Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্যাতনে নয়, জেসমিনের মৃত্যু মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে : চিকিৎসক

রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি : 

নির্যাতন নয়, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে নওগাঁর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের অফিস সহকারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক কফিল উদ্দিন।

সোমবার (৩ এপ্রিল) গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই তথ্য জানিয়েছেন।

ডা. কফিল উদ্দিনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গত ২৫ মার্চ সুলতানার মরদেহের ময়নাতদন্ত করে। রোববার (২ এপ্রিল) বিকালে মৃত্যুর কারণ জানিয়ে পুলিশের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছে বোর্ড।

জেসমিনের মৃত্যুর ৯ দিন পর রামেক ফরেনসিক বিভাগ তার এই ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলো।

রামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন বলেন, সুলতানা জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্তের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর তারা ফরেনসিক বিভাগের তিনজন বসেছিলেন। বোর্ড বসিয়ে তারা সেই রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করেছেন। তারপরই এই ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়েছেন। এর পর সেই ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন রোববার বিকেলে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে ইনজুরির (আঘাত) কথা উল্লেখ করেছি। ইনজুরি (আঘাত) আছে। কিন্তু সেই ইনজুরি মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট না। মৃত্যুর কারণ হচ্ছে ‘শক’। ‘শক’টা হয়েছে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে ব্রেনের ভেতরে রক্তের প্রণালি একদিকে ফেটে গেছে। এটি এক জায়গায় নয়, দুই জায়গায় ফেটে গিয়ে ওখানে হেমোরেজ (মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ এক ধরনের রক্তক্ষরণ) হয়েছে। হেমোরেজ হয়েই ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে।

নিহতের কপালে জখমের বিষয়ে ডা. কফিল উদ্দিন বলেন, মস্তিষ্কে এই রকমের ঘটনার (হেমোরেজ) কারণে সে পড়ে যেতে পারে। এছাড়া অন্য কোনোভাবে হতে পারে। আমি প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম না। আমি বলতে পারব না। তবে কপালে ছোট্ট একটা জখম আমরা পেয়েছি। যার আকার ২ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার। এছাড়া ডান হাতের কনুইয়ের ভেতর দিকে একটি ফোলা জখম ছিল। যেটার সাইজ ২ সেন্টিমিটার। এটা সাধারণত চিকিৎসা গ্রহণের জন্য রোগীর হাতে ক্যানোলা করার সময় হয়। এই যে দুটি ইনজুরি রয়েছে তা মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট নয়। তার মৃত্যু হয়েছে ‘শক’ থেকে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে।

রামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন আরও জানান, সুলতানা জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রথমে গিয়েছিলেন ফরেনসিক বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. তাজনীন জাহান। তারই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার কথা ছিল। তবে তিনি বিভাগীয় প্রধানকেও মর্গে ডাকেন। তার ডাকে বিভাগীয় প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন আরেক প্রভাষক জামান নিশাত রায়হানকে সঙ্গে নিয়ে মর্গে যান। পরে জেসমিনের মরদেহ তারা একসঙ্গে দেখেন। এর পর তিনজনের সমন্বয়ে বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত করেন।

এর আগে র‌্যাব-৫ এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল গত ২২ মার্চ সকালে জেসমিনকে আটক করে। অফিসে যাওয়ার পথে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় এলাকা থেকে তাকে আটক করে র‌্যাব। ওই দিন দুপুর ১২টার পর পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন সুলতানা নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ মার্চ সকালে তিনি মারা যান।

জেসমিনের মৃত্যুর পর দিন ২৫ মার্চ রামেক এর মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। এর পর কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জেসমিনের মরদেহ গোসল করানো হয় রাজশাহীতেই। পরে কাফন পরানো মরদেহ কফিনে করে নওগাঁয় নিয়ে যায় র‌্যাব। ওই দিন বিকেলে নওগাঁ সরকারি কবরস্থানে র‌্যাবের উপস্থিতিতেই মরদেহ দাফন করেন স্বজনরা।

সরকারের যুগ্মসচিব বর্তমানে স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক মো. এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে নিয়েই র‌্যাব একটি অভিযান চালায়। এনামুল হকের অভিযোগ, তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে জেসমিন ও আল-আমিন নামের এক ব্যক্তি চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে বিভিন্নজনের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন।

এমন অভিযোগের ভিত্তিতে জেসমিনকে আটক করে র‌্যাব। আর র‌্যাব হেফাজতে এ নারীর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। এরপর এই ঘটনা উচ্চাদালতের নজরে আসে। তার মৃত্যুর কারণ জানতে আদালতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

নির্যাতনে নয়, জেসমিনের মৃত্যু মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে : চিকিৎসক

প্রকাশের সময় : ০৭:২৫:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ এপ্রিল ২০২৩

রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি : 

নির্যাতন নয়, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে নওগাঁর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের অফিস সহকারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক কফিল উদ্দিন।

সোমবার (৩ এপ্রিল) গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই তথ্য জানিয়েছেন।

ডা. কফিল উদ্দিনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গত ২৫ মার্চ সুলতানার মরদেহের ময়নাতদন্ত করে। রোববার (২ এপ্রিল) বিকালে মৃত্যুর কারণ জানিয়ে পুলিশের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছে বোর্ড।

জেসমিনের মৃত্যুর ৯ দিন পর রামেক ফরেনসিক বিভাগ তার এই ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলো।

রামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন বলেন, সুলতানা জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্তের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর তারা ফরেনসিক বিভাগের তিনজন বসেছিলেন। বোর্ড বসিয়ে তারা সেই রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করেছেন। তারপরই এই ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়েছেন। এর পর সেই ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন রোববার বিকেলে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে ইনজুরির (আঘাত) কথা উল্লেখ করেছি। ইনজুরি (আঘাত) আছে। কিন্তু সেই ইনজুরি মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট না। মৃত্যুর কারণ হচ্ছে ‘শক’। ‘শক’টা হয়েছে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে ব্রেনের ভেতরে রক্তের প্রণালি একদিকে ফেটে গেছে। এটি এক জায়গায় নয়, দুই জায়গায় ফেটে গিয়ে ওখানে হেমোরেজ (মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ এক ধরনের রক্তক্ষরণ) হয়েছে। হেমোরেজ হয়েই ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে।

নিহতের কপালে জখমের বিষয়ে ডা. কফিল উদ্দিন বলেন, মস্তিষ্কে এই রকমের ঘটনার (হেমোরেজ) কারণে সে পড়ে যেতে পারে। এছাড়া অন্য কোনোভাবে হতে পারে। আমি প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম না। আমি বলতে পারব না। তবে কপালে ছোট্ট একটা জখম আমরা পেয়েছি। যার আকার ২ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার। এছাড়া ডান হাতের কনুইয়ের ভেতর দিকে একটি ফোলা জখম ছিল। যেটার সাইজ ২ সেন্টিমিটার। এটা সাধারণত চিকিৎসা গ্রহণের জন্য রোগীর হাতে ক্যানোলা করার সময় হয়। এই যে দুটি ইনজুরি রয়েছে তা মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট নয়। তার মৃত্যু হয়েছে ‘শক’ থেকে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে।

রামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন আরও জানান, সুলতানা জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রথমে গিয়েছিলেন ফরেনসিক বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. তাজনীন জাহান। তারই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার কথা ছিল। তবে তিনি বিভাগীয় প্রধানকেও মর্গে ডাকেন। তার ডাকে বিভাগীয় প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন আরেক প্রভাষক জামান নিশাত রায়হানকে সঙ্গে নিয়ে মর্গে যান। পরে জেসমিনের মরদেহ তারা একসঙ্গে দেখেন। এর পর তিনজনের সমন্বয়ে বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত করেন।

এর আগে র‌্যাব-৫ এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল গত ২২ মার্চ সকালে জেসমিনকে আটক করে। অফিসে যাওয়ার পথে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় এলাকা থেকে তাকে আটক করে র‌্যাব। ওই দিন দুপুর ১২টার পর পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন সুলতানা নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ মার্চ সকালে তিনি মারা যান।

জেসমিনের মৃত্যুর পর দিন ২৫ মার্চ রামেক এর মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। এর পর কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জেসমিনের মরদেহ গোসল করানো হয় রাজশাহীতেই। পরে কাফন পরানো মরদেহ কফিনে করে নওগাঁয় নিয়ে যায় র‌্যাব। ওই দিন বিকেলে নওগাঁ সরকারি কবরস্থানে র‌্যাবের উপস্থিতিতেই মরদেহ দাফন করেন স্বজনরা।

সরকারের যুগ্মসচিব বর্তমানে স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক মো. এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে নিয়েই র‌্যাব একটি অভিযান চালায়। এনামুল হকের অভিযোগ, তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে জেসমিন ও আল-আমিন নামের এক ব্যক্তি চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে বিভিন্নজনের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন।

এমন অভিযোগের ভিত্তিতে জেসমিনকে আটক করে র‌্যাব। আর র‌্যাব হেফাজতে এ নারীর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। এরপর এই ঘটনা উচ্চাদালতের নজরে আসে। তার মৃত্যুর কারণ জানতে আদালতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।