নিজস্ব প্রতিবেদক :
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ। সেই নৌপথ এখন যাত্রীশূন্য। অলস সময় পার করছেন লঞ্চের চালক-শ্রমিকেরা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে এ নৌপথে যাত্রী চলাচল কমেছে। রমজান মাসে যাত্রী সংখ্যা আরও কমেছে। লঞ্চ মালিকরা বলছেন, যাত্রী কম থাকায় লোকসানে পড়েছেন তারা।
সরেজমিনে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, পন্টুনের সঙ্গে সারি সারি লঞ্চ বেঁধে রাখা। যাত্রী না থাকায় সুনসান নীরবতা ঘাটে। যাত্রী কম থাকায় ৩০-৪০ মিনিট পর পর ২৫-৩০ জন যাত্রী নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে লঞ্চগুলো পাটুরিয়া ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে। আগে ২০ মিনিট পর পর ৮০-১০০ জন যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলো ছেড়ে যেতো। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট থেকেও হাতে গোনা কয়েকজন যাত্রী নিয়ে ঘাটে ভিড়ছে লঞ্চ।
দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে মোট ৩৩ টি লঞ্চ চলাচল করে। প্রতিদিন দৌলতদিয়া ঘাট থেকে বর্তমানে ১০০০ থেকে ১৫০০ যাত্রী পারাপার হচ্ছে। আগে যাত্রী পার হতো ৪ থেকে ৫ হাজার। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া লঞ্চঘাটে দূরপাল্লার পরিবহনের পাশাপাশি পণ্যবাহী গাড়ি, ব্যক্তিগত গাড়ি কমেছে। সেইসঙ্গে নদী পার হওয়া যাত্রীদের চাপও কমেছে।
কুষ্টিয়ার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান। তিনি কুষ্টিয়া থেকে লোকাল বাসে এসে দৌলতদিয়া ঘাটে নামেন। নদী পার হয়ে পাটুরিয়া থেকে বাসে সাভার যাবেন। লঞ্চ ছাড়ার অপেক্ষায় ঘাটে প্রায় ২৫ মিনিট ধরে বসে আছেন। যাত্রী না থাকায় ঘাট থেকে লঞ্চও ছাড়ছে না। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঘাট একেবারে ফাঁকা হয়ে গেছে। এরপর আবার রমজান মাস। মানুষ এ গরমের মধ্যে কোথাও বের হচ্ছে না।
লঞ্চঘাটের কলাবিক্রেতা জাহিদ শেখ বলেন, ঘাটে যাত্রী বেশি থাকলে আমরা প্রতিদিন ৩ হাজার টাকার কলা বিক্রি করতাম। এখন ঘাটে যাত্রী একদম কম। প্রতিদিন ৪-৫শ’ টাকার কলা বিক্রি করছি। তাতে করে আমাদের চলা খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এম ভি তাজমহল লঞ্চের চালক কামরুল হোসেন বলেন, আগে ২০ মিনিট পরপর শতাধিক যাত্রী নিয়ে ঘাট ছেড়ে যেতাম। এখন এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও মাত্র ২৫ থেকে ৩০ জন যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছাড়তে হচ্ছে। এতে করে তেলের খরচও উঠছে না। এতে আমরাসহ মালিকপক্ষ লোকসানে রয়েছে।
লঞ্চঘাটের টিকিট কাউন্টারে থাকা মোবারক খান বলেন, পদ্মা সেতু চালুর আগে ঘাট দিয়ে প্রতিদিন ৪-৫ হাজারের মতো যাত্রী পারাপার হতো। এখন রমজান মাস ও ঘাটে যানবাহনের চাপ কম থাকায় ১২০০-১৫০০ যাত্রী ২৪ ঘণ্টায় পারাপার হচ্ছে। লঞ্চঘাটে কর্মরত মালিক সমিতি ও ঘাট ইজারাদারের লোকজনের প্রতিদিনের হাজিরার টাকা ওঠানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
আরিচা লঞ্চ মালিক সমিতির দৌলতদিয়া ঘাটের তত্ত্বাবধায়ক নূরুল আনোয়ার মিলন বলেন, যাত্রীশূন্য দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া লঞ্চঘাট। লঞ্চের জন্য আগে ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীরা অপেক্ষা করতেন। আর এখন যাত্রী স্বল্পতায় লঞ্চগুলো দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে অল্প কয়েকজন যাত্রী নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে লঞ্চঘাটে কোনও গাড়ির সিরিয়ালে নেই। লঞ্চগুলো ঘাটে গাড়ির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে তারপর ছেড়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয়ের ট্রাফিক পরিদর্শক আফতাব হোসেন বলেন, যাত্রী কমে গেলেও জনস্বার্থে লঞ্চ পারাপার স্বাভাবিক আছে। বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ৩৩টি লঞ্চ যাত্রী পারাপার করছে। রমজান মাস হওয়ায় এবং তীব্র গরমে মানুষ কম বের হচ্ছে। ২০ রোজার পর থেকে যাত্রী বাড়তে পারে।