Dhaka শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১৮ বছরে সেতুতে টোল আদায় শত কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমারখালীর গড়াই নদীর ওপর অবস্থিত সৈয়দ মাছ-উদ-রুমী সেতু। ২০০৪ সালে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় সেতুটি। নির্মাণের পর থেকেই গত ১৮ বছর ধরে চলছে টোল আদায়। ইতোমধ্যে শতকোটি টাকার উপর টোল আদায় হয়েছে। তারপরেও বন্ধ হয়নি টোল আদায়। আর কত টাকা আদায় হলে বন্ধ হবে টোল আদায়? এমন প্রশ্নের সদুত্তর নেই কোথাও। টোল নিয়ে এই সেতু ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্রমেই অসন্তোষ বাড়ছে।

সাইকেল রিকশা ও ভ্যানের টোল আদায় নিয়ে ভোগান্তি নিরসনের কাঙ্ক্ষিত সেতুই এখন জনসাধারণের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কুষ্টিয়ার ৪ উপজেলাসহ ২ জেলার জনসাধারণের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সেতুটি। এতে সৃষ্টি হয়েছে জনমনে চরম অসন্তোষ। দ্রুত টোল আদায় বন্ধ চায় তারা।

মাত্র ৫শ মিটারের এই সেতুতে দুই পাড়ের মানুষের যাতায়াতে প্রতিদিন গুনতে হয় প্রায় ১শ থেকে ২শ টাকা। ফলে ভোগান্তি নিরসনের কাংখিত সেতুই এখন জনসাধারণের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে,২০০৪ সালে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ২০০৫ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে এই সেতু ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ইজারাদারের মাধ্যমে টোল আদায় করছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ।

সেতু ব্যবহারকারীরা জানান, এই সেতু নির্মাণ ব্যয়ের কয়েকগুণ টাকা ইতোমধ্যে আদায় হলেও বন্ধ হয়নি টোল আদায়। এতে সেতুতে চলাচলে টোলের টাকা দিতেই পকেট ফাঁকা হয়ে যায়। টোল আদায়ের পদ্ধতি নিয়েও ক্ষোভ জানান যানবাহনের মালিক ও চালকরা। সেতু ব্যবহারকারীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন টোল আদায়কারীরা। তাই অবিলম্বে ইজারা বাতিল করে টোল আদায় বন্ধের দাবি জানিয়েছেন সেতু ব্যবহারকারীরা। সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল মেয়াদে ৫ কোটি ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ২০১৯ থেকে ২০২১ মেয়াদে ১৪ কোটি ৫০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা এবং ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল মেয়ায়ে ২৫ কোটি ৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা টোল আদায় করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এর আগে ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে ইজাদারের মাধ্যমে টোল আদায় করেছে সড়ক বিভাগ। সব মিলিয়ে ১০০ কোটি টাকার ওপরে টোল আদায় করা হয়েছে। আর সেতু নির্মাণ ব্যয় হয়েছিল ৩৫ কোটি টাকা।

মোটরসাইকেল আরোহী শাকিল আহমেদ বলেন, আমি প্রতিদিন দুইবার সেতু পারাপার হই। এতে প্রতিবার ১০ টাকা করে টোল দিতে হয়। শুনেছি সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের তিনগুণ টোল আদায় হয়েছে। অযৌক্তিকভাবে সাধারণ চলাচলকারীদের কাছে থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। আমরা চাই টোল আদায় বন্ধ করা হোক।

সৈয়দ মাছ-উদ-রুমী সেতু দিয়ে প্রতিদিন শত শত ইজিবাইক-সিএনজি যাতায়াত করে। ইজিবাইক-সিএনজি চালকরা বলেন, বছরের পর বছর ধরে আমরা এই সেতু দিয়ে যাতায়াত করি। প্রতিবার যাওয়ার জন্য ১৫ টাকা আর আসার জন্য ১৫ টাকা করে টোল দিতে হয়। সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের তিন গুণ টাকা টোল আদায় হলেও এখন পর্যন্ত টাকা আদায় করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি চাই।

কুষ্টিয়া জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেন লাভলু বলেন, বছরের পর বছর ধরে বাস থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে, প্রতিটি বাস থেকে ১০০ টাকা করে টোল আদায় করা হয়। কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সেলিম আজাদ খান বলেন, টোল আদায় কবে বন্ধ হবে তা নির্ভর করছে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্তের ওপর। মন্ত্রণালয় চাইলেই কেবলমাত্র টোল আদায় বন্ধ করা সম্ভব হবে। মন্ত্রণালয়ের আদেশ ছাড়া আমরা বন্ধ করতে পারি না।

সড়ক ও জনপদ বিভাগের কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সেলিম আজাদ খান বলেন, টোল আদায় কবে বন্ধ হবে তা নির্ভর করছে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর। মন্ত্রণালয় চাইলেই কেবল মাত্র বন্ধ করা সম্ভব হবে এটি। মন্ত্রণালয়ের আদেশ ছাড়া আমরা বন্ধ করতে পারি না।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

চাঁদাবাজি নয়, ভাঙারি দোকান দখল দ্বন্দ্বেই মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড: ডিএমপি

১৮ বছরে সেতুতে টোল আদায় শত কোটি টাকা

প্রকাশের সময় : ০২:০৩:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক :

কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমারখালীর গড়াই নদীর ওপর অবস্থিত সৈয়দ মাছ-উদ-রুমী সেতু। ২০০৪ সালে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় সেতুটি। নির্মাণের পর থেকেই গত ১৮ বছর ধরে চলছে টোল আদায়। ইতোমধ্যে শতকোটি টাকার উপর টোল আদায় হয়েছে। তারপরেও বন্ধ হয়নি টোল আদায়। আর কত টাকা আদায় হলে বন্ধ হবে টোল আদায়? এমন প্রশ্নের সদুত্তর নেই কোথাও। টোল নিয়ে এই সেতু ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্রমেই অসন্তোষ বাড়ছে।

সাইকেল রিকশা ও ভ্যানের টোল আদায় নিয়ে ভোগান্তি নিরসনের কাঙ্ক্ষিত সেতুই এখন জনসাধারণের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কুষ্টিয়ার ৪ উপজেলাসহ ২ জেলার জনসাধারণের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সেতুটি। এতে সৃষ্টি হয়েছে জনমনে চরম অসন্তোষ। দ্রুত টোল আদায় বন্ধ চায় তারা।

মাত্র ৫শ মিটারের এই সেতুতে দুই পাড়ের মানুষের যাতায়াতে প্রতিদিন গুনতে হয় প্রায় ১শ থেকে ২শ টাকা। ফলে ভোগান্তি নিরসনের কাংখিত সেতুই এখন জনসাধারণের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে,২০০৪ সালে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ২০০৫ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে এই সেতু ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ইজারাদারের মাধ্যমে টোল আদায় করছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ।

সেতু ব্যবহারকারীরা জানান, এই সেতু নির্মাণ ব্যয়ের কয়েকগুণ টাকা ইতোমধ্যে আদায় হলেও বন্ধ হয়নি টোল আদায়। এতে সেতুতে চলাচলে টোলের টাকা দিতেই পকেট ফাঁকা হয়ে যায়। টোল আদায়ের পদ্ধতি নিয়েও ক্ষোভ জানান যানবাহনের মালিক ও চালকরা। সেতু ব্যবহারকারীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন টোল আদায়কারীরা। তাই অবিলম্বে ইজারা বাতিল করে টোল আদায় বন্ধের দাবি জানিয়েছেন সেতু ব্যবহারকারীরা। সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল মেয়াদে ৫ কোটি ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ২০১৯ থেকে ২০২১ মেয়াদে ১৪ কোটি ৫০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা এবং ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল মেয়ায়ে ২৫ কোটি ৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা টোল আদায় করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এর আগে ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে ইজাদারের মাধ্যমে টোল আদায় করেছে সড়ক বিভাগ। সব মিলিয়ে ১০০ কোটি টাকার ওপরে টোল আদায় করা হয়েছে। আর সেতু নির্মাণ ব্যয় হয়েছিল ৩৫ কোটি টাকা।

মোটরসাইকেল আরোহী শাকিল আহমেদ বলেন, আমি প্রতিদিন দুইবার সেতু পারাপার হই। এতে প্রতিবার ১০ টাকা করে টোল দিতে হয়। শুনেছি সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের তিনগুণ টোল আদায় হয়েছে। অযৌক্তিকভাবে সাধারণ চলাচলকারীদের কাছে থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। আমরা চাই টোল আদায় বন্ধ করা হোক।

সৈয়দ মাছ-উদ-রুমী সেতু দিয়ে প্রতিদিন শত শত ইজিবাইক-সিএনজি যাতায়াত করে। ইজিবাইক-সিএনজি চালকরা বলেন, বছরের পর বছর ধরে আমরা এই সেতু দিয়ে যাতায়াত করি। প্রতিবার যাওয়ার জন্য ১৫ টাকা আর আসার জন্য ১৫ টাকা করে টোল দিতে হয়। সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের তিন গুণ টাকা টোল আদায় হলেও এখন পর্যন্ত টাকা আদায় করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি চাই।

কুষ্টিয়া জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেন লাভলু বলেন, বছরের পর বছর ধরে বাস থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে, প্রতিটি বাস থেকে ১০০ টাকা করে টোল আদায় করা হয়। কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সেলিম আজাদ খান বলেন, টোল আদায় কবে বন্ধ হবে তা নির্ভর করছে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্তের ওপর। মন্ত্রণালয় চাইলেই কেবলমাত্র টোল আদায় বন্ধ করা সম্ভব হবে। মন্ত্রণালয়ের আদেশ ছাড়া আমরা বন্ধ করতে পারি না।

সড়ক ও জনপদ বিভাগের কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সেলিম আজাদ খান বলেন, টোল আদায় কবে বন্ধ হবে তা নির্ভর করছে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর। মন্ত্রণালয় চাইলেই কেবল মাত্র বন্ধ করা সম্ভব হবে এটি। মন্ত্রণালয়ের আদেশ ছাড়া আমরা বন্ধ করতে পারি না।