Dhaka শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লামায় এলজিইডির সড়ক নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বান্দরবানে ঠিকাদার প্রকৌশলী জোকসাজসে সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। জেলার লামা উপজেলার ৬ নাম্বার রূপসী পাড়া ইউনিয়নের লামার মুখ হতে শিলের তোয়া নির্মাণাধীন এই সড়কটির প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর বান্দরবান জেলা অফিসের অধীনস্থ লামা উপজেলা অফিস।

সরেজমিনে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) লামা ও বান্দরবান অফিসের জোকসাজসে এসি ও ইউটি কনস্ট্রাকশন নামে এ দুই ঠিকাদারী লাইসেন্সের ঠিকাদাররা সড়ক নির্মাণে প্রকাশ্য এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট ও প্রকৌশলীর সামনেই সড়কে নিন্মমানের ইট ও সলিংয়ের নিচে বালু ফিলিং না করে পাহাড়ের লাল মাটির উপরে ইট বসিয়ে সড়ক নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও কালবাট ও ড্রেন নির্মাণে স্থানীয় ছড়া-ঝিড়র নিন্মমানের বালু, পরিমাণে চেয়ে কম সিমেন্ট এবং অপরিচ্ছন্নভাবে ময়লা আবর্জনাসহ তড়িঘড়ি করে ঢালাই কাজ চালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট এলজিইডির কর্মকর্তাদের উপরে চরম ক্ষুব্ধ।

এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর ত্রিহিল প্রজেক্টের ডিডিআরআইপি প্রকল্পের অর্থায়নে ৩ কি.মি ৫০০ মিটার ব্রিক সলিং সড়কটি ৬ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কাজটি কার্যাদেশ পায় এসি ও ইউটি কনস্ট্রাকশন। তবে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন বান্দরবানের স্থানীয় ঠিকাদার নুরুল আবছার।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে এক জন ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট উপস্থিত থাকা অবস্থায় সড়কের সলিংয়ে নিন্মমানের ইট ব্যবহার করে আসছে। এছাড়া সলিংয়ের নিচে বালু ফিলিং না করে পাহাড়ের লাল মাটির উপরেই ইট বসিয়ে সড়ক নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছে। এ সড়কটি আগামী বর্ষা মৌসুমে বেশ কয়েকটি স্থানে ধসে পড়ে অকার্যকর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকার সচেতন মহল এ সড়কটি নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতির ব্যাপারে এলজিইডি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ সড়কের কাজে দায়িত্বরত ঠিকাদারের মামা শাহ আলম বলেন, আমি অন্য আরেকটি সাইটে কাজ করছি। এই সড়কের কাজে এখন দায়িত্বে আছে খোরশেদ। সে কিভাবে কাজ করছে সেটা আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে এলজিইডি’র লামা উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবু হানিফ জানান, ইটের মান নিয়ে যখনই অভিযোগ এসেছে আমরা গিয়ে ইটগুলো সরিয়ে দিয়েছি। ট্রাকে করে আনা কিছু খারাব ইট ফেরতও দেওয়া হয়েছে। তারপরেও অনেকগুলো নিন্মমানের ইট সড়কে লাগানো হয়েছে সেগুলো তুলে ফেলার ব্যবস্থা করব। আমাদের অফিসের জনবল না থাকার কারণে আমরা সব কাজ ঠিকভাবে দেখাশোনা করতে পারছি না।

সড়কে পাহাড়ের লাল মাটি ব্যবহারের ব্যাপারে তিনি বলেন, ইস্টিমিতে বালু ধরা নাই। আমাদের নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের সাথে আলাপ করলে তিনি বলছেন পাহাড়ের মাটি সলিংয়ের ইটের উপরে ব্যবহার করতে। বালুর চেয়ে মাটি ব্যবহারে কাজ দেবে ভালো তাই ঠিকাদারের উপরে আমাদের করাকরি নেই বলে জানান তিনি।

বান্দরবান জেলা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম মজুমদার বলেন, আমাদের এলজিইডি’র সড়কের কাজগুলি সড়ক বিভাগ বা উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ে অনেক ভালো হয়। বান্দরবানে কোন বালু মহাল না থাকার কারণে আমাদের পাহাড়ের মাটি ব্যবহার করতে হচ্ছে।

তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, শুধু এলজিইডি কেন অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের কাজেও তো অনেক অনিয়ম হচ্ছে। আপনারা শুধু এলজিইডিকে দেখতে পান। নুরুল আফসার নামে এই ঠিকাদার আমার ফোনও ধরে না। আমি এটা নিয়ে কি করতে পারি। এরপরেও তাদের উপরে চাপ সৃষ্টি করে আমি কাজটা আদায় করার চেষ্টা করছি।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

লামায় এলজিইডির সড়ক নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ০৩:৪৬:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বান্দরবানে ঠিকাদার প্রকৌশলী জোকসাজসে সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। জেলার লামা উপজেলার ৬ নাম্বার রূপসী পাড়া ইউনিয়নের লামার মুখ হতে শিলের তোয়া নির্মাণাধীন এই সড়কটির প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর বান্দরবান জেলা অফিসের অধীনস্থ লামা উপজেলা অফিস।

সরেজমিনে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) লামা ও বান্দরবান অফিসের জোকসাজসে এসি ও ইউটি কনস্ট্রাকশন নামে এ দুই ঠিকাদারী লাইসেন্সের ঠিকাদাররা সড়ক নির্মাণে প্রকাশ্য এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট ও প্রকৌশলীর সামনেই সড়কে নিন্মমানের ইট ও সলিংয়ের নিচে বালু ফিলিং না করে পাহাড়ের লাল মাটির উপরে ইট বসিয়ে সড়ক নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও কালবাট ও ড্রেন নির্মাণে স্থানীয় ছড়া-ঝিড়র নিন্মমানের বালু, পরিমাণে চেয়ে কম সিমেন্ট এবং অপরিচ্ছন্নভাবে ময়লা আবর্জনাসহ তড়িঘড়ি করে ঢালাই কাজ চালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট এলজিইডির কর্মকর্তাদের উপরে চরম ক্ষুব্ধ।

এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর ত্রিহিল প্রজেক্টের ডিডিআরআইপি প্রকল্পের অর্থায়নে ৩ কি.মি ৫০০ মিটার ব্রিক সলিং সড়কটি ৬ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কাজটি কার্যাদেশ পায় এসি ও ইউটি কনস্ট্রাকশন। তবে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন বান্দরবানের স্থানীয় ঠিকাদার নুরুল আবছার।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে এক জন ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট উপস্থিত থাকা অবস্থায় সড়কের সলিংয়ে নিন্মমানের ইট ব্যবহার করে আসছে। এছাড়া সলিংয়ের নিচে বালু ফিলিং না করে পাহাড়ের লাল মাটির উপরেই ইট বসিয়ে সড়ক নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছে। এ সড়কটি আগামী বর্ষা মৌসুমে বেশ কয়েকটি স্থানে ধসে পড়ে অকার্যকর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকার সচেতন মহল এ সড়কটি নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতির ব্যাপারে এলজিইডি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ সড়কের কাজে দায়িত্বরত ঠিকাদারের মামা শাহ আলম বলেন, আমি অন্য আরেকটি সাইটে কাজ করছি। এই সড়কের কাজে এখন দায়িত্বে আছে খোরশেদ। সে কিভাবে কাজ করছে সেটা আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে এলজিইডি’র লামা উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবু হানিফ জানান, ইটের মান নিয়ে যখনই অভিযোগ এসেছে আমরা গিয়ে ইটগুলো সরিয়ে দিয়েছি। ট্রাকে করে আনা কিছু খারাব ইট ফেরতও দেওয়া হয়েছে। তারপরেও অনেকগুলো নিন্মমানের ইট সড়কে লাগানো হয়েছে সেগুলো তুলে ফেলার ব্যবস্থা করব। আমাদের অফিসের জনবল না থাকার কারণে আমরা সব কাজ ঠিকভাবে দেখাশোনা করতে পারছি না।

সড়কে পাহাড়ের লাল মাটি ব্যবহারের ব্যাপারে তিনি বলেন, ইস্টিমিতে বালু ধরা নাই। আমাদের নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের সাথে আলাপ করলে তিনি বলছেন পাহাড়ের মাটি সলিংয়ের ইটের উপরে ব্যবহার করতে। বালুর চেয়ে মাটি ব্যবহারে কাজ দেবে ভালো তাই ঠিকাদারের উপরে আমাদের করাকরি নেই বলে জানান তিনি।

বান্দরবান জেলা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম মজুমদার বলেন, আমাদের এলজিইডি’র সড়কের কাজগুলি সড়ক বিভাগ বা উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ে অনেক ভালো হয়। বান্দরবানে কোন বালু মহাল না থাকার কারণে আমাদের পাহাড়ের মাটি ব্যবহার করতে হচ্ছে।

তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, শুধু এলজিইডি কেন অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের কাজেও তো অনেক অনিয়ম হচ্ছে। আপনারা শুধু এলজিইডিকে দেখতে পান। নুরুল আফসার নামে এই ঠিকাদার আমার ফোনও ধরে না। আমি এটা নিয়ে কি করতে পারি। এরপরেও তাদের উপরে চাপ সৃষ্টি করে আমি কাজটা আদায় করার চেষ্টা করছি।