Dhaka রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রত্যাবাসনের মিয়ানমার গেল রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল

কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি : 

রাখাইন রাজ্যের মংডুতে পরিবেশ-পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে গেছে। ২৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ২০ জন রোহিঙ্গা এবং পাঁচজন সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন।

শুক্রবার (৫ মে) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা টেকনাফের জেটিতে আসেন। সকাল ৯টার দিকে তারা নৌপথে স্পিডবোটে রওয়ানা দেন। যেখানে তিন নারীসহ ২০ রোহিঙ্গা, একজন অনুবাদক এবং ছয়জন বিভিন্ন দপ্তরের বাংলাদেশি কর্মকর্তা রয়েছেন। পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তার জন্য দুটি স্পিডবোটসহ ১৬ জন বিজিবির সদস্য রয়েছেন।

এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমরা রাখাইনের উদ্দেশে রওনা হয়েছি। খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য যাওয়া হচ্ছে। মূলত দেশটির সরকার সম্ভব্য প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের জন্য যেসব সেন্টার নির্মাণ করেছে সেগুলো দেখানোর পাশাপাশি সেখানকার পরিস্থিতি দেখতে রাখাইনে যাওয়া। ফেরার পর বিস্তারিত বলা যাবে।

প্রতিনিধি দলের সঙ্গে থাকা অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (উপ-সচিব) খালিদ হোসেন বলেন, তিন নারীসহ রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল নিয়ে আমরা রাখাইনের মংডুতে ৯টার পর রওনা হয়েছি। বিকালে ফেরার কথা রয়েছে। সেদেশে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন অনুকূল পরিবেশ দেখতে এই যাত্রা।

রাখাইনে সফরে থাকা রোহিঙ্গা মো. সেলিম জানান, সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা মিয়ানমারের রাখাইনে রওনা দিয়েছি। মূলত আমরা সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি করা সেন্টারগুলো দেখবো। এছাড়া সেখানকার আশপাশের পরিস্থিতিও ঘুরে দেখার কথা রয়েছে। এ যাত্রা আনন্দের কারণ প্রায় ছয় বছর পর অন্তত নিজ দেশ দেখার সুযোগ হবে।

এই উদ্যোগ রোহিঙ্গাদের জন্য ভালো জানিয়ে টেকনাফের শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মো. কাশেম বলেন, সে দেশের পরিস্থিতি কতটা অনুকূলে তা প্রতিনিধি দল রাখাইন ঘুরে এলে আরও পরিষ্কার হবে। তবে আমরা যারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এ দেশে আশ্রয় নিয়েছি, তারা সবাই সে দেশে ফিরতে ইচ্ছুক। অন্য কোনো জায়গায় না।

প্রতিনিধিদলটি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে প্রস্তুতি ও সেখানকার পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করবে বলে জানা গেছে। একই দিন সন্ধ্যা নাগাদ তারা আবার ফিরে আসবে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।

মূলত প্রত্যাবাসন হলে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের যেখানে রাখা হবে, প্রতিনিধিদল সেই জায়গাটি পরিদর্শন করবে বলে জানা গেছে।

এর আগে রোহিঙ্গাদের তালিকা যাচাই-বাছাই করতে গত ১৫ মার্চ টেকনাফ হয়ে বাংলাদেশে আসেন মিয়ানমার সরকারের ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলটি টানা সাত দিন টেকনাফের স্থল বন্দর রেস্টহাউসে অবস্থান করে বাংলাদেশে আশ্রিত ১৪৭ রোহিঙ্গা পরিবারের মোট ৪৮৬ রোহিঙ্গার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন এবং তাদের দেওয়া বক্তব্য রেকর্ড করেন।

২২ মার্চ সকালে প্রতিনিধি দলটি নাফ নদী পার হয়ে মিয়ানমারে ফিরে যায়। ওই সময় মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যাদের প্রত্যাবাসন করা হবে সেই সব রোহিঙ্গা যাতে প্রত্যাবাসনের আগে রাখাইনের সার্বিক পরিবেশ স্বচক্ষে দেখে আসতে পারে তার ব্যবস্থা করতে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে গেল।

জানা গেছে, এর আগে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের কাছে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গার একটি তালিকা পাঠানো হয়। ওই তালিকা থেকে ফেরত নিতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথম দফায় প্রায় ১ হাজার ১৪০ জনকে নির্ধারণ করে মিয়ানমার। সেখান থেকে ৪২৯ জনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল দেশটি। পরে গত ১৫ মার্চ ১৯ সদস্যদের একটি টেকনিক্যাল টিম বাংলাদেশের টেকনাফে এসে ১৭৭ রোহিঙ্গা পরিবারের ৪৮০ জনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মিয়ানমারে ফিরে যায়।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সেনা অভিযান এবং রাখাইন প্রদেশে গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণভয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এরপর ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রথম সময়সীমা ঠিক হলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি বলে ঘোষণা দেওয়ায় সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো উদ্যোগ নিলেও এ বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও অগ্রগতি হয়নি। সর্বশেষ তৃতীয়বারের মতো সম্ভাব্য প্রত্যানাসনের এই কার্যক্রম চলমান।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

কেয়ামত পর্যন্ত জামায়াত ক্ষমতায় আসতে পারবে না : গয়েশ্বর

প্রত্যাবাসনের মিয়ানমার গেল রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল

প্রকাশের সময় : ১২:৫৭:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ মে ২০২৩

কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি : 

রাখাইন রাজ্যের মংডুতে পরিবেশ-পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে গেছে। ২৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ২০ জন রোহিঙ্গা এবং পাঁচজন সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন।

শুক্রবার (৫ মে) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা টেকনাফের জেটিতে আসেন। সকাল ৯টার দিকে তারা নৌপথে স্পিডবোটে রওয়ানা দেন। যেখানে তিন নারীসহ ২০ রোহিঙ্গা, একজন অনুবাদক এবং ছয়জন বিভিন্ন দপ্তরের বাংলাদেশি কর্মকর্তা রয়েছেন। পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তার জন্য দুটি স্পিডবোটসহ ১৬ জন বিজিবির সদস্য রয়েছেন।

এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমরা রাখাইনের উদ্দেশে রওনা হয়েছি। খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য যাওয়া হচ্ছে। মূলত দেশটির সরকার সম্ভব্য প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের জন্য যেসব সেন্টার নির্মাণ করেছে সেগুলো দেখানোর পাশাপাশি সেখানকার পরিস্থিতি দেখতে রাখাইনে যাওয়া। ফেরার পর বিস্তারিত বলা যাবে।

প্রতিনিধি দলের সঙ্গে থাকা অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (উপ-সচিব) খালিদ হোসেন বলেন, তিন নারীসহ রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল নিয়ে আমরা রাখাইনের মংডুতে ৯টার পর রওনা হয়েছি। বিকালে ফেরার কথা রয়েছে। সেদেশে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন অনুকূল পরিবেশ দেখতে এই যাত্রা।

রাখাইনে সফরে থাকা রোহিঙ্গা মো. সেলিম জানান, সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা মিয়ানমারের রাখাইনে রওনা দিয়েছি। মূলত আমরা সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি করা সেন্টারগুলো দেখবো। এছাড়া সেখানকার আশপাশের পরিস্থিতিও ঘুরে দেখার কথা রয়েছে। এ যাত্রা আনন্দের কারণ প্রায় ছয় বছর পর অন্তত নিজ দেশ দেখার সুযোগ হবে।

এই উদ্যোগ রোহিঙ্গাদের জন্য ভালো জানিয়ে টেকনাফের শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মো. কাশেম বলেন, সে দেশের পরিস্থিতি কতটা অনুকূলে তা প্রতিনিধি দল রাখাইন ঘুরে এলে আরও পরিষ্কার হবে। তবে আমরা যারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এ দেশে আশ্রয় নিয়েছি, তারা সবাই সে দেশে ফিরতে ইচ্ছুক। অন্য কোনো জায়গায় না।

প্রতিনিধিদলটি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে প্রস্তুতি ও সেখানকার পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করবে বলে জানা গেছে। একই দিন সন্ধ্যা নাগাদ তারা আবার ফিরে আসবে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।

মূলত প্রত্যাবাসন হলে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের যেখানে রাখা হবে, প্রতিনিধিদল সেই জায়গাটি পরিদর্শন করবে বলে জানা গেছে।

এর আগে রোহিঙ্গাদের তালিকা যাচাই-বাছাই করতে গত ১৫ মার্চ টেকনাফ হয়ে বাংলাদেশে আসেন মিয়ানমার সরকারের ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলটি টানা সাত দিন টেকনাফের স্থল বন্দর রেস্টহাউসে অবস্থান করে বাংলাদেশে আশ্রিত ১৪৭ রোহিঙ্গা পরিবারের মোট ৪৮৬ রোহিঙ্গার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন এবং তাদের দেওয়া বক্তব্য রেকর্ড করেন।

২২ মার্চ সকালে প্রতিনিধি দলটি নাফ নদী পার হয়ে মিয়ানমারে ফিরে যায়। ওই সময় মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যাদের প্রত্যাবাসন করা হবে সেই সব রোহিঙ্গা যাতে প্রত্যাবাসনের আগে রাখাইনের সার্বিক পরিবেশ স্বচক্ষে দেখে আসতে পারে তার ব্যবস্থা করতে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে গেল।

জানা গেছে, এর আগে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের কাছে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গার একটি তালিকা পাঠানো হয়। ওই তালিকা থেকে ফেরত নিতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথম দফায় প্রায় ১ হাজার ১৪০ জনকে নির্ধারণ করে মিয়ানমার। সেখান থেকে ৪২৯ জনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল দেশটি। পরে গত ১৫ মার্চ ১৯ সদস্যদের একটি টেকনিক্যাল টিম বাংলাদেশের টেকনাফে এসে ১৭৭ রোহিঙ্গা পরিবারের ৪৮০ জনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মিয়ানমারে ফিরে যায়।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সেনা অভিযান এবং রাখাইন প্রদেশে গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণভয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এরপর ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রথম সময়সীমা ঠিক হলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি বলে ঘোষণা দেওয়ায় সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো উদ্যোগ নিলেও এ বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও অগ্রগতি হয়নি। সর্বশেষ তৃতীয়বারের মতো সম্ভাব্য প্রত্যানাসনের এই কার্যক্রম চলমান।