Dhaka বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৪ মাসেও চালু হয়নি নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

পদ্মা সেতুর রেললাইনের কাজ চলছে। যে কারণে গত ৪ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল। ঈদুল ফিতরের আগে এ রুটের ট্রেন চলাচল শুরু হবে কিনা সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ঈদ যাত্রী।

শুক্রবার (৭ এপ্রিল) পনেরতম রমজানে বিভিন্ন রুটের হাজারো যাত্রীকে বিভিন্ন সময়ে ট্রেন চালু হওয়া সম্পর্কে জানতে যেতে দেখা গেছে ১ নম্বর রেলগেট এলাকার নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেলওয়ে ষ্টেশন ও চাষাঢ়া ষ্টেশনে। ঈদের আগে ট্রেন চালু হবে কিনা, এবার টিকিটের দাম কত, কবে বিক্রি শুরু হবে- এসব প্রশ্ন করতে দেখা গেছে তাদের।

এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ রুটে রেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। নারায়ণগঞ্জ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেনে চলাচল করে। বিশেষত, কম ভাড়া ও সময় সাশ্রয়ে এ বাহনকে মাধ্যম হিসেবে নিচ্ছেন যাত্রীরা।

জানা যায়, প্রতি বছর দুই ঈদ কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ থেকে ট্রেনে যাতায়াত করেন হাজারো যাত্রী। গণনার হিসেবে এ সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ লাখ যাত্রী। ঈদুল ফিতরের যাত্রা শুরু হয় মূলত ২০ রমজান থেকে। আর কোরবানির ঈদের যাত্রা শুরু হয় সাধারণত চার-পাঁচদিন আগে থেকে। এ সময় ট্রেনগুলোর ছাদ পর্যন্ত পূর্ণ হয়ে যায়।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ থেকে চলাচল করা ট্রেনগুলোর আসন সংখ্যা প্রতিটি বগিতে ষাটটি করে মোট সাড়ে ৩৫০। নিয়মিত এ আসন পূর্ণ হয়ে গেলে দাঁড়িয়েও যাত্রী চলাচল হতো। কিন্তু ঈদের আগের ১০ দিন থেকে ট্রেনে তিল ধারণের জায়গা হতো না। প্রতিদিন আটটি করে মোট ১৬টি বিভিন্ন রুটের ট্রিপ এ অঞ্চল দিয়ে যাতায়াত করতো।

এত যাত্রী চলচালকারী এ রুটে গত ৪ মাস ধরে ট্রেন না চলায় যাত্রীদের ভোগান্তি দেখা গেছে বেশ। এ বিষয়ে কথা হলে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার কামরুল ইসলাম বলেন, কবে নাগাদ ট্রেন চালু হবে তা কেউ বলতে পারছে না। শুনেছি রেল লাইনের কাজ শেষ হয়েছে। যদি সেটি হয়, যেকোনো সময়ে ট্রেন চালুর অনুমতি পেলে আমরা সে হিসেবে ব্যবস্থা নেব।

তিনি জানান, এ রুটের ট্রেনগুলোর বগিতে ষাটটি করে সাড়ে ৩০০ আসন থাকে; কিন্তু এক ট্রিপে যাত্রী ওঠে দ্বিগুণ। পুরো ট্রেনে প্রায় আড়াই হাজারের মতো যাত্রী নিজ গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করে। এটা শুধু ট্রেনের অভ্যন্তরে। ট্রেনের আশপাশ, সামনে ও ছাদেও অগণিত যাত্রী ওঠে। তবে যে ট্রিপ নারায়ণগঞ্জ ফেরে, তাতে তেমন যাত্রী হয় না।

তিনি আরও বলেন, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, টঙ্গীসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ এ রুট ধরে চলাচল করে। ঈদুল ফিতরের যাত্রা শুরু হয় ২০ রমজান থেকে। ভিড় থাকে চাঁদরাত পর্যন্ত। আগে অতিরিক্ত যাত্রী সামলানোর মতো অবস্থা ছিল না। তবে, এখন সে সক্ষমতা তৈরি হয়েছে বলেও জানান কামরুল ইসলাম।

১ নম্বর রেলগেট এলাকার নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেলওয়ে ষ্টেশন ও চাষাঢ়া ষ্টেশনে বহু যাত্রীকে ট্রেনের খোঁজ নিতে আসতে দেখা যায়। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রমজানের শেষ ১০ দিনে বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে তাদের। চলাচল খরচ কম হওয়ায় এ রুট দিয়ে তারা চলাচল করে। গত ৪ মাস ধরে রুটটি বন্ধ করায় তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ব্যাপক হারে। তাই সরকারের প্রতি এ রুটের ট্রেনগুলো দ্রুত চালুর আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

এর আগে গত বছরের ১ ডিসেম্বর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিনি জানান, ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ রেল লাইনের কাজ কয়েক বছর ধরে চলমান থাকলেও তার অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। অন্যদিকে করোনাকালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে ট্রেনের সংখ্যা যেভাবে কমিয়ে দেয়া হয়েছে তাও আর বৃদ্ধি করা হয় নাই। রেল কর্তৃপক্ষ বার বার বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করা হয় নাই। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে প্রতিদিন প্রায় চল্লিশ হাজারের অধিক মানুষ যাতায়াত করেন। বাসের ভাড়া বৃদ্ধির ফলে ট্রেনকেই সাধারণ মানুষ এখন যাতায়াতের প্রধান বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আজকে মানুষের জীবন-জীবিকা যখন চরম সংকটে, তখন রেলকর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত মানুষের সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। আমরা দেশে রেল সেবার আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন চাই। কিন্তু জনগণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে সাড়ে তিন মাসের পরিবর্তে আরও কম সময়ে কাজ সম্পন্ন করার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। আমরা চাই না দেশে অন্যান্য প্রকল্পের মতো এই কাজটি বিলম্বিত হোক। শুরুতেই সে দিকে সতর্ক থাকার জন্য আমরা রেল কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি আহ্বান জানাচ্ছি।

নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম খান জানান, তিনটি পৃথক রেললাইনের নির্মাণকাজের মধ্যে একটি রেললাইনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে কবে নাগাদ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হবে সেটি এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। এ বিষয়ে হেড অফিস থেকে নির্দিষ্ট কোনো সময় বলা হয়নি।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

চলতি বর্ষা যশোরের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক চলাচলের অযোগ্য, দুর্ভোগে পথচারীরা

৪ মাসেও চালু হয়নি নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল

প্রকাশের সময় : ০৩:১৫:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

পদ্মা সেতুর রেললাইনের কাজ চলছে। যে কারণে গত ৪ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল। ঈদুল ফিতরের আগে এ রুটের ট্রেন চলাচল শুরু হবে কিনা সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ঈদ যাত্রী।

শুক্রবার (৭ এপ্রিল) পনেরতম রমজানে বিভিন্ন রুটের হাজারো যাত্রীকে বিভিন্ন সময়ে ট্রেন চালু হওয়া সম্পর্কে জানতে যেতে দেখা গেছে ১ নম্বর রেলগেট এলাকার নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেলওয়ে ষ্টেশন ও চাষাঢ়া ষ্টেশনে। ঈদের আগে ট্রেন চালু হবে কিনা, এবার টিকিটের দাম কত, কবে বিক্রি শুরু হবে- এসব প্রশ্ন করতে দেখা গেছে তাদের।

এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ রুটে রেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। নারায়ণগঞ্জ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেনে চলাচল করে। বিশেষত, কম ভাড়া ও সময় সাশ্রয়ে এ বাহনকে মাধ্যম হিসেবে নিচ্ছেন যাত্রীরা।

জানা যায়, প্রতি বছর দুই ঈদ কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ থেকে ট্রেনে যাতায়াত করেন হাজারো যাত্রী। গণনার হিসেবে এ সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ লাখ যাত্রী। ঈদুল ফিতরের যাত্রা শুরু হয় মূলত ২০ রমজান থেকে। আর কোরবানির ঈদের যাত্রা শুরু হয় সাধারণত চার-পাঁচদিন আগে থেকে। এ সময় ট্রেনগুলোর ছাদ পর্যন্ত পূর্ণ হয়ে যায়।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ থেকে চলাচল করা ট্রেনগুলোর আসন সংখ্যা প্রতিটি বগিতে ষাটটি করে মোট সাড়ে ৩৫০। নিয়মিত এ আসন পূর্ণ হয়ে গেলে দাঁড়িয়েও যাত্রী চলাচল হতো। কিন্তু ঈদের আগের ১০ দিন থেকে ট্রেনে তিল ধারণের জায়গা হতো না। প্রতিদিন আটটি করে মোট ১৬টি বিভিন্ন রুটের ট্রিপ এ অঞ্চল দিয়ে যাতায়াত করতো।

এত যাত্রী চলচালকারী এ রুটে গত ৪ মাস ধরে ট্রেন না চলায় যাত্রীদের ভোগান্তি দেখা গেছে বেশ। এ বিষয়ে কথা হলে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার কামরুল ইসলাম বলেন, কবে নাগাদ ট্রেন চালু হবে তা কেউ বলতে পারছে না। শুনেছি রেল লাইনের কাজ শেষ হয়েছে। যদি সেটি হয়, যেকোনো সময়ে ট্রেন চালুর অনুমতি পেলে আমরা সে হিসেবে ব্যবস্থা নেব।

তিনি জানান, এ রুটের ট্রেনগুলোর বগিতে ষাটটি করে সাড়ে ৩০০ আসন থাকে; কিন্তু এক ট্রিপে যাত্রী ওঠে দ্বিগুণ। পুরো ট্রেনে প্রায় আড়াই হাজারের মতো যাত্রী নিজ গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করে। এটা শুধু ট্রেনের অভ্যন্তরে। ট্রেনের আশপাশ, সামনে ও ছাদেও অগণিত যাত্রী ওঠে। তবে যে ট্রিপ নারায়ণগঞ্জ ফেরে, তাতে তেমন যাত্রী হয় না।

তিনি আরও বলেন, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, টঙ্গীসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ এ রুট ধরে চলাচল করে। ঈদুল ফিতরের যাত্রা শুরু হয় ২০ রমজান থেকে। ভিড় থাকে চাঁদরাত পর্যন্ত। আগে অতিরিক্ত যাত্রী সামলানোর মতো অবস্থা ছিল না। তবে, এখন সে সক্ষমতা তৈরি হয়েছে বলেও জানান কামরুল ইসলাম।

১ নম্বর রেলগেট এলাকার নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেলওয়ে ষ্টেশন ও চাষাঢ়া ষ্টেশনে বহু যাত্রীকে ট্রেনের খোঁজ নিতে আসতে দেখা যায়। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রমজানের শেষ ১০ দিনে বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে তাদের। চলাচল খরচ কম হওয়ায় এ রুট দিয়ে তারা চলাচল করে। গত ৪ মাস ধরে রুটটি বন্ধ করায় তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ব্যাপক হারে। তাই সরকারের প্রতি এ রুটের ট্রেনগুলো দ্রুত চালুর আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

এর আগে গত বছরের ১ ডিসেম্বর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিনি জানান, ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ রেল লাইনের কাজ কয়েক বছর ধরে চলমান থাকলেও তার অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। অন্যদিকে করোনাকালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে ট্রেনের সংখ্যা যেভাবে কমিয়ে দেয়া হয়েছে তাও আর বৃদ্ধি করা হয় নাই। রেল কর্তৃপক্ষ বার বার বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করা হয় নাই। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে প্রতিদিন প্রায় চল্লিশ হাজারের অধিক মানুষ যাতায়াত করেন। বাসের ভাড়া বৃদ্ধির ফলে ট্রেনকেই সাধারণ মানুষ এখন যাতায়াতের প্রধান বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আজকে মানুষের জীবন-জীবিকা যখন চরম সংকটে, তখন রেলকর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত মানুষের সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। আমরা দেশে রেল সেবার আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন চাই। কিন্তু জনগণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে সাড়ে তিন মাসের পরিবর্তে আরও কম সময়ে কাজ সম্পন্ন করার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। আমরা চাই না দেশে অন্যান্য প্রকল্পের মতো এই কাজটি বিলম্বিত হোক। শুরুতেই সে দিকে সতর্ক থাকার জন্য আমরা রেল কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি আহ্বান জানাচ্ছি।

নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম খান জানান, তিনটি পৃথক রেললাইনের নির্মাণকাজের মধ্যে একটি রেললাইনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে কবে নাগাদ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হবে সেটি এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। এ বিষয়ে হেড অফিস থেকে নির্দিষ্ট কোনো সময় বলা হয়নি।