Dhaka সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রতিটি সড়কই ভাঙা, খাল পারাপারে সাঁকোই ভরসা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বরিশাল সিটি করপোরেশনের উত্তরাংশে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডটি লাকুটিয়া সড়কের দুই প্রান্তে অবস্থিত। আছে কাঁচা রাস্তাও। বর্ষা মৌসুমে এসব সড়ক কর্দমাক্ত হয়ে যায়। নালাব্যবস্থা অপ্রতুল হওয়ায় বর্ষার সময় অনেক এলাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ওয়ার্ডটিতে রাস্তাঘাট, নাগরিক সুবিধা বলতে তেমন কিছুই নেই। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনে জনপ্রতিনিধির পরিবর্তন হলেও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি ওয়ার্ডবাসীর।

বরিশাল নগরীর লাকুটিয়া সড়ক এলাকার বাবরি মসজিদ, মতাসা কলোনি, বাঘিয়া, ঝাউতলা, জাবের দিঘিরপাড়, ইছাকাঠি কলোনি এলাকা নিয়ে গঠিত সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে মোট ভোটার ১৩ হাজার ১৮৪ জন।

২০ এপ্রিল সরেজমিনে দেখা যায়, এই ওয়ার্ডের অভ্যন্তরীণ একমাত্র লাকুটিয়া সড়ক ছাড়া বাকি প্রতিটি সড়কই ভাঙাচোরা, অনুন্নত। সংস্কারের অভাবে রাস্তাগুলো ভেঙেচুরে চলাচল অনুপযোগী হয়ে আছে। আছে কাঁচা রাস্তাও। বর্ষা মৌসুমে এসব সড়ক কর্দমাক্ত হয়ে যায়। নালাব্যবস্থা অপ্রতুল হওয়ায় বর্ষার সময় অনেক এলাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এতে ব্যাহত হয় জীবনযাত্রা।

বাঘিয়া মাদ্রাসা এলাকার আশপাশের নিচু স্থানগুলোর কোনো কোনো জায়গায় বর্তমানে শুকনো মৌসুমেও পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।

বাঘিয়া সরদারবাড়ির বাসিন্দা আইয়ুব আলী সরদার বলেন, আমাদের সরদারবাড়ি বহু বছরের পুরোনো। এখানে ২৮টি বাড়ি রয়েছে। একমাত্র সড়কবাতি ছাড়া সিটি করপোরেশন থেকে কোনো নাগরিক সেবাই পাচ্ছি না আমরা। বরং সিটি করপোরেশন থেকে করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে আমাদের ওপর।

লাকুটিয়া সড়ক থেকে সরদারবাড়ি পর্যন্ত ইট-সুরকি দিয়ে তৈরি একটি সরু রাস্তা রয়েছে। এ ছাড়া সরদারবাড়ির ভেতর থেকে মতাসার পর্যন্ত রয়েছে আরও একটি রাস্তা। দুটি রাস্তার একটিও যান চলাচলের উপযোগী নয়।

এ ব্যাপারে আয়ুব আলী সরদার বলেন, ২০ বছর ধরে আমরা এই রাস্তা সংস্কার করার জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কাছে ধরনা দিয়েছি। এর আগে বেশ কয়েকবার রাস্তা মেপেও গেছে সিটি করপোরেশন থেকে। মাস কয়েক আগে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহও রাস্তাটি এসে দেখে গেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সংস্কার হয়নি। ফলে বর্ষা মৌসুম এলে কতটা দুর্ভোগে আমরা থাকি, সেটা বলে বোঝানো যাবে না।

একই বাড়ির বাসিন্দা খোকন সরদার বলেন, প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণের আমলে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সরদারবাড়ি থেকে মতাসার পর্যন্ত সড়কের কিছু অংশ নির্মাণ করা হয়। এরপর বাকি অংশের আর কাজ করানো হয়নি। সেই অবস্থাতেই সড়কটি পড়ে আছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, কাউনিয়া বিসিক ২ নম্বর পুল থেকে বাঘিয়া ঝাউতলা বা মুসলিম গোরস্থান পর্যন্ত লাকুটিয়া খালের অপর প্রান্তে শতাধিক শ্রমজীবী পরিবারের বসবাস। তবে খাল পারাপারের জন্য তাদের জন্য নেই পর্যাপ্ত সেতুর ব্যবস্থা। গাছ, কাঠ আর বাঁশের সাঁকোই তাদের একমাত্র ভরসা। বহুবার সেতুর জন্য দাবি তুললেও প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ জনপ্রতিনিধিরা।

উত্তর বাঘিয়া আন্ধিরপাড় এলাকার বাসিন্দা ফিরোজা বেগম বলেন, মোরা আন্ধিরপাড়ের মানুষ এক্কেবারেই অসহায়।’ একই এলাকার বাসিন্দা মিনারা বেগম বলেন, ‘নির্বাচনে অইছে পর হইতে কাউন্সিলর মোগো কোনো খোঁজখবর নেয় নাই। ভোডের কালে আইয়া অনেক ওয়াদা কইর‌্যা গেছে। কিন্তু কামে-কাইজে হ্যার কিছুই দেহি না।

২৯ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ফরিদ আহমেদ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাশিদা পারভীন। ওয়ার্ডের সমস্যা ও উন্নয়নের বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার চেষ্টা করার পরও ফরিদ আহমেদ ফোন ধরেননি। সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাশিদা পারভীন বলেন, মেয়র বরাদ্দ না দিলে আমরা কাজ করব কীভাবে। করপোরেশনেই কোনো বরাদ্দ আসেনি গত পাঁচ বছরে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে চলাচলে অনুপযোগী, দুর্ভোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

প্রতিটি সড়কই ভাঙা, খাল পারাপারে সাঁকোই ভরসা

প্রকাশের সময় : ০২:১০:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বরিশাল সিটি করপোরেশনের উত্তরাংশে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডটি লাকুটিয়া সড়কের দুই প্রান্তে অবস্থিত। আছে কাঁচা রাস্তাও। বর্ষা মৌসুমে এসব সড়ক কর্দমাক্ত হয়ে যায়। নালাব্যবস্থা অপ্রতুল হওয়ায় বর্ষার সময় অনেক এলাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ওয়ার্ডটিতে রাস্তাঘাট, নাগরিক সুবিধা বলতে তেমন কিছুই নেই। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনে জনপ্রতিনিধির পরিবর্তন হলেও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি ওয়ার্ডবাসীর।

বরিশাল নগরীর লাকুটিয়া সড়ক এলাকার বাবরি মসজিদ, মতাসা কলোনি, বাঘিয়া, ঝাউতলা, জাবের দিঘিরপাড়, ইছাকাঠি কলোনি এলাকা নিয়ে গঠিত সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে মোট ভোটার ১৩ হাজার ১৮৪ জন।

২০ এপ্রিল সরেজমিনে দেখা যায়, এই ওয়ার্ডের অভ্যন্তরীণ একমাত্র লাকুটিয়া সড়ক ছাড়া বাকি প্রতিটি সড়কই ভাঙাচোরা, অনুন্নত। সংস্কারের অভাবে রাস্তাগুলো ভেঙেচুরে চলাচল অনুপযোগী হয়ে আছে। আছে কাঁচা রাস্তাও। বর্ষা মৌসুমে এসব সড়ক কর্দমাক্ত হয়ে যায়। নালাব্যবস্থা অপ্রতুল হওয়ায় বর্ষার সময় অনেক এলাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এতে ব্যাহত হয় জীবনযাত্রা।

বাঘিয়া মাদ্রাসা এলাকার আশপাশের নিচু স্থানগুলোর কোনো কোনো জায়গায় বর্তমানে শুকনো মৌসুমেও পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।

বাঘিয়া সরদারবাড়ির বাসিন্দা আইয়ুব আলী সরদার বলেন, আমাদের সরদারবাড়ি বহু বছরের পুরোনো। এখানে ২৮টি বাড়ি রয়েছে। একমাত্র সড়কবাতি ছাড়া সিটি করপোরেশন থেকে কোনো নাগরিক সেবাই পাচ্ছি না আমরা। বরং সিটি করপোরেশন থেকে করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে আমাদের ওপর।

লাকুটিয়া সড়ক থেকে সরদারবাড়ি পর্যন্ত ইট-সুরকি দিয়ে তৈরি একটি সরু রাস্তা রয়েছে। এ ছাড়া সরদারবাড়ির ভেতর থেকে মতাসার পর্যন্ত রয়েছে আরও একটি রাস্তা। দুটি রাস্তার একটিও যান চলাচলের উপযোগী নয়।

এ ব্যাপারে আয়ুব আলী সরদার বলেন, ২০ বছর ধরে আমরা এই রাস্তা সংস্কার করার জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কাছে ধরনা দিয়েছি। এর আগে বেশ কয়েকবার রাস্তা মেপেও গেছে সিটি করপোরেশন থেকে। মাস কয়েক আগে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহও রাস্তাটি এসে দেখে গেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সংস্কার হয়নি। ফলে বর্ষা মৌসুম এলে কতটা দুর্ভোগে আমরা থাকি, সেটা বলে বোঝানো যাবে না।

একই বাড়ির বাসিন্দা খোকন সরদার বলেন, প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণের আমলে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সরদারবাড়ি থেকে মতাসার পর্যন্ত সড়কের কিছু অংশ নির্মাণ করা হয়। এরপর বাকি অংশের আর কাজ করানো হয়নি। সেই অবস্থাতেই সড়কটি পড়ে আছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, কাউনিয়া বিসিক ২ নম্বর পুল থেকে বাঘিয়া ঝাউতলা বা মুসলিম গোরস্থান পর্যন্ত লাকুটিয়া খালের অপর প্রান্তে শতাধিক শ্রমজীবী পরিবারের বসবাস। তবে খাল পারাপারের জন্য তাদের জন্য নেই পর্যাপ্ত সেতুর ব্যবস্থা। গাছ, কাঠ আর বাঁশের সাঁকোই তাদের একমাত্র ভরসা। বহুবার সেতুর জন্য দাবি তুললেও প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ জনপ্রতিনিধিরা।

উত্তর বাঘিয়া আন্ধিরপাড় এলাকার বাসিন্দা ফিরোজা বেগম বলেন, মোরা আন্ধিরপাড়ের মানুষ এক্কেবারেই অসহায়।’ একই এলাকার বাসিন্দা মিনারা বেগম বলেন, ‘নির্বাচনে অইছে পর হইতে কাউন্সিলর মোগো কোনো খোঁজখবর নেয় নাই। ভোডের কালে আইয়া অনেক ওয়াদা কইর‌্যা গেছে। কিন্তু কামে-কাইজে হ্যার কিছুই দেহি না।

২৯ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ফরিদ আহমেদ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাশিদা পারভীন। ওয়ার্ডের সমস্যা ও উন্নয়নের বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার চেষ্টা করার পরও ফরিদ আহমেদ ফোন ধরেননি। সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাশিদা পারভীন বলেন, মেয়র বরাদ্দ না দিলে আমরা কাজ করব কীভাবে। করপোরেশনেই কোনো বরাদ্দ আসেনি গত পাঁচ বছরে।