নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সংঘাত এড়িয়ে সংলাপ চাইলে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে হবে সরকারকে। পদত্যাগ না করে সংলাপের আহ্বান করলে বিশ্বাস করার কোনো সুযোগ তো নেই। আগে পদত্যাগ করতে হবে। অথবা ঘোষণা দিতে হবে যে, আমরা পদত্যাগ করব। বিএনপি জনগণের দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ অন্দোলন করছে।
শনিবার (৮ এপ্রিল) জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের মনে হয়, এ সংসদ সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর। এ সংসদের তো কোনো গ্রহণযোগ্যতাই ছিল না জনগণের কাছে। কারণ তারা নির্বাচিত নয়, অনির্বাচিত সরকার।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দখলে নিয়ে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। ক্ষমতা টিকে রাখতে প্রশাসনকে ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে দেশকে ধ্বংস করছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষে ২২ আগস্ট থেকে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলন করেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক উপায়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। আন্দোলন চলবে, আগামী দিনে আরও বেগবান হবে। এ বিষয় নিয়ে সমমনা জোটের সঙ্গে কথা হয়েছে।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৪ বছর ধরে একই কায়দায় শাসনব্যবস্থাকে কবজা করে রেখেছে। গণতান্ত্রিক সকল প্রতিষ্ঠানগুলো তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। লুটপাটের রাজত্বে পরিণত করেছে। সরকারি প্রশাসনগুলোকে সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করেছে।
তিনি বলেন, আমরা ২২টি রাজনৈতিক দল আমরা গত বছরের ২ আগস্ট থেকে আন্দোলন করে আসছি। আমাদের প্রধান দাবি সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। এ আন্দোলন করতে গিয়ে এরই মধ্যে ১৭ জন জীবন দিয়েছে। এ পর্যন্ত আমাদের ৬শ নেতাকর্মী গুম হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে আটক রাখা হয়েছে। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত রাখা হয়েছে। এ সরকারের আমলে আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।
ফখরুল বলেন, সমমনা জোটের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কর্মসূচি কিভাবে হবে, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এছাড়া এই আন্দোলন আরও কিভাবে দৃঢ় করা যায় এবং ভবিষ্যতে আন্দোলনকে কিভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালিয়েছে। এতে আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আজকেও খবর পেয়েছি পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় কর্মসূচি পালন করতে বাঁধা প্রদান করেছে। তারা বলছে কর্মসূচি করতে দেবে না। অর্থাৎ আমাদের যে গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো সে বিষয়গুলোকে সংকুচিত করে ফেলছে। এভাবে তারা জনগণকে দমন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে, প্রশাসনকে সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করেছে। বিচার ব্যবস্থা একেবারেই দলীয়করণের চেষ্টা করেছে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।
মির্জা ফখরুল, পবিত্র রমজান মাসেও আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা করা হচ্ছে, বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। এরা গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো কুক্ষিগত করে রাখতে চায়। এভাবে গাঁয়ের জোরে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চায়।
বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর পুলিশ হামলা চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব বলেন, হামলায় অনেকে আহত হয়েছেন। আজ আমাদের কর্মসূচিতে পুলিশ ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় বাধা দিতে শুরু করে দিয়েছে। তারা বলছেন-কর্মসূচি পালন করতে দেবে না। তারা গণতান্ত্রিক পরিসরগুলোকে ছোট করে ফেলেছে। এইভাবে জনগণকে দমন করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রথম থেকে অত্যন্ত গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এবং এ আন্দোলনের মধ্যে জনগণ সম্পৃক্ত হচ্ছে। আগামী দিনে সেটা আরও বেগবান হবে।
রাষ্ট্রপতির বিদায়ী ভাষণে সংঘাত এড়াতে সংলাপের ইঙ্গিত রয়েছে ৃ. এ সংক্রান্ত সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা সম্পূর্ণভাবে সরকারের ওপর নির্ভর করে। সরকার যদি চায় যে সংঘাত এড়িয়ে সামনের দিকে যাবে, তাহলে প্রথম কাজটা করতে হবে বিরোধী দলগুলোর দাবি পূরণ করা। অর্থাৎ সরকারকে পদত্যাগ করে আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে। তারা যদি বলে আমরা পদত্যাগ করব, তত্বাবধায়ক বিষয়ে কথা বলব, তাহলে হয়ে যাবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতিকে সম্মান করি। কিন্তু তার হাতে তো সাংবিধানিকভাবে খুব বেশি ক্ষমতা নেই। আপনাদের মনে থাকা দরকার, যখন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সংসদে বিরোধী দলে ছিলাম, তখন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাষ্ট্রপতি কোনোটাই বাস্তবায়ন করতে পারেননি। তার যে ক্ষমতা নেই। সুতরাং তিনি সংলাপের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বলে আপনারা মনে করছেন। কিন্তু আমরা মনে করি গতানুগতিকভাবে সরকারি দলের পক্ষ থেকে তাকে যে বক্তব্য দিতে দেওয়া হয়েছে, তিনি সেটাই পাঠ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, তারপরও রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে আমার ব্যক্তিগতভাবে একটা কথা ভালো লেগেছে, তিনি বলেছেন- গণতন্ত্রবিহীন উন্নয়ন কখনও সার্বজনীন হয় না। সংঘাত, প্রতিহিংসা নিয়ে কখনও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না। এ কথাগুলো ভালো। কিন্তু তারা যেটা প্র্যাকটিস করছেন, সেখানে যে গণতন্ত্রের বালাই নেই, বরং কী করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা যায় সে বিষয়ে প্র্যাকটিস করছেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল সংসদে অনেক বক্তব্য হয়েছে, এমন বক্তব্য করছেন যে মনে হবে, এটা খুব ভালো সংসদ। কিন্তু ওখানে হিসেব করলে খুঁজে পাওয়া যাবে না কয়টা মুলতবি প্রস্তাব সেখানে আছে। কয়টা জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মুলতবি প্রস্তাব করে আলোচনা হয়েছে। যে কথাগুলো মাঝে-মাঝে জনগণের দাবি হিসেবে উঠে আসে, সেইগুলো নিয়েও সেখানে (সংসদে) আলোচনা হয়নি।
বৈঠকে সমমনা জোটের এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ বিকল্পধারার চেয়ারম্যান ড. নুরুল আমীন ব্যপারী, গণদলের চেয়ারম্যান এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী, ডিএলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান এম এন শাওন সাদেকী, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড. ডা. সৈয়দ নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সভাপতি সুকৃতি কুমার মন্ডল, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি ব্যরিষ্টার নাসিম খান ও বাংলাদেশ পিপলস লীগের সভাপতি এ্যাড. গরীব নেওয়াজ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও বেগম সেলিমা রহমান।