নিজস্ব প্রতিবেদক :
নেই পিচ। সড়কে কাদাপানি, খানাখন্দ ভরা। গত প্রায় সাত বছরেরও বেশি সময় যাবত সড়কের এ অবস্থা হলেও গর্ত ভরাট করতে পৌরসভার পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী-বেড়াইদেরচাল-বেপারীবাড়ী-লিচু বাগান (বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন) সড়কের বেহাল দশা। সোয়া এক কিলো মিটার এ সড়কটির বিভিন্ন স্থানে গর্ত হয়ে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। গর্তে রিকশা আটকে উল্টে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী বেড়াইদরেচালা, দোখলা, মাওনা ইউনিয়নের বেলতলী, কবরঘাটা, দক্ষিন বারতোপা গ্রামের বাসিন্দাসহ একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একাধিক বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা।
স্থানীয়রা বলছেন, সোয়া এক কিলোমিটার এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে কাদামাটি জমেছে। গর্তে পড়ে রিকশা উল্টে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বেড়াইদেরচালা, দোখলা, মাওনা ইউনিয়নের বেলতলী, কবরঘাটা ও দক্ষিণ বারতোপা গ্রামের বাসিন্দারা। বিশেষ করে এখানে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একাধিক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পোশাক কারখানা রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পোশাক কারখানার শ্রমিকরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সড়কটি পৌরসভার ৫ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। বর্তমানে সড়ক দিয়ে যান চলাচল তো দূরের কথা, হেঁটেও যাতায়াত করা যায় না। মেয়র ও কাউন্সিলরদের বাসায় একাধিকবার গিয়েও সংস্কারের আশ্বাস পাননি স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কে পিচঢালাই নেই। মাঝেমধ্যে খানাখন্দ ও গর্ত। এসব গর্তে কাদাপানি জমে আছে। হেঁটে যাওয়ারও উপায় নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে সড়কটি পাকা করা হয়। তারপর থেকে ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে বিভিন্ন স্থান ভেঙে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এখন চলাচলের একবারেই অনুপযোগী। গত সাত বছর ধরে এমন অবস্থা হলেও সংস্কার করা হয়নি। ফলে প্রতিদিন দুর্ভোগে পড়ছেন পোশাকশ্রমিক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা।
গিলারচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফা বেগম বলেন, সড়কের পুরোটাই ভাঙা। ফলে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাতায়াতে সমস্যা হয়। অনেক শিক্ষার্থীরা হাঁটতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যায়। সড়কের আশেপাশে পাঁচটি মাদ্রাসা ও ছয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। চলাচলে সবাইকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
স্থানীয় হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রামীণ সড়ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলেও দীর্ঘদিন যাবত সড়কটি সংস্কার না করায় বিকল্প সড়ক না থাকায় অনেক কষ্টে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সড়কের গর্তে বর্ষার পানি জমে কর্তমাক্ত হয়ে থাকায় অনেক সময় ভারী যানবাহন চলাচলে ওই পানি ছিটকে দোকোনে ও ক্রেতার গায়েও গিয়ে পড়ছে। হবে-হচ্ছে বলে স্থানীয় কাউন্সিলর বার বার আশ্বাস দিলেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি গত ৫/৭ বছরে।
গিলারচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, এই সড়ক দিয়ে স্কুলে যেতে অনেক কষ্ট হয়। সড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় যানবাহন চলাচল করলে ময়লা পানি ছিটকে জামা-কাপড় নষ্ট হয়ে যায়।
স্থানীয় অটোরিকশাচালক মফিজ উদ্দিন বলেন, খানাখন্দ ও ভাঙা সড়ক দিয়ে রিকশা চালাতে গিয়ে বিভিন্ন অংশ খুলে যায়। প্রায় মেরামত করতে হয়। রিকশা চালিয়ে যা আয় হয়, তা মেরামতে চলে যায়। এই সড়ক চলাচলের উপযোগী নয়।
স্থানীয় পোশাকশ্রমিক রেবেকা, জাহাঙ্গীর, খোরশেদ ও আকলিমা জানান, এই সড়ক দিয়ে চলাচলে অনেক কষ্ট হয়। রিকশার ঝাঁকুনিতে আমাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ ও জিনিসপত্র ময়লা পানিতে পড়ে যায়। প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটে।
ফার্মেসি ব্যবসায়ী আব্দুল হাই সিকদার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সড়ক সংস্কার না করায় দোকোনে ক্রেতা কমে যাচ্ছে। ময়লা পানি মাড়িয়ে ক্রেতা দোকানে আসতে চায় না। একটু দূরে গিয়েও তার নিরাপদে পণ্য বা ঔষুধ কিনে নিয়ে আসে। এতে করে আমরা সড়কের পাশের ব্যবাসয়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
চা বিক্রেতা ফারুক মিয়া বলেন, এ সড়কে দিয়ে আগে অনেক মানুষ যাতায়াত করত। কয়েকদিনের বর্ষায় সড়কের গর্তে পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বেশি বৃষ্টি হলেও চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী বাসিন্দাদের।
সড়ক সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রমিজ উদ্দিন এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. হাবিবুল্লাহ জানান, সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হয় না। তবে ইতোমধ্যে সংস্কারের জন্য ঠিকাদারকে কাগজপত্র বুঝিয়ে দিয়েছে পৌরসভা। দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু হবে।