নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে মিউনিসিপ্যাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস প্রজেক্ট-এমজিএসপি প্রকল্পে সিলেট সিটি করপোরেশন দেশের সর্বাধুনিক সুবিধা সম্বলিত ও নান্দনিক নির্মাণশৈলীতে ‘কদমতলী বাস টার্মিনাল’ নির্মাণ করে। প্রায় আট একর ভূমিতে এ টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। গত ১৫ জানুয়ারি টার্মিনালটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। তারপরই টার্মিনালের ছাদের একটি অংশে ফাটল ধরা পড়েছে।
ফাটল ধরা পড়ার পর জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছেন সিটি মেয়র। বাস টার্মিনাল নির্মাণে ত্রুটি রয়েছে কী না তা অনুসন্ধানে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
শনিবার (১ এপ্রিল) বিকেলে নগর ভবনের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, দেশের সবচেয়ে আধুনিক বাস টার্মিনালের একটি অংশে ত্রুটি ধরা পড়ে। তাৎক্ষনিকভাবে আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে পরিদর্শন করেছি। এনিয়ে জনমনে কোন বিভ্রান্তির যেন না ছড়ায় তার জন্য বিশেষজ্ঞদের দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি।
সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, তদন্ত কমিটি আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সিসিক মেয়র আরও বলেন, এখনও সিসিকের কাছে এই প্রকল্পটি নির্মাণ সংস্থা হস্তান্তর করেনি। উদ্বোধনের জন্য অপেক্ষমান বাস টার্মিনালটিতে সুযোগ সুবিধা সমূহ ঠিক আছে কি না তা পর্যবেক্ষনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে সেবা প্রদান শুরু হয়। এরই মধ্যে স্থাপনাটির একটি অংশে কিছু ত্রুটি দেখা যায়।
সিসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর চৌধুরীকে সমন্বয়ক করে গঠিত তদন্ত কমিটিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, এলজিইডি সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, গণপূর্ত অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী, সড়ক বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী রয়েছেন।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, কদমতলী বাস টার্মিনালে বিমানন্দরের আদলে বহিঃর্গমন এবং আগমনের আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। স্থাপনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে গোলাকার পাঁচতলা একটি টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে টার্মিনাল পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা কার্যালয়, কন্ট্রোল রুম, পুলিশ কক্ষ এবং পর্যটন কার্যালয় স্থাপন করা হবে।
যাত্রী উঠানামার জন্য পৃথক টার্মিনাল ভবন, সুপরিসর পার্কিং ব্যবস্থা, পরিবহন সেবাদানকারীদের জন্য যাবতীয় সুবিধা সম্বলিত পৃথক ভবন, রেস্টুরেন্ট ও ফুড কোর্ট, পর্যাপ্ত যাত্রী বিশ্রামাগার, নারী, পুরুষ ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য আলাদা আলাদা শৌচাগার, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, স্মোকিং জোন, ছোট দোকান, অসুস্থ যাত্রীদের জন্য সিক বেড, প্রার্থনা কক্ষসহ সব ধরনের আধুনিক সেবা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে এই স্থাপনায়।
এছাড়া পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সভা অনুষ্ঠানের জন্য বিশাল হলরুম এবং যানবাহনের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়ার্কশপ স্থাপন করা হয়েছে।
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি ও আসাম টাইপ বাংলোর স্থাপত্যশৈলী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কদমতলী বাস টার্মিনাল প্রকল্পের নকশা প্রণয়ন করা হয়। এই টার্মিনালের নকশা করেন স্থপতি সুব্রত দাশ, স্থপতি রবিন দে ও স্থপতি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর প্রমুখ।