Dhaka শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেফতারের পর পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষোভ করেছেন। ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি, লাহোর, করাচি, গুজরানওয়ালা, ফয়সালাবাদ, মুলতান, পেশোয়ার ও মারদানসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় অর্ধশত পিটিআই সমর্থককে। লাহোর ও করাচিতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। বিক্ষোভ হচ্ছে পেশাওয়ারেও।

বুধবার (১০ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।

করাচিতে বিক্ষোভকারীরা নার্সারির কাছাকাছি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল। তারা পুলিশের গাড়িতে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে, সড়কবাতি ভেঙে ফেলে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ারগ্যাস শেল নিক্ষেপ করে।

ইসলামাবাদের রাস্তায় শত শত বিক্ষোভকারী রাজধানীর প্রধান মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে। সেখানে ইমরান সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান ছুড়েছে।

বিক্ষোভকারীরা রাস্তার সাইন উপড়ে ফেলেছে এবং রাস্তার ওপর দিয়ে চলাচলের ব্রিজ ভেঙে ফেলেছে। বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এবং পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে।

ইমরান খানের সমর্থকরা বেশ কিছু শহরে সুরক্ষিত সেনা ছাউনির বাইরে বিক্ষোভ করছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।

বিক্ষোভকারীরা বলছেন, ইমরান খানকে গ্রেফতার করায় তারা ক্ষুব্ধ। ফরিদা রওদাদ নামে এক পিটিআই কর্মী বলেন, আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা আর কী করতে পারি? পাকিস্তানে আর কী করার আছে? আমরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কখনো কোনো কথা বলিনি, বললে হয়তো ভালো করতাম!

ফরিদা রওদাদ নামে এক বিক্ষোভকারী বিবিসিকে বলছিলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা আর কী করতে পারি? পাকিস্তানে আর কী করার আছে? আমরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কখনো কোনো কথা বলিনি, বললে হয়ত ভালো করতাম! এখন একটা নৈরাজ্য চলুক, বিশৃঙ্খলা ঘটুক। ইমরান না থাকার মানে পাকিস্তানে আর কিছু নেই। ক্ষমতা হাতে নেবার মতো আর কেউ এখানে নেই।।

আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইমরানের গ্রেফতারের পর পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ দমন করতে দেশটির পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করেছে। করাচিতে দেশেটির বৃহত্তম শহরের মধ্য দিয়ে চলমান প্রধান সড়কে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাহোরে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করেছে। ওই শহরেই ইমরান খান বাস করেন।

ইসলামাবাদের পুলিশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছে, সহিংসতায় পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন এবং ৪৩ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

টুইটারে পোস্ট করা লাহোরে বিক্ষোভের ফুটেজ থেকে দেখা যায়, সামরিক বাহিনীর কমান্ডারের বাসভবনে বিক্ষোভকারীরা ঢুকে পড়েছে এবং আসবাবপত্র ও বাসার ভেতরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে। বন্দর শহর করাচিতে প্রধান সড়ক অবেরাধ করে রেখেছে বিক্ষোভকারীরা।

রয়টার্স জানিয়েছে, দক্ষিণ পশ্চিমের কোয়েটা শহরে ইমরান খানের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে ছয় পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।

ইমরান খানের দলের টুইটার হ্যান্ডল থেকে পাকিস্তানিদের বিক্ষোভে নামার ডাক দেওয়া হয়।

টুইটে বলা হয়, পাকিস্তান, এখন সময় তোমার। এটিই একমাত্র সুযোগ। দেশকে রক্ষায় লোকজনকে এগিয়ে আসতে হবে। এখন পাকিস্তানের জনগণের সময়। খান সবসময় আপনাদের পাশে ছিলেন। এখন তার পাশে আপনাদের দাঁড়ানোর সময়। হ্যাশট্যাগে জুড়ে দেওয়া হয়- রিলিজইমরানখান।

ইমরান খানের থাকার খবরে পিটিআই সমর্থকরা এনএবির আবপাড়া অফিস ঘেরাও করেছেন।

এদিকে ইমরানকে গ্রেফতার করার পর দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সেখানে চারজনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৯ মে) ইসলামাবাদ হাইকোর্ট চত্বর থেকে ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হয়। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন মামলায় জামিনের জন্য আদালতে হাজির হয়েছিলেন। পিটিআই চেয়ারম্যানের দাবি, তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

গত বছরের এপ্রিল মাসে ইমরান খানকে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণ করা হয়। এরপর থেকে তিনি আগাম নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ বছরের শেষের দিকে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা।

পাঞ্জাব পুলিশের মহাপরিচালক এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘দুর্নীতি ও অনিয়মের’ অভিযোগে ইমরানকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশের বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির পাঁচ হাজার কোটি রুপি বৈধতা দেওয়ার বিনিময়ে কয়েকশ কোটি রুপি ঘুস নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবির বিরুদ্ধে। সেই মামলাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে।

তবে ইমরান খান কোনো ধরনের আইনভঙ্গের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং তাকে গ্রেফতার করার আগে রেকর্ড করা এক ভিডিওবার্তায় বলেছেন, তিনি যেকোনো পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। সূত্র : ডন, আল-জাজিরা, রয়টার্স।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান

প্রকাশের সময় : ০১:৪৪:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ মে ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেফতারের পর পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষোভ করেছেন। ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি, লাহোর, করাচি, গুজরানওয়ালা, ফয়সালাবাদ, মুলতান, পেশোয়ার ও মারদানসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় অর্ধশত পিটিআই সমর্থককে। লাহোর ও করাচিতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। বিক্ষোভ হচ্ছে পেশাওয়ারেও।

বুধবার (১০ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।

করাচিতে বিক্ষোভকারীরা নার্সারির কাছাকাছি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল। তারা পুলিশের গাড়িতে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে, সড়কবাতি ভেঙে ফেলে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ারগ্যাস শেল নিক্ষেপ করে।

ইসলামাবাদের রাস্তায় শত শত বিক্ষোভকারী রাজধানীর প্রধান মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে। সেখানে ইমরান সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান ছুড়েছে।

বিক্ষোভকারীরা রাস্তার সাইন উপড়ে ফেলেছে এবং রাস্তার ওপর দিয়ে চলাচলের ব্রিজ ভেঙে ফেলেছে। বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এবং পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে।

ইমরান খানের সমর্থকরা বেশ কিছু শহরে সুরক্ষিত সেনা ছাউনির বাইরে বিক্ষোভ করছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।

বিক্ষোভকারীরা বলছেন, ইমরান খানকে গ্রেফতার করায় তারা ক্ষুব্ধ। ফরিদা রওদাদ নামে এক পিটিআই কর্মী বলেন, আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা আর কী করতে পারি? পাকিস্তানে আর কী করার আছে? আমরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কখনো কোনো কথা বলিনি, বললে হয়তো ভালো করতাম!

ফরিদা রওদাদ নামে এক বিক্ষোভকারী বিবিসিকে বলছিলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা আর কী করতে পারি? পাকিস্তানে আর কী করার আছে? আমরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কখনো কোনো কথা বলিনি, বললে হয়ত ভালো করতাম! এখন একটা নৈরাজ্য চলুক, বিশৃঙ্খলা ঘটুক। ইমরান না থাকার মানে পাকিস্তানে আর কিছু নেই। ক্ষমতা হাতে নেবার মতো আর কেউ এখানে নেই।।

আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইমরানের গ্রেফতারের পর পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ দমন করতে দেশটির পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করেছে। করাচিতে দেশেটির বৃহত্তম শহরের মধ্য দিয়ে চলমান প্রধান সড়কে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাহোরে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করেছে। ওই শহরেই ইমরান খান বাস করেন।

ইসলামাবাদের পুলিশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছে, সহিংসতায় পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন এবং ৪৩ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

টুইটারে পোস্ট করা লাহোরে বিক্ষোভের ফুটেজ থেকে দেখা যায়, সামরিক বাহিনীর কমান্ডারের বাসভবনে বিক্ষোভকারীরা ঢুকে পড়েছে এবং আসবাবপত্র ও বাসার ভেতরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে। বন্দর শহর করাচিতে প্রধান সড়ক অবেরাধ করে রেখেছে বিক্ষোভকারীরা।

রয়টার্স জানিয়েছে, দক্ষিণ পশ্চিমের কোয়েটা শহরে ইমরান খানের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে ছয় পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।

ইমরান খানের দলের টুইটার হ্যান্ডল থেকে পাকিস্তানিদের বিক্ষোভে নামার ডাক দেওয়া হয়।

টুইটে বলা হয়, পাকিস্তান, এখন সময় তোমার। এটিই একমাত্র সুযোগ। দেশকে রক্ষায় লোকজনকে এগিয়ে আসতে হবে। এখন পাকিস্তানের জনগণের সময়। খান সবসময় আপনাদের পাশে ছিলেন। এখন তার পাশে আপনাদের দাঁড়ানোর সময়। হ্যাশট্যাগে জুড়ে দেওয়া হয়- রিলিজইমরানখান।

ইমরান খানের থাকার খবরে পিটিআই সমর্থকরা এনএবির আবপাড়া অফিস ঘেরাও করেছেন।

এদিকে ইমরানকে গ্রেফতার করার পর দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সেখানে চারজনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৯ মে) ইসলামাবাদ হাইকোর্ট চত্বর থেকে ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হয়। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন মামলায় জামিনের জন্য আদালতে হাজির হয়েছিলেন। পিটিআই চেয়ারম্যানের দাবি, তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

গত বছরের এপ্রিল মাসে ইমরান খানকে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণ করা হয়। এরপর থেকে তিনি আগাম নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ বছরের শেষের দিকে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা।

পাঞ্জাব পুলিশের মহাপরিচালক এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘দুর্নীতি ও অনিয়মের’ অভিযোগে ইমরানকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশের বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির পাঁচ হাজার কোটি রুপি বৈধতা দেওয়ার বিনিময়ে কয়েকশ কোটি রুপি ঘুস নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবির বিরুদ্ধে। সেই মামলাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে।

তবে ইমরান খান কোনো ধরনের আইনভঙ্গের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং তাকে গ্রেফতার করার আগে রেকর্ড করা এক ভিডিওবার্তায় বলেছেন, তিনি যেকোনো পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। সূত্র : ডন, আল-জাজিরা, রয়টার্স।