আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
দুই সপ্তাহের জামিন পেয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দল পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান ইমরান খান।
শুক্রবার (১২ মে) পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মিয়াগুল হাসান আওরঙ্গজেব এবং বিচারপতি সামান রাফাত ইমতিয়িাজের একটি বেঞ্চ এই জামিন মঞ্জুর করেন বলে জানিয়েছে দেশটির দৈনিক ডন।
বৃহস্পতিবার (১১ মে) অনেকটা নাটকীয়তার মধ্যে ইমরান খানের গ্রেপ্তারকে অবৈধ ঘোষণা করেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি তাকে দ্রুত মুক্তি দিতে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরোকে (এএনবি) নির্দেশও দিয়েছেন। এর পরেই আজ শুক্রবার এ মামলায় জামিন পেতে আইএইচসি আদালতে হাজির হন পিটিআই প্রধান।
ইসলামাবাদ হাইকোর্টের দুই নম্বর কক্ষে বিচারপতি মিয়াঙ্গুল হাসান আওরঙ্গজেব ও বিচারপতি সামান রাফাত ইমতিয়াজের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ ইমরান খানের জামিন আবেদনের শুনানি করেন।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, প্রায় দুই ঘন্টা বিলম্বের পর আদালতে শুনানি শুরু হয়। ওই সময় আদালতের বাইরে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করছিলেন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। কিন্তু জুমার নামাজের কারণে দুপুর ১টায় আদালত সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়। ওই সময় নামাজের জন্য ইসলামাবাদ হাইকোর্টের দুই বিচারক আদালতের কক্ষ ছেড়ে চলে যান। তখন আদালত প্রাঙ্গণে ইমরান খানের পক্ষে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন তার সমর্থকরা। স্থানীয় সময় বেলা ২টা ৩০ মিনিটে ফের শুনানি শুরু হয়।
আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করার পরে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন পিটিআই চেয়ারম্যানের আইনজীবী বাবর আওয়ান। তিনি দাবি করেছেন, লাহোর থেকে পুলিশ সদস্যরা এসেছেন একটি “নতুন মামলায়” ইমরান খানকে গ্রেফতার করতে। তারা ইসলামাবাদের দিকে রওনা হয়েছেন।
এ আইনজীবীর অভিযোগ, বর্তমান প্রশাসনে দুই থেকে তিনজন লোক রয়েছে যারা খুবই উদ্বিগ্ন অবস্থায় আছেন। কারণ, ইমরান খানকে মুক্তি দিলে তাদের চাকরি বিপদে পড়বে। এ কারণেই পাঞ্জাব প্রদেশের পুলিশকে রাজধানীতে ডাকা হয়েছিল।
বাবর আওয়ান ইমরান খানের প্রাণনাশের হুমকির কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহও একই কথা বলেছিলেন। “তাহলে কেন তারা ইমরানকে গ্রেফতার করতে এত অনড়? আমি গণমাধ্যমকে বলতে চাই যে ইমরানকে আবার গ্রেফতার করার যেকোনো প্রচেষ্টা অসাংবিধানিক।
ওই আইনজীবী আরও অভিযোগ করেছেন যে পিটিআই প্রধানকে হত্যা করার জন্য “বিশেষ লোক” নিয়োগ করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, যারা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে কারাগারে পাঠিয়েছিল, তারাই দেশের সহিংসতার জন্য দায়ী।
বিচারপতি মিয়ানগুল হাসান আওরঙ্গজেব ও বিচারপতি সামান রাফাত ইমতিয়াজের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি নিয়ে ইমরানের জামিন মঞ্জুর করেন।
ডন নিউজ টিভি বলেছে, ইমরানের আইনজীবীরা হাইকোর্টের কাছে আরও চারটি আবেদন উপস্থাপন করেন।
দুই ঘণ্টা পর ইমরানের জামিন শুনানি শুরু হয়। গণমাধ্যমগুলো বলছে, শুনানি চলাকালে আদালত চত্বরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছিল।
পিটিআই চেয়ারম্যান বেলা সাড়ে ১১টার কিছুক্ষণ পর কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে আসেন এবং বায়োমেট্রিকস সম্পন্ন করেন। টিভিতে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশ ও রেঞ্জার কর্মকর্তারা আদালত চত্বরের বাইরে অবস্থান করছিলেন।
ভিডিও ফুটেজে আরও দেখা গেছে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট চত্বরের বাইরে বেশ কয়েকজন আইনজীবী ইমরানের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে স্লোগান চিচ্ছিলেন।
শুক্রবার (১২ মে) জুমার নামাজের বিরতির পর পুনরায় শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে আদালতকক্ষে ইমরানের সঙ্গে তার আইনজীবীরা ছিলেন। আইনজীবী খাজা হারিস যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
আদালতে বিচার চলার সময় ইমরান খান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি তাকে আবার গ্রেফতার করা হয়, তবে পাকিস্তানজুড়ে অস্থিরতা শুরু হতে পারে। এ বিষয়টিতে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্কও করেছেন।
এর আগে মঙ্গলবার (৯ মে) আইএইচসি প্রাঙ্গণ থেকে আকস্মিকভাবেই গ্রেপ্তার হন ইমরান খান। তার গ্রেফতার ঘিরে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ ও পিটিআই সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ১০ জনের নিহতের খবর পাওয়া গেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে পিটিআইয়ের শত শত কর্মীকে। সূত্র : ডন, জিও নিউজ।