নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা আরও শক্তিশালী হয়ে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এখন এর কেন্দ্রের গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ১৪০ কিলোমিটার হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি দ্রুত এগিয়ে আসছে উপকূলের দিকে। সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় দেশের চার সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুশিয়ারি সংকেত এবং নদী বন্দরগুলোতে ২ নম্বর নৌসতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
শুক্রবার (১২ মে) আবহাওয়া অধিদফতর থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি দক্ষিণপূর্ব এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এটি ভোররাতে ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১২৫ কিলোমিটার দূরে, এখন এগিয়ে এসে ১ হাজার ৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ- দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছে। একইভাবে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ছিল ১ হাজার ৫৫ কিলোমিটার দূরে, এখন আছে ১ হাজার ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ভোরে ছিল ১ হাজার ৮৫ কিলোমিটার দূরে, এখন আছে ১ হাজার ৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ছিল ১ হাজার ৫০ কিলোমিটার দূরে, এখন আছে ১ হাজার ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।
অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
এদিকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলগুলোর উপর দিয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়োহাওয়াসহ অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নৌবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
গত সোমবার (৮ মে) সকালে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। ওইদিন মধ্যরাতে এটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। মঙ্গলবার (৯ মে) সন্ধ্যার পর সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আরও শক্তিশালী হয়ে নিম্নচাপ এবং গতকাল বুধবার (১০ মে) সকালে তা গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়। এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সেটি আরও শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় রূপ নেয়।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় দেশের উপকূলীয় জেলা-উপজেলাগুলোতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। চট্টগ্রামে প্রায় ১৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ১ হাজার ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্রও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে প্রায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষকে দুর্যোগকালীন আশ্রয় দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
আবহাওয়ার বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে এবং সেইসাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা নামটি ইয়েমেনের দেওয়া। কফির জন্য বিখ্যাত স্থানীয় একটি বন্দরের নাম মোখা। কালক্রমে সেখানকার কফির নামকরণও করা হয়েছে মোখা। ইংরেজিতে শব্দটি গড়পযধ লেখা হলেও এর উচ্চারণ হচ্ছে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়ার ঘূর্ণিঝড়গুলোর নাম ঠিক করে। এক্ষেত্রে এসকাপ সদস্যভূক্ত ১৩টি দেশের দেওয়ার নামের তালিকা থেকে পর্যাক্রমে এক একটি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়। বর্তমানে যে তালিকা রয়েছে সেখানে ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া আছে। এর মধ্যে মোখা নামটি ১৩ নম্বর। অর্থাৎ ওই তালিকা থেকে পরবর্তী ১৫৬ ঝড়ের নাম