ভোলা জেলা প্রতিনিধি :
ভোলা সদরের পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নে পাওয়া নতুন কূপ ইলিশা-১ থেকে পরীক্ষামূলক গ্যাস উত্তোলন শুরু করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)।
শুক্রবার (২৭ এপ্রিল) সকাল ৭টা থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু করা হয়। বাপেক্সের তত্ত্বাবধায়নে গ্যাস তোলার কাজ করছে রাশিয়ার তেল-গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রম।
বাপেক্সের ধারণা, দৈনিক এই কূপে ২০-২২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। এতে ১৮০-২০০ বিসিএফ ঘনফুট গ্যাসের মজুত আছে। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতে আরও সময় লাগবে বলে জানালেন বাপেক্সের কর্মকর্তারা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১৫ মে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্যাস উত্তেলন করবে তারা।
ভোলার শাহবাজপুর ও ভোলা নর্থ নামের আলাদা দুটি গ্যাসক্ষেত্রে ৯টি কূপ খনন করা হয়। এসব কূপে মোট গ্যাস মজুদের পরিমাণ ১.৭ টিসিএফ ঘনফুট বলে নিশ্চিত করেছে বাপেক্স। এরআগে গত ৯ মার্চ ইলিশা-১ নামের এ কূপের খনন কাজ শুরু করে বাপেক্সের প্রতিনিধি দল। গ্যাসের সম্ভাবনা যাচাই করতে আগামী অক্টোবর থেকে নতুন করে তেল গ্যাস অনুসন্ধান করবে বাপেক্সের ভূ-তাত্ত্বিক বিভাগ।
গত ৯ মার্চ ভোলা সদরের পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নে মালেরহাট সংলগ্ন এলাকায় ইলিশা-১ নামের কূপ খনন শুরু করেছিল গ্যাজপ্রম। ২৪ এপ্রিল কূপের খননকাজ শেষ হয়। কূপে খননকাজ শুরুর দেড় মাসের মাথায় উত্তোলন শুরু হয়।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানির (বাপেক্স) ভূ-তাত্ত্বিক বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেন।
তিনি বলেন, এখন পরীক্ষামূলক কাজ চলছে। মাটির তিন হাজার ৪৩৩ মিটার গভীরতায় গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। এটি প্রায় চার কিলোমিটার বিস্তৃত। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১৫ মে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্যাস উত্তোলন শুরু হবে।
এ ব্যাপারে তরুন উদ্যোক্তা আকতার হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি ভোলার গ্যাসের ওপর নির্ভর করে করে যেন এখানে শিল্প কারখানা করা হয়। তাহলে উদ্যোক্তা এগিয়ে আসবে। তখন নতুন করে সম্ভাবনা তৈরি হবে। ভোলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
ভোলা স্বার্থরক্ষা কমিটির সদস্য সচিব আমিতাব অপু বলেন, ভোলায় একের পর এক গ্যাস আবিষ্কৃত হলেও জনগণ সুফল পাচ্ছে না। আমাদের দাবি ভোলার কাজকে কাজে লাগিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করা হোক।
গ্যাস বাচাও আন্দোলন কমিটির সদস্য অবিনাশ নন্দি বলেন, আমারা চাই ভোলার গ্যাস ভোলাতে ব্যবহার হোক। জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যস্থানে গেলে আমাদের আপত্তি নেই। তবে তার আগে অবশ্যই ভোলার আবাসিক ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে।
বাপেক্সের এমডি মো: আলী বলেন, এখনো গ্যাস টেস্টিং চলছে, এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না এখানে ঠিক কী পরিমাণ গ্যাস রয়েছে। কূপের আনুসাঙ্গিক কাজ সম্পন্ন হলে তা বলা যাবে।
তিনি আরো বলেন, খুব শিগগিরই ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১২ জেলায় তেল গ্যাস অনুসন্ধান করবে বাপেক্স। আমি আশা করছি ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলায় বিপুল পরিমাণ গ্যাসের মজুদ রয়েছে। বাপেক্সের অন্য আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, ভোলাতে প্রচুর পরিমাণে প্রকৃতিক গ্যাস রয়েছে। সে সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে নতুন করে আরো ৫টি কূপ খনন করা হবে। খুব শিগগিরই সেটি শুরু হবে।
বাপেক্সের তথ্যমতে, ১৯৮৬ সালে ভোলায় একটি দ্বিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপের মাধ্যমে শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া যায়। পেট্রোবাংলা ১৯৮৭ সালে তৃতীয় ধাপে আরেকটি ভূকম্পন জরিপ পরিচালনা করে। জরিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৩-৯৪ সালে শাহবাজপুর-১ গ্যাসক্ষেত্রে খনন কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর সদর ও বোরহানউদ্দিন উপজেলায় মোট আটটি কূপ খনন করা হয়। ইলিশা-১ নিয়ে মোট নয়টি কূপে গ্যাস মজুতের বিষয়টি নিশ্চিত হলো। এতে মজুতের পরিমাণ প্রায় ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।