Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজধানীতে তীব্র যানজট, ভোগান্তিতে নাকাল নগরবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

যানজটের পুরোনো চেহারায় ফিরেছে কর্মব্যস্ত শহর ঢাকা। রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো গাড়ির দীর্ঘ জট তৈরি হয়। গাড়ির জটে সকাল থেকে অধিকাংশ সড়ক অনেকটা অচল হয়ে পড়ে। তীব্র গরমের মধ্যে অসহনীয় যানজটের কারণে দৈনন্দিন কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

সোমবার (৮ মে) সকাল থেকে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, একটি সিগন্যাল পেরিয়ে আরেকটি সিগন্যালে পৌঁছতে লাগছে দীর্ঘ সময়। কোথাও ধীরে গাড়ি চললেও কোথাও একেবারে গাড়ি বন্ধ করে দীর্ঘ অপেক্ষা করছেন চালক-যাত্রী সবাই। তীব্র গরমের মধ্যে ভয়াবহ যানজটের কারণে ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। যদিও ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তার বলছেন মানুষ আর গাড়ির চাপ বাড়ায় যানজট বেড়েছে। তবে তারা চেষ্টা করছেন যতোটা কমিয়ে রাখা যায়।

প্রায় দুই সপ্তাহের বেশি সময় রাজধানীতে অবাধে ছুটেছে গাড়ি। ওই সময়ে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়া গেছে অল্প সময়েই। এক সপ্তাহ আগেও মোটরসাইকেলে আধা ঘণ্টায় সদরঘাট থেকে যাওয়া যেতো উত্তরায়। গণপরিপবহনে সময়টা একটু বেশি লাগতো। সেই পথ যেতে এখন সময় লাগছে দেড় ঘণ্টার বেশি। স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা আর করা যাচ্ছে না। কারণ আগের কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে ঢাকায়।

গত মাসের ১৯ এপ্রিল থেকে ঈদের ছুটি শুরুর পর থেকেই বেশ ফাঁক ছিল রাজধানী। ঈদের ছুটি শেষ করে অফিস শুরু হলেও অনেকেই বাড়তি ছুটি নিয়েছিল বলে শহরে যানজট তেমনটা ছিল না। এরপর আবার সাপ্তাহিক ছুটি, এরপর মে দিবসের ছুটি, বৌদ্ধ পূর্ণিমার সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি মিলে প্রায় ১৫ দিনের মতো একটা ছুটির আমেজ ছিল রাজধানীজুড়ে। এই সময়ে ফার্মগেট থেকে বারিধারায় যেকোনো বাহনে যাতায়াতে সময় লাগতে ১৫ মিনিট। কিন্তু চিরচেনা রূপে ফিরে আসা রাজধানীতে আজ সেই সড়কে সময় লাগছে ঘণ্টাখানেকেরও বেশি। প্রতিটি মোড়ে প্রতিটি সিগন্যালে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে যানগুলোকে।

বিজয় সরণিতে দায়িত্বরত এক সার্জেন্ট বলেন, আসলে এই যানজট শুরু হয়েছে এই সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার থেকেই। আজ সোমবারও সকাল থেকে যানজট আছে। সড়কে গাড়ির চাপ কয়েক গুণ বেড়েছে। আমরা সর্বদা চেষ্টা করছি যানজট কমানোর।

আজিমপুর থেকে গাজীপুর চলাচলরত ভিআইপি পরিবহনে চালক সোলায়মান বলেন, প্রতিদিন এই সড়কে গাড়ি চালাই। গত কয়েকদিন দুই ঘণ্টায় যাতায়াত করেছি। গতকাল রোববার প্রায় ৪ ঘণ্টা লাগছে। আজকে আজিমপুর থেকে খামাড়বাড়ি আসছি দেড় ঘণ্টায়। বলতে পারি না গাজীপুরে প্রথম ট্রিপ কয়টায় শেষ হবে।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বিজি প্রেসের সামনে মোটরসাইকেল আরোহী ইকবাল বলেন, কঠিন অবস্থা। কোনো দিক দিয়ে কুল পাচ্ছি না। সড়কে গাড়ির চাকা যেন ঘুরছেই না। প্রচন্ড গরমে হাপিত্যেশ করছি কিন্তু যানজট লেগেই থাকছে। নাবিস্কো মোড় থেকে বিজি প্রেসের সামনে আসতে পাঁচ মিনিটের পথে লেগে গেল আধা ঘণ্টা।

ভিআইপি গাড়িতে চলাচল করা কেউ উত্তরা যাবেন কেউ টঙ্গি বা গাজীপুর। যাদের অনেকের হাত পাখা নিয়ে উঠেছেন। অনেকক্ষণ এক স্থানে দাঁড়িয়ে থাকলে গাড়ির ফ্যানের বাতাসও কুলিয়ে উঠতে পাড়ছে না গরমে। ফলে এই হাত পাখার ব্যবস্থা। অনেকেই পথের হকারদের কাছ থেকে হাতপাখা কিনছেন আবার অনেককে পত্রিকা বা মোটা কাগজের অংশকেই হাতপাখা বানিয়ে বাতাস করতে দেখা যায়। প্রচণ্ড গরমে ভোগান্তি বাড়ায় অনেকেই গন্তব্যে পৌঁছাতে যানবাহন ছেড়ে হেঁটেই রওনা হন।

পান্থপথ, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, মগবাজার, বিজয় সরনি মোড়, তেজগাঁও এলাকা, সাতরাস্তা মোড়, গুলশান, কুড়িল, যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকাগুলোতে তীব্র যানজট দেখা যায়।

ফার্মগেট থেকে পাঠাও মোটরসাইকেলে মহাখালী তিতুমীর কলেজে আসেন হাসিব মিয়া। তিনি বলেন, সপ্তাহে চার দিন যাতায়াত করি। রোববার এসেছি ৪০ মিনিটের মতো লেগেছে। আজ আরও একটু বেশি লেগেছে।

সিএনজি চালক শামীম  বলেন, শেওড়াপাড়া থেকে দুই যাত্রী নিয়ে বের হয়েছি মতিঝিল যাব। আগারগাঁও সিগন্যাল পেরিয়ে নতুন রাস্তায় ওঠার মুখেই যানজটে পড়ি। সড়কের অবস্থা বেগতিক দেখে অনেক কষ্টে সামনে ইউটার্ন করে আবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনের সড়ক ধরে রওনা দেই। কিন্তু সংসদ ভবনের সামনে থেকে বিজয় সরণি যাওয়ার সড়ক একদম স্থবির। বাধ্য হয়ে খামারবাড়ি হয়ে ফার্মগেট ঢুকি। এখানেও অবস্থা খারাপ। বুঝতে পারছি না কতক্ষণে পৌঁছাব মতিঝিলে।

গুলিস্তান থেকে বনানীতে যাওয়ার জন্য আজমেরী পরিবহনে ওঠেন সামাদ হোসেন। যানজটের কারণে মহাখালীতে আসার পর বাস থেকে নেমে হাটা ধরেন বনানীর উদ্দেশ্যে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেড় ঘণ্টায় এসেছি এই পথ। গাড়িতে মানুষের ভিড় আর গরমে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলাম। মহাখালী এসে দেখি সামনে লম্বা গাড়ির সিরিয়াল। নেমে গেলাম, হেটে যাওয়াই উত্তম নয়তো গাড়িতে স্ট্রোক করবে।

মহাখালী থেকে বনানীর সড়কে, তিতুমীর কলেজ থেকে গুলশানের সড়কে অনেক যাত্রীদের হেটে যেতে দেখা যায়।

সকালে মোহাম্মদপুর থেকে পল্টনে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন সাগর আহমেদ। গত দুই সপ্তাহ তিনি মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটে পল্টনে পৌঁছলেও আজ তার সময় লেগেছে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। তিনি বলেন, সায়েন্সল্যাব পৌঁছানোর পর বাস আর যায় না। বাধ্য হয়ে বাটা সিগন্যাল অবধি গেলাম। কিন্তু আরও সামনে গিয়ে দেখি শাহবাগ থেকে পল্টন পর্যন্ত জ্যাম। কী আর করা, শেষমেশ হেটেই অফিস রওনা হলাম।

খামাড়বাড়ি এলাকায় একজন পাঠাও চালক ম্যাপ দেখছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য। কোন পথে সহজ ও যানজট কম হবে সেটি দেখছিলেন তিনি। হতাশা নিয়ে যাত্রীকে জানালেন, সব পথেই লাল হয়ে আছে ম্যাপে। তারপরেও উঠেন আল্লাহ ভরসা দেখি কয়টা বাজে।’ তার মতো অনেকেই যাত্রা শুরুর আগে মোবাইলে দেখে নিচ্ছেন কম ভোগান্তির সড়ক। তবে বেশিরভাগ সড়কই যানজট (লাল রং) দেখাচ্ছে। তবুও জরুরি প্রয়োজনে ছুটছেন সবাই।

এদিকে যানজটের সঙ্গে তীব্র গরমে মানুষের জীবন যখন হাঁসফাঁস অবস্থা তখন কিছু মানুষের আয়ের ব্যবস্থাও হয়েছে। বিশেষ করে যারা হকার তারা বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রি করছেন। ফ্রিজের ঠান্ডা পানি, আনারস, শশা বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। অনেকেই তৃষ্ণাত হয়ে পানি কিনছেন কেউ আবার গরম থেকে সুরক্ষা পেতে হাত পাখা কিনছেন।

এক ধরনের প্লাস্টিকের হাত পাখা বিক্রি করতে দেখা যায়। কারওয়ানবাজার এলাকায় হাতপাখা বিক্রেতা আলিম মিয়া বলেন, ৫০ টাকা আর ৮০ টাকা দুই ধরনের পাখা বিক্রি করছেন। গরম বেশি তাই বিক্রিও বেশ ভালো বলে জানান।

একই এলাকায় মাথায় পানি নিয়ে বিভিন্ন বাসের জানালা দিয়ে বিক্রি করছেন রহমান আলী। অনেকেই এই গরমে ঠান্ডা পানি দেখলে কিনে খেতে চায়। অনেকে বাসা থেকে পানি আনলেও সেটা গরম হয়ে যায়। তাই ঠান্ডা পানির একটা চাহিদা থাকে। যানজট থাকলে বাসে বসে মানুষতো অস্থির হয়ে যায় তাই পানির একটা ভালো বিক্রি হয়।

ভয়াবহ এই যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তরা।

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান জানিয়েছিলেন, ঢাকা অনেকদিন ফাঁকা থাকার পর হঠাৎ করে অনেক লোকজনের আগমন হয়। তখন কিন্তু একটা চাপ তৈরি হয়। পুরো নগরীতে এরকম আরও কয়েকদিন চলার পর ঠিক হয়ে যাবে। ঈদের ছুটি ও তারপরের আরও তিন দিনের বন্ধ মিলিয়ে টানা ছুটির কারণে সকলে একসঙ্গে ঢাকায় ফিরেছে। সেই চাপ পড়েছে রাজধানীর সড়কে।

ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ঈদের পরও ঢাকায় মানুষ আরামে যাতায়াত করেছেন। এরমধ্যে সব কিছু এখন খুলেছে। সড়কে চাপ শুরু হয় সকাল থেকেই। আমাদের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা মাঠ পর্যায়ে রোদে পুড়ে কাজ করছেন সড়কের শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে। আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

রাজধানীতে তীব্র যানজট, ভোগান্তিতে নাকাল নগরবাসী

প্রকাশের সময় : ০৫:২৩:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ মে ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

যানজটের পুরোনো চেহারায় ফিরেছে কর্মব্যস্ত শহর ঢাকা। রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো গাড়ির দীর্ঘ জট তৈরি হয়। গাড়ির জটে সকাল থেকে অধিকাংশ সড়ক অনেকটা অচল হয়ে পড়ে। তীব্র গরমের মধ্যে অসহনীয় যানজটের কারণে দৈনন্দিন কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

সোমবার (৮ মে) সকাল থেকে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, একটি সিগন্যাল পেরিয়ে আরেকটি সিগন্যালে পৌঁছতে লাগছে দীর্ঘ সময়। কোথাও ধীরে গাড়ি চললেও কোথাও একেবারে গাড়ি বন্ধ করে দীর্ঘ অপেক্ষা করছেন চালক-যাত্রী সবাই। তীব্র গরমের মধ্যে ভয়াবহ যানজটের কারণে ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। যদিও ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তার বলছেন মানুষ আর গাড়ির চাপ বাড়ায় যানজট বেড়েছে। তবে তারা চেষ্টা করছেন যতোটা কমিয়ে রাখা যায়।

প্রায় দুই সপ্তাহের বেশি সময় রাজধানীতে অবাধে ছুটেছে গাড়ি। ওই সময়ে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়া গেছে অল্প সময়েই। এক সপ্তাহ আগেও মোটরসাইকেলে আধা ঘণ্টায় সদরঘাট থেকে যাওয়া যেতো উত্তরায়। গণপরিপবহনে সময়টা একটু বেশি লাগতো। সেই পথ যেতে এখন সময় লাগছে দেড় ঘণ্টার বেশি। স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা আর করা যাচ্ছে না। কারণ আগের কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে ঢাকায়।

গত মাসের ১৯ এপ্রিল থেকে ঈদের ছুটি শুরুর পর থেকেই বেশ ফাঁক ছিল রাজধানী। ঈদের ছুটি শেষ করে অফিস শুরু হলেও অনেকেই বাড়তি ছুটি নিয়েছিল বলে শহরে যানজট তেমনটা ছিল না। এরপর আবার সাপ্তাহিক ছুটি, এরপর মে দিবসের ছুটি, বৌদ্ধ পূর্ণিমার সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি মিলে প্রায় ১৫ দিনের মতো একটা ছুটির আমেজ ছিল রাজধানীজুড়ে। এই সময়ে ফার্মগেট থেকে বারিধারায় যেকোনো বাহনে যাতায়াতে সময় লাগতে ১৫ মিনিট। কিন্তু চিরচেনা রূপে ফিরে আসা রাজধানীতে আজ সেই সড়কে সময় লাগছে ঘণ্টাখানেকেরও বেশি। প্রতিটি মোড়ে প্রতিটি সিগন্যালে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে যানগুলোকে।

বিজয় সরণিতে দায়িত্বরত এক সার্জেন্ট বলেন, আসলে এই যানজট শুরু হয়েছে এই সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার থেকেই। আজ সোমবারও সকাল থেকে যানজট আছে। সড়কে গাড়ির চাপ কয়েক গুণ বেড়েছে। আমরা সর্বদা চেষ্টা করছি যানজট কমানোর।

আজিমপুর থেকে গাজীপুর চলাচলরত ভিআইপি পরিবহনে চালক সোলায়মান বলেন, প্রতিদিন এই সড়কে গাড়ি চালাই। গত কয়েকদিন দুই ঘণ্টায় যাতায়াত করেছি। গতকাল রোববার প্রায় ৪ ঘণ্টা লাগছে। আজকে আজিমপুর থেকে খামাড়বাড়ি আসছি দেড় ঘণ্টায়। বলতে পারি না গাজীপুরে প্রথম ট্রিপ কয়টায় শেষ হবে।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বিজি প্রেসের সামনে মোটরসাইকেল আরোহী ইকবাল বলেন, কঠিন অবস্থা। কোনো দিক দিয়ে কুল পাচ্ছি না। সড়কে গাড়ির চাকা যেন ঘুরছেই না। প্রচন্ড গরমে হাপিত্যেশ করছি কিন্তু যানজট লেগেই থাকছে। নাবিস্কো মোড় থেকে বিজি প্রেসের সামনে আসতে পাঁচ মিনিটের পথে লেগে গেল আধা ঘণ্টা।

ভিআইপি গাড়িতে চলাচল করা কেউ উত্তরা যাবেন কেউ টঙ্গি বা গাজীপুর। যাদের অনেকের হাত পাখা নিয়ে উঠেছেন। অনেকক্ষণ এক স্থানে দাঁড়িয়ে থাকলে গাড়ির ফ্যানের বাতাসও কুলিয়ে উঠতে পাড়ছে না গরমে। ফলে এই হাত পাখার ব্যবস্থা। অনেকেই পথের হকারদের কাছ থেকে হাতপাখা কিনছেন আবার অনেককে পত্রিকা বা মোটা কাগজের অংশকেই হাতপাখা বানিয়ে বাতাস করতে দেখা যায়। প্রচণ্ড গরমে ভোগান্তি বাড়ায় অনেকেই গন্তব্যে পৌঁছাতে যানবাহন ছেড়ে হেঁটেই রওনা হন।

পান্থপথ, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, মগবাজার, বিজয় সরনি মোড়, তেজগাঁও এলাকা, সাতরাস্তা মোড়, গুলশান, কুড়িল, যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকাগুলোতে তীব্র যানজট দেখা যায়।

ফার্মগেট থেকে পাঠাও মোটরসাইকেলে মহাখালী তিতুমীর কলেজে আসেন হাসিব মিয়া। তিনি বলেন, সপ্তাহে চার দিন যাতায়াত করি। রোববার এসেছি ৪০ মিনিটের মতো লেগেছে। আজ আরও একটু বেশি লেগেছে।

সিএনজি চালক শামীম  বলেন, শেওড়াপাড়া থেকে দুই যাত্রী নিয়ে বের হয়েছি মতিঝিল যাব। আগারগাঁও সিগন্যাল পেরিয়ে নতুন রাস্তায় ওঠার মুখেই যানজটে পড়ি। সড়কের অবস্থা বেগতিক দেখে অনেক কষ্টে সামনে ইউটার্ন করে আবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনের সড়ক ধরে রওনা দেই। কিন্তু সংসদ ভবনের সামনে থেকে বিজয় সরণি যাওয়ার সড়ক একদম স্থবির। বাধ্য হয়ে খামারবাড়ি হয়ে ফার্মগেট ঢুকি। এখানেও অবস্থা খারাপ। বুঝতে পারছি না কতক্ষণে পৌঁছাব মতিঝিলে।

গুলিস্তান থেকে বনানীতে যাওয়ার জন্য আজমেরী পরিবহনে ওঠেন সামাদ হোসেন। যানজটের কারণে মহাখালীতে আসার পর বাস থেকে নেমে হাটা ধরেন বনানীর উদ্দেশ্যে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেড় ঘণ্টায় এসেছি এই পথ। গাড়িতে মানুষের ভিড় আর গরমে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলাম। মহাখালী এসে দেখি সামনে লম্বা গাড়ির সিরিয়াল। নেমে গেলাম, হেটে যাওয়াই উত্তম নয়তো গাড়িতে স্ট্রোক করবে।

মহাখালী থেকে বনানীর সড়কে, তিতুমীর কলেজ থেকে গুলশানের সড়কে অনেক যাত্রীদের হেটে যেতে দেখা যায়।

সকালে মোহাম্মদপুর থেকে পল্টনে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন সাগর আহমেদ। গত দুই সপ্তাহ তিনি মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটে পল্টনে পৌঁছলেও আজ তার সময় লেগেছে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। তিনি বলেন, সায়েন্সল্যাব পৌঁছানোর পর বাস আর যায় না। বাধ্য হয়ে বাটা সিগন্যাল অবধি গেলাম। কিন্তু আরও সামনে গিয়ে দেখি শাহবাগ থেকে পল্টন পর্যন্ত জ্যাম। কী আর করা, শেষমেশ হেটেই অফিস রওনা হলাম।

খামাড়বাড়ি এলাকায় একজন পাঠাও চালক ম্যাপ দেখছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য। কোন পথে সহজ ও যানজট কম হবে সেটি দেখছিলেন তিনি। হতাশা নিয়ে যাত্রীকে জানালেন, সব পথেই লাল হয়ে আছে ম্যাপে। তারপরেও উঠেন আল্লাহ ভরসা দেখি কয়টা বাজে।’ তার মতো অনেকেই যাত্রা শুরুর আগে মোবাইলে দেখে নিচ্ছেন কম ভোগান্তির সড়ক। তবে বেশিরভাগ সড়কই যানজট (লাল রং) দেখাচ্ছে। তবুও জরুরি প্রয়োজনে ছুটছেন সবাই।

এদিকে যানজটের সঙ্গে তীব্র গরমে মানুষের জীবন যখন হাঁসফাঁস অবস্থা তখন কিছু মানুষের আয়ের ব্যবস্থাও হয়েছে। বিশেষ করে যারা হকার তারা বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রি করছেন। ফ্রিজের ঠান্ডা পানি, আনারস, শশা বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। অনেকেই তৃষ্ণাত হয়ে পানি কিনছেন কেউ আবার গরম থেকে সুরক্ষা পেতে হাত পাখা কিনছেন।

এক ধরনের প্লাস্টিকের হাত পাখা বিক্রি করতে দেখা যায়। কারওয়ানবাজার এলাকায় হাতপাখা বিক্রেতা আলিম মিয়া বলেন, ৫০ টাকা আর ৮০ টাকা দুই ধরনের পাখা বিক্রি করছেন। গরম বেশি তাই বিক্রিও বেশ ভালো বলে জানান।

একই এলাকায় মাথায় পানি নিয়ে বিভিন্ন বাসের জানালা দিয়ে বিক্রি করছেন রহমান আলী। অনেকেই এই গরমে ঠান্ডা পানি দেখলে কিনে খেতে চায়। অনেকে বাসা থেকে পানি আনলেও সেটা গরম হয়ে যায়। তাই ঠান্ডা পানির একটা চাহিদা থাকে। যানজট থাকলে বাসে বসে মানুষতো অস্থির হয়ে যায় তাই পানির একটা ভালো বিক্রি হয়।

ভয়াবহ এই যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তরা।

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান জানিয়েছিলেন, ঢাকা অনেকদিন ফাঁকা থাকার পর হঠাৎ করে অনেক লোকজনের আগমন হয়। তখন কিন্তু একটা চাপ তৈরি হয়। পুরো নগরীতে এরকম আরও কয়েকদিন চলার পর ঠিক হয়ে যাবে। ঈদের ছুটি ও তারপরের আরও তিন দিনের বন্ধ মিলিয়ে টানা ছুটির কারণে সকলে একসঙ্গে ঢাকায় ফিরেছে। সেই চাপ পড়েছে রাজধানীর সড়কে।

ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ঈদের পরও ঢাকায় মানুষ আরামে যাতায়াত করেছেন। এরমধ্যে সব কিছু এখন খুলেছে। সড়কে চাপ শুরু হয় সকাল থেকেই। আমাদের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা মাঠ পর্যায়ে রোদে পুড়ে কাজ করছেন সড়কের শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে। আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই।