নিজস্ব প্রতিবেদক :
মুন্সীগঞ্জের কুণ্ডেরবাজার বেইলি সেতু মধ্য জুন পর্যন্ত এক মাস বন্ধ ঘোষণা করেছে সড়ক ও জনপথ। তাই মঙ্গলবার (১৬ মে) সকাল ৮টা থেকে সেতুটি দিয়ে সব যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। আগামী ১৬ জুন রাত ৮টা থেকে আবার স্বাভাবিক যান চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
প্রায় ২৩ বছর আগে চালু হওয়া ৯৮ মিটার দীর্ঘ সেতুটি এই অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগে বড় পরিবর্তন আনে। তৎকালীন সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির প্রচেষ্টায় এই গুরুত্বপূর্ণ সেতু চালুর পর বদলে যায় এই এলাকার দৃশ্যপট। মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সঙ্গে সিরাজদিখান, শ্রীনগর এবং লৌহজং উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হয়। তাই আলু ও উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতসহ স্থানীয় অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে।
কিন্তু এই দীর্ঘদিনেও এখানে পাকা-প্রশস্ত সেতু নির্মাণ হয়নি। কুণ্ডেরবাজার বেইলি ব্রিজ বন্ধে মুন্সীগঞ্জ-সিরাজদিখান-শ্রীনগর রুটে সরাসরি যান চলাচলও বন্ধ হয়ে যাবে। এতে নানা সমস্যায় পড়বে হাজার হাজার মানুষ। মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী ও সিরাজদিখান উপজেলার বন্ধন তৈরি করা সেতুটি ঢাকা-মাওয়া বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের ছনবাড়ী পয়েন্টের সঙ্গে জেলা শহর মুন্সীগঞ্জের সাথে সংযোগ করেছে। সরু বেইলি ব্রিজটির স্থলে দীর্ঘদিনেও কংক্রিটের প্রশস্ত সেতু নির্মাণ না করায় দুই পাড়ে যানজট লেগেই থাকে। আর সেতুটি প্রায়ই বিকল হচ্ছিল। সর্বশেষ মেরামতের পর গত ৩১ জুলাই থেকে বেইলি ব্রিজটি দিয়ে শুধু ছোট যানবাহন চলাচল করছে। এটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দুই পাশে ওপরে স্টিলের ব্যারিকেড স্থাপন করে দেওয়ায় বাস-ট্রাক এমনকি পিকআপও চলতে পারছে না।
এবিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজা জনবানীকে জানান, এই সেতুর মাপে একটি বড় বেইলি তৈরি করা হচ্ছে চট্টগ্রামে সেটি এখানে এনে বসিয়ে দেওয়া হবে। নতুনভাবে স্থাপন করা বেইলি ব্রিজ দিয়ে বাসও চলাচল করতে পারবে। পদ্মা ও ধলেশ্বরী নদীর সংযোগে খড়শ্রোতা তালতলা-গৌরগঞ্জ খালের ওপর নির্মিত এই সেতুটি ১০০ মিটারের বেশি দীর্ঘ করতে হবে। তাই ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং থেকে অনুমোদন নিতে হয়েছে, নক্সার কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে এখন, চলছে টেন্ডার প্রক্রিয়াও।
সড়ক বিভাগ জানায়, মুন্সীগঞ্জ (হাতিমারা)- কুণ্ডেরবাজার-শ্রীনগর (ছনবাড়ী সড়কের ৬ষ্ঠ কিলোমিটারের ‘কুণ্ডেরবাজার বেইলি’ সেতুটির জরুরি মেরামত কাজটি দ্রুত সময়ে নিরাপদে সম্পন্ন করতেই বন্ধ রাখতে হচ্ছে সেতুটি। তাই যানবাহনসমূহকে বিকল্প সড়ক ফতুল্লা-মুন্সীগঞ্জ-মাওয়া দিয়ে চলাচল করার জন্য অনুরোধ করা হয়। কুণ্ডেরবাজার সেতুর মুন্সীগঞ্জ প্রান্ত থেকে আগে বেতকা চৌরাস্তা, আব্দুল্লাহপুর চৌরাস্তা এবং হাতিমারা মোড় থেকে বালিগাঁও-লৌহজং-মাওয়া সড়কে যুক্ত হওয়া সম্ভব। তবে অনেকটা পথ ঘুরতে হবে। তাই পদ্মা সেতু এবং বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে থেকে মুন্সীগঞ্জ শহরে পৌঁছাতে পথ বেড়ে গেল। এতে সময় ও অর্থ দুটোই বেশি ব্যয় হবে।
গত ২০ জুলাই বালুর জাহাজের ধাক্কায় মাঝখানের খুঁটির পিলারক্যাপ ও গার্ডার ফেটে যাওয়ার পর সেতুটি ৩০ জুলাই পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। আবার জোড়াতালি দিয়ে চালু করলেও ছিল লক্কড়ঝক্কড়। এতে বিড়ম্বনায় পড়ে মানুষ।
সড়ক ও জনপথের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ফাহিম রহমান জানান, ঝুঁকিপূর্ণ সত্ত্বেও সচল অবস্থায় সেতুটিতে প্রতিদিন দুই সহস্রাধিক যান চলাচল করে। তিনি জানান, চট্টগ্রামের কারখানায় এই বেইলির বিভিন্ন অংশ তৈরি হচ্ছে। সোমবার রাতে সেতুস্থলে পৌঁছাবে এবং মঙ্গলবার সকাল থেকে কাজ শুরু হবে।