স্পোর্টস ডেস্ক :
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাংলাদেশ ক্রিকেটের অসংখ্য জয়ের সারথি। বর্তমানে জাতীয় দলের বাইরে রয়েছেন এই সিনিয়র ক্রিকেটার। বিশ্রামের কথা বলে কি তবে এক প্রকার দল থেকেই বাদ দেওয়া হয়েছে ডানহাতি এই ব্যাটারকে। এমন প্রশ্ন যখন চারপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে ঠিক তখনই রিয়াদ ভক্তদের জন্য এক প্রকার দুঃসংবাদ দিলেন বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন।
বর্তমান প্রজন্মের মুনিম শাহরিয়ার, তাওহিদ হৃদয়, তানজিদ তামিম, হাবিবুর রহমান সোহান প্রমুখের মতো আগের প্রজন্মেও খালেদ মাহমুদ সুজনের শিষ্যের সংখ্যা প্রচুর। এখন যার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে, সেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও তার হাত ধরেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন।
একটা সময় রিয়াদকে তার জ্যেষ্ঠ শিষ্য বলেই ভাবা হতো। ক্রিকেট পাড়ায় অনেকে রিয়াদকে সে নামেই ডাকেন। এখনও ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাকি মাস ছয়েকের মতো। তার প্রিয় শিষ্য কি বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পাবেন? তাকে দলে নেওয়া কি ঠিক হবে?
বয়স মধ্য তিরিশ পেরিয়ে ৩৭-এ এসে দাঁড়িয়েছে। শরীরের ক্ষিপ্রতা, চপলতাও কমে গেছে। ব্যাটিং ফর্মও আগের মতো নেই। অনেকটাই ফিকে, অনুজ্জ্বল। সব মিলিয়েই জাতীয় দলের টিম ম্যানেজমেন্ট রিয়াদকে আপাতত ওয়ানডে দল থেকেও বাইরে রেখেছেন।
চলতি বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে সর্বশেষ জাতীয় দলের হয়ে খেলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এরপর আর জাতীয় দলের জার্সিতে দেখা যায়নি অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারকে। ঘরের মাটিতে আয়ারল্যান্ড সিরিজে ছিলেন না টাইগার স্কোয়াডে। এরপর আসন্ন ইংল্যান্ডের মাটিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ফিরতি সিরিজের ঘোষিত দলেও নেই রিয়াদ।
নির্বাচকরা মুখে বলছেন রিয়াদ বিশ্রামে। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বিশ্বকাপের চিন্তায় নেই রিয়াদ। তবে কি রিয়াদ অধ্যায় শেষ!
এসব জল্পনা-কল্পনা আছে রিয়াদভক্ত ও ক্রিকেট অনুরাগীদের মনে। তবে রিয়াদের গুরু ও মেন্টর খালেদ মাহমুদ সুজন তাকে বিশ্বকাপ দলে দেখছেন না আপাতত। বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) মিরপুর শেরে বাংলায় উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে আলাপে রিয়াদ প্রসঙ্গে সুজন বলেন, রিয়াদ আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার অবশ্যই। বাংলাদেশ দলকে সে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছে। কিন্তু যদি আমি সত্যি বলি, যেহেতু ও জাতীয় দলে নেই, আমি যেভাবে দেখছি, রিয়াদকে আমি বিশ্বকাপে দেখছি না।
কেন দেখছেন না? তার ব্যাখ্যায় সুজন বলেন, যেহেতু ও জাতীয় দলে নেই, আমি যেভাবে দেখছি। কারণ, যদি তাকে বিশ্বকাপে দেখতাম, তাহলে এই সিরিজগুলোতে সে থাকতো। হয়তো হৃদয় ভালো করছে, আফিফও এখন দলে নেই। তারপরও সুপার লিগের ম্যাচগুলোতে রিয়াদ নিজেকে কীভাবে মেলে ধরে সেটাও দেখার বিষয়।’
তিনি আরো বলেন, রিয়াদ যখনই খেলেছে বাংলাদেশের জন্য, খুব গুরত্বপূর্ণ একটা জায়গায়। যেখানে আপনি হিরোও হতে পারেন, জিরোও হতে পারেন। রিয়াদ হয়তো দুটির স্বাদই পেয়েছে। ওর অনেক ম্যাচ আছে যেগুলো একাই জিতেছে। আসলে মূল কথা হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতিটা আসল। রিয়াদকে দলে কতটুকু দরকার বা ওর বদলে যারা খেলছে পারফর্ম করছে কি না। যদি পারফর্ম করে, দল যদি সন্তুষ্ট থাকে; তাহলে রিয়াদের সুযোগ কম থাকবেই। যদি ওরকম না হয়, রিয়াদের অভিজ্ঞতা তো আছেই। যেকোনো সময় ব্যাক করলে পারফর্ম করতে পারবে সেটা আমরা সবাই বিশ্বাস করি। সময় তো আছে, একদমই রিয়াদ যে বাহির হয়ে গেছে তা না। কিন্তু আমার মনে হয় বিশ্বকাপের আগে হঠাৎ আনা ঠিক হবে না। তার আগেই ওকে এনে সিরিজ ও ম্যাচ দিতে হবে।
রিয়াদের সোনালি অতীতের প্রশংসা করে সুজন বলেন, রিয়াদ আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার অবশ্যই। বাংলাদেশ দলকে সে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছে।
রিয়াদ অনেক ম্যাচ একাই জিতিয়েছে। তা স্বীকার করে সুজন বলেন, কিন্তু মূল কথা হচ্ছে, বর্তমান পরিস্থিতিটাই আসল। রিয়াদকে দলে কতটুকু দরকার বা ওর পরিবর্তে যারা খেলছে, তারা পারফর্ম করছে কি না। যদি পারফর্ম করে, তাদের পারফরম্যান্সে দল যদি সন্তুষ্ট থাকে; তাহলে রিয়াদের সুযোগ কম থাকবেই। যদি ওরকম না হয় তবেই কেবল রিয়াদের কথা ভাবা হবে। তার অভিজ্ঞতা তো আছেই। যেকোনো সময় ব্যাক করলে পারফর্মও করতে পারবে- সেটা আমরা সবাই বিশ্বাস করি।
ওপরের কথা শুনে মনে হতে পারে, তাহলে বুঝি রিয়াদের বিশ্বকাপে খেলার কোনো সম্ভাবনাই দেখছেন না সুজন।
নাহ! তার শেষ কথা একটু ভিন্ন। সেখানে একদম শেষ বলতে নারাজ সুজন। তাই মুখে এমন কথা, সময় তো আছে, একদমই রিয়াদ যে বের হয়ে গেছে তা নয়; কিন্তু আমার মনে হয় বিশ্বকাপের আগে হঠাৎ আনা ঠিক হবে না। তার আগেই ওকে এনে সিরিজ ও ম্যাচ দিতে হবে।
সেই সাথে মোহামেডানের হয়ে প্রিমিয়ার ক্রিকেটের সুপার লিগে রিয়াদ কেমন করেন! তা দেখতেও মুখিয়ে সুজন। সুপার লিগের ম্যাচগুলোতে রিয়াদ নিজেকে কীভাবে মেলে ধরে সেটাও দেখার বিষয়।
মাহমুদউল্লাহর সামনে এখন একটাই সুযোগ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে (ডিপিডিসিএল) নিজেকে মেলে ধরা। যদিও প্রথম রাউন্ডে মোহামেডানের হয়ে খেলা এই ক্রিকেটারের ব্যাট ঠিক মতো হাসেনি। ১১ ম্যাচে ২৮.৪০ গড়ে তার রান ২৮৪। ৩টি ফিফটি, সর্বোচ্চ রান ৭১। সামনে আছে সুপার লিগ, এখানে কি মাহমুদউল্লাহ নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে পারবেন?