নিজস্ব প্রতিবেদক :
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতির কবি ছিলেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
রোববার (৭ মে) প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ খ্রিষ্টান যুব কল্যাণ সমিতি কর্তৃক আয়োজিত বাংলার স্থপতি নামক গ্রন্থ উন্মোচন শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন রাজনীতির কবি। তিনি (বঙ্গবন্ধু) জানতেন জনগণের কাছে কখন কি পেশ করতে হবে। জনগণের মন বুঝতেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তান সৃষ্টির পরেই তিনি দেশের স্বাধীনতার পরিকল্পনা করেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর তিনি ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেছিলেন। এতে পাকিস্তান প্রশাসন ক্ষুব্ধ হয়েছিল। তাকে আপোষ করতে বলা হলেও তিনি তা করেননি, কারণ সেটা ততোদিনে হয়ে উঠেছিল জনগণের দাবি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক বই লেখা হচ্ছে। তবে ইদানীং দেখা যাচ্ছে বইয়ে ইতিহাস বিকৃতি করা হচ্ছে, মান ঠিক থাকছে না। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত বইগুলোর নির্দিষ্ট মানদণ্ড প্রয়োজন, যেন ইতিহাস বা তথ্য বিকৃতি না হয়। বিবিসি অনলাইনে এক জরিপ করেছিল, যাতে পুরো বিশ্ব থেকে বাঙালিরা অংশগ্রহণ করেছিল। সে জরিপে উঠে এসেছিল বঙ্গবন্ধু সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতিসত্তার উন্মেষ ঘটেছিল ৫ হাজার বছর আগে। কিন্তু তারা কেউ স্বাধীন ছিল না। খণ্ড খণ্ড দু একটি রাজ্য স্বাধীন থাকলেও বেশিরভাগই ছিল পরাধীন। তবে বাঙালি জাতির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ছিল, তারা বারবার বিদ্রোহ করেছে। ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, তিতুমীর বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাসের উজ্জ্বল উদাহরণ।
তিনি বলেন, বাঙালিদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ছিল। সেই আকাঙ্ক্ষা থেকে অনেকে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে, মৃত্যুও ঘটেছে। কিন্তু স্বাধীনতা আসেনি। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক কবি ছিলেন। তিনি জানতেন, কোনো সময়ে কোনো কথাটি জনগণের সামনে পেশ করতে হবে। তিনি বুঝতেন, কিভাবে স্বাধীনতার লক্ষ্যে জাতির মনন তৈরি করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান সৃষ্টির এক বছরের মাথায় অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে বাঙালির মুক্তি নিহীত নেই। বঙ্গবন্ধু বাঙালির স্বাধীনতার পরিকল্পনা করেছিলেন পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরই। বঙ্গবন্ধু সেই পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে গেলেও, সেটি জনগণের সামনে পেশ করেননি। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা ঘোষণা করেন। এই ৬ দফা ঘোষণা করেছিলেন স্বাধীনতার জন্য বাঙালির মনন তৈরি করার জন্য।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৯৭০ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করার পর বঙ্গবন্ধুকে ৬ দফার সাথে আপস করতে বলা হয়েছে। কয়েকটি দফা বাদ দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেটা বাদ দেননি। তিনি বলেছিলেন, ৬ দফা যখন ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন সেটি ছিল আওয়ামী লীগের দফা। কিন্তু ৬ দফার ভিত্তিতে ১৯৭০ এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখন এটি আর আওয়ামী লীগের দফা নয়, এটি জনগণের দফা।
তিনি বলেন, ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের যখন সম্মেলন করা হয়, তখন সম্মেলন সঙ্গীত ছিল, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। আজকে এটিই আমাদের জাতীয় সঙ্গীত। বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছিলেন, এগুলোই হচ্ছে এর প্রমাণ। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেটি বলেননি।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তিনি এও বলেছিলেন, তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থেকো, শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে৷ বঙ্গবন্ধুর এই বক্তব্যের পর জনগণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বের হয়ে স্লোগান দিল, বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো। তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা। তোমার নেতা, আমার নেতা, শেখ মুজিব, শেখ মুজিব।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আরো বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভাষণের মধ্য দিয়ে একটি নিরস্ত্র জাতিকে স্বসস্ত্র জাতিতে রূপান্তর হওয়ার আহ্বান জানালেন বঙ্গবন্ধু। আর পাকিস্তানি গোয়েন্দা তাদের সদরদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠালো, চতুর শেখ মুজিব কার্যত পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করে দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের চেয়ে চেয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার ছিল না।
তিনি বলেন, এই যে জাতিকে ধীরে ধীরে আন্দোলিত করে স্বাধীনতার লক্ষ্যে মনন তৈরি করে চূড়ান্তভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনা, এমন উদাহরণ বিরল। আজকে আমরা সামান্য স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে পারি না। আর বঙ্গবন্ধুর আহ্বান মানুষ জীবন বিসর্জন দিতে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করতে গেছে। এ জন্যই ইতিহাসের পাতায় তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক বই লেখা হচ্ছে। তবে ইদানিং দেখা যাচ্ছে যে, বইয়ে ইতিহাস বিকৃতি করা হচ্ছে, মান ঠিক থাকছে না। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত বইগুলোর নির্দিষ্ট মানদণ্ড প্রয়োজন, যেন ইতিহাস বা তথ্য বিকৃতি না হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ২০০৭ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন ও সব রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশে না ফিরতেন, তাহলে বাংলাদেশে গণতন্ত্রও ফিরত না।
তিনি বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ পর পর তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায়, এটা যত না আওয়ামী লীগের জন্য, তার থেকে বেশি শেখ হাসিনার জন্য। আজকে তার দ্বিতীয়বার বিদেশ থেকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। কারণ ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি প্রথমবার আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দেশ পদার্পণ করেছেন।
এ সময় ইলারিশ আর. গমেজের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ড. ছাদেকুল আরেফিন মতিন, সাবেক সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার, সহকারী বিশপ থিওটনিয়াস গমেজ প্রমুখ।