Dhaka বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিউ মার্কেটজুড়ে ব্যবসায়ীদের আর্তনাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বেচাকেনা শেষ করে বাসায় গিয়ে মাত্রই ঘুমিয়ে ছিলেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যেই আগুনের খবর পেয়ে ছুটে এসে নিউ সুপার মার্কেটের নিচে ভিড় করছেন ব্যবসায়ী ও তাদের স্বজনরা। সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা। ব্যবসায়ীদের আহাজারি আর আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে রাজধানীর নিউ মার্কেটের আকাশ-বাতাস। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ২৮টি ইউনিট। এ অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মার্কেটের ভেতরে ঢুকে মালামাল বের করতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

শনিবার (১৫ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট (দ:) ভবনে আগুন জ্বলছে। প্রচণ্ড ধোয়া তৈরি করেছে। এর মধ্যেও মালামাল বের করার জন্য মার্কেটের ভেতরে ঢুকছেন ব্যবসায়ীরা।

আগুনে ব্যবসায়ীরা আহাজারি করে, সামনে ঈদ। কত স্বপ্ন ছিল, সব শেষ হয়ে গেল। ভয়াবহ আগুনের পর ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন করছেন, সামনে ঈদ। ব্যবসায়ীদের কেন মারছেন আপনারা?

জলিল নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, কয়দিন আগে বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন, এখন আমাদের মার্কেটে আগুন। সামনে ঈদ। ব্যবসায়ীগো কেন মারছেন আপনারা?

খালিদা নামের একজন দোকানী জানান, দ্বিতীয় তলায় তার দোকান। ঝুঁকি নিয়েই তিনি ও তার ছোট ছেলে মালামাল বের করে আনছেন। এখনো অনেক মালামাল দোকানে রয়ে গেছে। সবগুলো তিনি আনতে পারবেন কিনা শঙ্কায় রয়েছেন।

আব্দুল হাকিম নামের একজন ব্যবসায়ী জাগো নিউজকে বলেন, নিচের তলায় তার দোকান। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় যেহেতু আগুন লেগেছে তাতে নিচ তলায় আগুন আসতে কতক্ষণ। এজন্য তিনি মালামাল নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসছেন।

দ্বিতীয় তলায় ৩২৫ নম্বর দোকান ঝাক্কাস ফ্যাশেনের মালিক মঈনুল ইসলাম দূরে দাঁড়িয়ে বিলাপ করে কাঁদছেন আর বলেন, নিজের চোখে চেয়ে চেয়ে দেখছি, আমার মূলত পাঞ্জাবির দোকান। আমার দোকান পুড়ছে। কিন্তু ভেতরেও ঢুকতে পারছি না। কোনো মালামাল বের করতে পারিনি। এ আগুনে শুধু আমার দোকান নয়, পুড়ছে আমার ঈদে জমে ওঠা কেনাকাটা, আর আমার স্বপ্ন।

ব্যবসায়ীদের আর্তনাদে ভারী নিউ মার্কেট এলাকা

তিনি বলেন, প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল আমার দোকানে। আগুনের শুরুতে কিছু মালামাল বের করতে পেরেছিলাম। এরপরে আর ঢুকতে পারিনি। দ্বিতীয় তলায় এসি বিস্ফোরণ হচ্ছে, প্রচণ্ড ধোঁয়া হচ্ছে, যে কারণে ফায়ার সার্ভিসের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না।

সজিব মিয়া বলেন, ছয় মাস আগে দেশের জমি বিক্রি করে দোকানটি নিয়েছি। এখন আমি পথে বসে গেলাম। গতকাল নতুন করে ২ লাখ টাকার মাল উঠিয়েছি। আগুন লাগার পর আজকে একটা মালও বের করতে পারি নাই। কিছু নাই আমার সব শেষ হয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) ছিল, কাস্টমারও অনেক বেশি ছিল। রাত তিনটা পর্যন্ত আমরা কাজ করেছি, দোকান পরিষ্কার করেছি। কাস্টমার ছিল না, তখন কেউ ছিল না। দোকানে কেমনে আগুন লাগল?

ফের আগুনের বিভীষিকা (ফটো স্টোরি)

নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলার ব্যবসায়ী মো. সবুজ মিয়া বলেন, কয়দিন আগে বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুনে পুড়ে সব শ্যাষ হইলো। আজ আবার আমাগো মার্কেটে আগুন। ঈদের আগে ব্যবসায়ীদের মার্কেটে কেন এত আগুন? ব্যবসায়ীদের আর কত মারবেন? আর এই আগুন স্বাভাবিক আগুন না। মনে হয় কেউ ষড়যন্ত্র কইরা আগুন ধরায়ে দিছে। ঈদ উপলক্ষে দোকানে ৩০ লাখ টাকার মালামাল তুলেছিলেন। কিছু মালামাল বিক্রি হয়েছে, বাকি মাল সব দোকানে ছিল।

নিউ সুপার মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) খুব ভালো বিক্রি হয়েছে। রাত ২টা পর্যন্ত মার্কেটেই ছিলাম। খেয়ে মাত্র শুয়ে ছিলাম। খবর পেয়ে এসে দেখি সব শেষ হয়ে গেছে।

রহিম নামের আরেক ব্যবসায়ী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, রাত ৩টা পর্যন্ত দোকান করেছি। আমার সব টাকা দোকানের ক্যাশে ছিল। সব মালও গেল, টাকাও পুড়ে ছাই হয়ে গেল।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভোরে যখন আগুন লাগে, তখন বাসায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমের ঘোরে তারা। কারণ ঈদের আগ মুহূর্তে গভীর রাত পর্যন্ত মার্কেটে তারা বিকিকিনি করে ভোররাতের দিকে বাসায় ফিরেছেন। বাসার ফেরার পর পরই আগুন লাগাকে রহস্যজনক বলছেন ব্যবসায়ীরা।

মুস্তাফিজ নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, রমজানের শুরু থেকে শুধু মার্কেটগুলোতে আগুন লাগছে। এতো আগুন মার্কেটে কেন লাগে, তা কেউ কখনো দেখে না। আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের মারলে কাদের লাভ? আল্লাহ উপরে, সব দেখছেন। নিশ্চয় তিনি বিচার করবেন।

মার্কেটের চারপাশ ঘিরে চলছে ব্যবসায়ীদের হাহাকার।

মার্কেটটির দ্বিতীয় তলার শার্ট-প্যান্টের ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবাজারে আগুন লাগার পর শুধু ‘আল্লাহ আল্লাহ’ করেছি। কিন্তু সেই আগুন আমাগো মার্কেটেই আইলো। লাখ লাখ টাকার মালামাল শ্যাষ। এহন আমি কী করুম। কোথায় যামু? আমাগো চোখের পানি কেউ দেখে না। ব্যবসায়ীগো আর কত মারবে?

ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা ও যুদ্ধের কারণে গত কয়েক বছরে ব্যবসা না হলেও এবছর ঈদে সে ক্ষতি পুষানোর সুযোগ পেয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসাও বেশ ভালোই হচ্ছিল। প্রায় অধিকাংশ ব্যবসায়ীর ক্যাশে লাখ লাখ টাকা রয়েছে। এবং অনেক টাকার মালামাল রয়েছে।

কাঁদতে কাঁদতে এক ব্যবসায়ী বলেন, ভাই রাত ৩ টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাসায় গিয়েছি। আর সকাল ৬ টায় পেলাম আগুনের সংবাদ। আমার ক্যাশে অনেক টাকা ছিল। ভাই আমি শেষ। আমার আর কোন সম্বল বেঁচে নেই।

আরেক ব্যবসায়ী বলছেন, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পরিবার নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছি। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে পরিবার কেমনে চালাব? আর পাওানাদারের টাকাই কীভাবে দিব?

ইমন নামে এক দোকানি জানান, মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় তাদের আন্ডার গার্মেন্টসের দোকান। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনিসহ দোকানের কর্মচারীরা মালামাল বের করে নিয়ে আসতেছেন। এখনও সব মালামাল নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি।

‘মাইনসের টাকা অহন কেমনে পরিশোধ করুম’

প্রত্যক্ষদর্শী ইমন বলেন, ভিতর অনেক আগুন, মার্কেটের অধিকাংশ দোকান পুড়ে যাবে। নিচতলায় এবং প্রথম ও দ্বিতীয় তলার সিঁড়ির কাছাকাছি থাকা দোকানগুলোর মালামাল শুধু বের করা সুযোগ পাইছি। বাকি দোকানের মালামাল বের করার সুযোগ হচ্ছে না।

লিটন নামে আরেকজন দোকানদার জানান, ব্যবসায়ীদের উপরে খড়ক নেমেছে। আমরা কি করবো? কোথায় যাবো? কিভাবে ব্যবসা করবো? কিভাবে পেট চলবে আমাদের? আগুনে তো সব শেষ।

এদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। ভয়াবহ আগুন যেন আর ছড়াতে না পারে সেজন্য ফায়ার সার্ভিসের স্পেশাল ফোর্স আগুন নেভাতে আগুনের ভেতরে গিয়েছে। শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিসের কয়েকজন সদস্য মুখে অক্সিজেন মাস্ক ও পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে আগুনের মধ্যে যাচ্ছেন।

ভয়াবহ এই আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনী। একই সঙ্গে আগুন নেভানোর জন্য বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

আবহাওয়া

সাবেক মন্ত্রী দস্তগীরের ৪০০ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ

নিউ মার্কেটজুড়ে ব্যবসায়ীদের আর্তনাদ

প্রকাশের সময় : ১০:৩৯:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বেচাকেনা শেষ করে বাসায় গিয়ে মাত্রই ঘুমিয়ে ছিলেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যেই আগুনের খবর পেয়ে ছুটে এসে নিউ সুপার মার্কেটের নিচে ভিড় করছেন ব্যবসায়ী ও তাদের স্বজনরা। সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা। ব্যবসায়ীদের আহাজারি আর আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে রাজধানীর নিউ মার্কেটের আকাশ-বাতাস। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ২৮টি ইউনিট। এ অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মার্কেটের ভেতরে ঢুকে মালামাল বের করতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

শনিবার (১৫ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট (দ:) ভবনে আগুন জ্বলছে। প্রচণ্ড ধোয়া তৈরি করেছে। এর মধ্যেও মালামাল বের করার জন্য মার্কেটের ভেতরে ঢুকছেন ব্যবসায়ীরা।

আগুনে ব্যবসায়ীরা আহাজারি করে, সামনে ঈদ। কত স্বপ্ন ছিল, সব শেষ হয়ে গেল। ভয়াবহ আগুনের পর ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন করছেন, সামনে ঈদ। ব্যবসায়ীদের কেন মারছেন আপনারা?

জলিল নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, কয়দিন আগে বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন, এখন আমাদের মার্কেটে আগুন। সামনে ঈদ। ব্যবসায়ীগো কেন মারছেন আপনারা?

খালিদা নামের একজন দোকানী জানান, দ্বিতীয় তলায় তার দোকান। ঝুঁকি নিয়েই তিনি ও তার ছোট ছেলে মালামাল বের করে আনছেন। এখনো অনেক মালামাল দোকানে রয়ে গেছে। সবগুলো তিনি আনতে পারবেন কিনা শঙ্কায় রয়েছেন।

আব্দুল হাকিম নামের একজন ব্যবসায়ী জাগো নিউজকে বলেন, নিচের তলায় তার দোকান। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় যেহেতু আগুন লেগেছে তাতে নিচ তলায় আগুন আসতে কতক্ষণ। এজন্য তিনি মালামাল নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসছেন।

দ্বিতীয় তলায় ৩২৫ নম্বর দোকান ঝাক্কাস ফ্যাশেনের মালিক মঈনুল ইসলাম দূরে দাঁড়িয়ে বিলাপ করে কাঁদছেন আর বলেন, নিজের চোখে চেয়ে চেয়ে দেখছি, আমার মূলত পাঞ্জাবির দোকান। আমার দোকান পুড়ছে। কিন্তু ভেতরেও ঢুকতে পারছি না। কোনো মালামাল বের করতে পারিনি। এ আগুনে শুধু আমার দোকান নয়, পুড়ছে আমার ঈদে জমে ওঠা কেনাকাটা, আর আমার স্বপ্ন।

ব্যবসায়ীদের আর্তনাদে ভারী নিউ মার্কেট এলাকা

তিনি বলেন, প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল আমার দোকানে। আগুনের শুরুতে কিছু মালামাল বের করতে পেরেছিলাম। এরপরে আর ঢুকতে পারিনি। দ্বিতীয় তলায় এসি বিস্ফোরণ হচ্ছে, প্রচণ্ড ধোঁয়া হচ্ছে, যে কারণে ফায়ার সার্ভিসের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না।

সজিব মিয়া বলেন, ছয় মাস আগে দেশের জমি বিক্রি করে দোকানটি নিয়েছি। এখন আমি পথে বসে গেলাম। গতকাল নতুন করে ২ লাখ টাকার মাল উঠিয়েছি। আগুন লাগার পর আজকে একটা মালও বের করতে পারি নাই। কিছু নাই আমার সব শেষ হয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) ছিল, কাস্টমারও অনেক বেশি ছিল। রাত তিনটা পর্যন্ত আমরা কাজ করেছি, দোকান পরিষ্কার করেছি। কাস্টমার ছিল না, তখন কেউ ছিল না। দোকানে কেমনে আগুন লাগল?

ফের আগুনের বিভীষিকা (ফটো স্টোরি)

নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলার ব্যবসায়ী মো. সবুজ মিয়া বলেন, কয়দিন আগে বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুনে পুড়ে সব শ্যাষ হইলো। আজ আবার আমাগো মার্কেটে আগুন। ঈদের আগে ব্যবসায়ীদের মার্কেটে কেন এত আগুন? ব্যবসায়ীদের আর কত মারবেন? আর এই আগুন স্বাভাবিক আগুন না। মনে হয় কেউ ষড়যন্ত্র কইরা আগুন ধরায়ে দিছে। ঈদ উপলক্ষে দোকানে ৩০ লাখ টাকার মালামাল তুলেছিলেন। কিছু মালামাল বিক্রি হয়েছে, বাকি মাল সব দোকানে ছিল।

নিউ সুপার মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) খুব ভালো বিক্রি হয়েছে। রাত ২টা পর্যন্ত মার্কেটেই ছিলাম। খেয়ে মাত্র শুয়ে ছিলাম। খবর পেয়ে এসে দেখি সব শেষ হয়ে গেছে।

রহিম নামের আরেক ব্যবসায়ী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, রাত ৩টা পর্যন্ত দোকান করেছি। আমার সব টাকা দোকানের ক্যাশে ছিল। সব মালও গেল, টাকাও পুড়ে ছাই হয়ে গেল।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভোরে যখন আগুন লাগে, তখন বাসায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমের ঘোরে তারা। কারণ ঈদের আগ মুহূর্তে গভীর রাত পর্যন্ত মার্কেটে তারা বিকিকিনি করে ভোররাতের দিকে বাসায় ফিরেছেন। বাসার ফেরার পর পরই আগুন লাগাকে রহস্যজনক বলছেন ব্যবসায়ীরা।

মুস্তাফিজ নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, রমজানের শুরু থেকে শুধু মার্কেটগুলোতে আগুন লাগছে। এতো আগুন মার্কেটে কেন লাগে, তা কেউ কখনো দেখে না। আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের মারলে কাদের লাভ? আল্লাহ উপরে, সব দেখছেন। নিশ্চয় তিনি বিচার করবেন।

মার্কেটের চারপাশ ঘিরে চলছে ব্যবসায়ীদের হাহাকার।

মার্কেটটির দ্বিতীয় তলার শার্ট-প্যান্টের ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবাজারে আগুন লাগার পর শুধু ‘আল্লাহ আল্লাহ’ করেছি। কিন্তু সেই আগুন আমাগো মার্কেটেই আইলো। লাখ লাখ টাকার মালামাল শ্যাষ। এহন আমি কী করুম। কোথায় যামু? আমাগো চোখের পানি কেউ দেখে না। ব্যবসায়ীগো আর কত মারবে?

ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা ও যুদ্ধের কারণে গত কয়েক বছরে ব্যবসা না হলেও এবছর ঈদে সে ক্ষতি পুষানোর সুযোগ পেয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসাও বেশ ভালোই হচ্ছিল। প্রায় অধিকাংশ ব্যবসায়ীর ক্যাশে লাখ লাখ টাকা রয়েছে। এবং অনেক টাকার মালামাল রয়েছে।

কাঁদতে কাঁদতে এক ব্যবসায়ী বলেন, ভাই রাত ৩ টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাসায় গিয়েছি। আর সকাল ৬ টায় পেলাম আগুনের সংবাদ। আমার ক্যাশে অনেক টাকা ছিল। ভাই আমি শেষ। আমার আর কোন সম্বল বেঁচে নেই।

আরেক ব্যবসায়ী বলছেন, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পরিবার নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছি। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে পরিবার কেমনে চালাব? আর পাওানাদারের টাকাই কীভাবে দিব?

ইমন নামে এক দোকানি জানান, মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় তাদের আন্ডার গার্মেন্টসের দোকান। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনিসহ দোকানের কর্মচারীরা মালামাল বের করে নিয়ে আসতেছেন। এখনও সব মালামাল নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি।

‘মাইনসের টাকা অহন কেমনে পরিশোধ করুম’

প্রত্যক্ষদর্শী ইমন বলেন, ভিতর অনেক আগুন, মার্কেটের অধিকাংশ দোকান পুড়ে যাবে। নিচতলায় এবং প্রথম ও দ্বিতীয় তলার সিঁড়ির কাছাকাছি থাকা দোকানগুলোর মালামাল শুধু বের করা সুযোগ পাইছি। বাকি দোকানের মালামাল বের করার সুযোগ হচ্ছে না।

লিটন নামে আরেকজন দোকানদার জানান, ব্যবসায়ীদের উপরে খড়ক নেমেছে। আমরা কি করবো? কোথায় যাবো? কিভাবে ব্যবসা করবো? কিভাবে পেট চলবে আমাদের? আগুনে তো সব শেষ।

এদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। ভয়াবহ আগুন যেন আর ছড়াতে না পারে সেজন্য ফায়ার সার্ভিসের স্পেশাল ফোর্স আগুন নেভাতে আগুনের ভেতরে গিয়েছে। শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিসের কয়েকজন সদস্য মুখে অক্সিজেন মাস্ক ও পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে আগুনের মধ্যে যাচ্ছেন।

ভয়াবহ এই আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনী। একই সঙ্গে আগুন নেভানোর জন্য বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।