। কিছু হাদিয়া-টাদিয়া জোগাড় করে কিনা তাও বলতে পারব না কিন্তু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলেই তারা যেন তৃপ্তি পায়। যারা এসব বলছেন এবং বাজেট দেওয়ার পরেই তারা প্রতিবারই বলেন, এটা সম্ভব না, এটা করতে পারবে না—আমরা কিন্তু সেটা করি এবং করে দেখাই।
এছাড়া নীলফামারী প্রান্তে অন্যদের মধ্যে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।