নিজস্ব প্রতিবেদক :
রমজানে সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা চিনির দাম বাড়িয়েছে বলে মন্তব্য করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, রমজান শেষের দিকে, সামনে ঈদ। এতে চিনির চাহিদা বেড়ে গেছে। যে কারণে দামেও প্রভাব পড়েছে।
রোববার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘জুট প্রোডাক্টস বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল’-জেপিবিপিসির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেছেন।
ঈদ ঘিরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিনির দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পরও বাজারে দাম বেড়েছে, সাংবাদিকরা এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সম্প্রতি লক্ষ্য করেছি যে চিনির দাম একটু ঊর্ধ্বমুখী। আমরা বলেছিলাম চিনির দাম পাঁচ টাকা কমাবো। পরবর্তীকালে হিসাব-নিকাশ করে দেখা যায় তিন টাকা ৫০ পয়সা কমানো যায়। যখনই এটা আলোচনা চলছিল তখনই চিনির দাম আবার বাড়ানো হয়। রমজানের শেষ দিকে ঈদ ঘিরে চিনির চাহিদা অনেক বেড়েছে। যে কারণে দামও বেড়েছে। দাম যে বেড়েছে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
মন্ত্রী বলেন, যেটা হয় তা আপনারা বোঝেন। যখন আমরা একটি দাম ঠিক করি, এরমধ্যে গত ১৫ দিনে বিশ্ববাজারে চিনির দাম আরও ১০০ ডলার বেড়েছে। যেটা বেড়েছে সেটা দেশে আসতে আরও এক মাস সময় লাগবে। কিন্তু আপনারা জানেন- ব্যবসায়ীরাতো সুযোগ নিয়েই থাকে। আগামীতে বাড়বে, তারা আগে থেকেই সুযোগটা নেয়। রমজান মাসও শেষ দিকে, তাই ঈদ সামনে রেখে চিনির দামে একটু প্রভাব পড়েছে। চাহিদা বাড়ায় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, যা বলেছিলাম তার থেকে দাম একটু বাড়তি আছে। (বাজার নিয়ন্ত্রণের) আমরা চেষ্টা করছি। এতো বিশাল মার্কেট ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, আসলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। আমরা চেষ্টা করছি নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য, যতদূর পারা যায় আর কি।
মুরগির বাজারের অস্থিরতা নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এটি আমাদের দেখার বিষয় না, এটি প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের। মুরগি, ডিম, বেগুন, আম, এসব কিছু নিয়ে আমাদের কাছে প্রশ্ন করা হয়। মুরগি নিয়ে যখন প্রশ্ন করেন, আমাকে উত্তর দিতে হলে জানতে হবে মুরগির উৎপাদন খরচ কতো? সেটা তো আমি জানি না। তবে মাঝে মাঝে আমি ধমক দিই। এটা ওটা করবো, যেন দামটা মাত্রাতিরিক্ত না হয়; সেই চেষ্টা করা।
তিনি বলেন, তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের ভোক্তা অধিকার চেষ্টা করছে। এর ফলে কখনো কখনো ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে আসছে। মূল কথা, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যদি একটি নিদিষ্ট দাম নির্ধারণ করে দিতে পারতো, তাহলে সুবিধা হতো। তাহলে আমরা চেষ্টা করে দেখতাম কি করা উচিত। কিন্তু এটা নিয়ন্ত্রণ করে তারা। এটা হলো সমস্যা। তবে বিষয়টি দেখতে ভোক্তা অধিকারকে আমরা আবার বলবো।
পাট প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন করে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে পাটজাত পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাটজাত পণ্যকে ২০২৩ সালের ‘বর্ষপণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এই সম্ভাবনাময় খাতের উন্নয়নকে আরও বেগবান করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জুট প্রোডাক্টস বিজনেস প্রোমোশন কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে।
পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদনে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে পাটের উৎপাদন ও পাট পণ্য ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকে পাট ও পাট পণ্য উৎপাদনে এবং রপ্তানি করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি হাইকমিশনার/রাষ্ট্রদূতকে পাটজাত পণ্য প্রদর্শন এবং বাজার সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছেন। যার ফলে পাট নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে।
দেশে পাট শিল্পের পুনরুজ্জীবন এবং আধুনিকায়নের ধারা বেগবান করার পাশাপাশি পাটজাত বহুমুখী পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধিতে জুট প্রোডাক্টস বিজনেস প্রোমোশন কাউন্সিল (জেপিবিপিসি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে জানিয়ে তিনি বলেন রপ্তানি সম্ভাবনাময় খাতসমূহের উন্নয়নে বিজনেস প্রোমোশন কাউন্সিল-বিপিসি ইতোমধ্যে সাতটি খাত ভিত্তিক কাউন্সিল গঠন করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
মন্ত্রী বলেন, পাট খাতের বৈশ্বিক রপ্তানি আয়ের ৭২ শতাংশ এখন বাংলাদেশের দখলে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে কেবল ব্যাগের চাহিদা দশ কোটি থেকে ৭০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে এবং অন্যান্য পাট পণ্যের চাহিদা রয়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে পাট ও পাট পণ্য রপ্তানিতে প্রায় ১১৩ কোটি মার্কিন ডলার আয় হয়েছে বলেও জানান।
পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যগের ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পাটের ব্যগ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে। যদিও পলিথিন ব্যগের তুলনায় পাটের ব্যগের দাম একটিু তবে পরিবেশবান্ধব।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও বিজনেস কমিশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সেক্টরেরে অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।