নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রতিবছর রমজান মাসে এলেই ইফতারের আগে রাজধানীজুড়ে যানজট দেখা দেয়। এ বছরও এর কোনো ব্যতিক্রম নেই। টানা তিন দিন ছুটির পর সোমবার (২৮ মার্চ) প্রথম কার্যদিবসেই যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী। বিশেষ করে বেলা তিনটায় অফিস ছুটি হওয়ার পর এবং ইফতারের আগ মুহূর্তে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে গাড়ির তীব্র জট দেখা গেছে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় গাড়ি আটকে রয়েছে। যে কারণে রোজা রেখে এক প্রকার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অফিস ফেরত মানুষদের।
সোমবার (২৭ মার্চ) দুপুরের পর রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, পল্টন, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, কাকরাইল, মগবাজার, হাতিরঝিল, রামপুরা, ধানমন্ডি, মহাখালী, বিমানবন্দর, কুড়িল, বনানী, উত্তরা, বাড্ডা ও কালশী এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
মতিঝিল থেকে উত্তরাগামী যাত্রী সোলাইমান সবুজ। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে উত্তরার যাওয়ার একটি বাসে ওঠেন। গরমে রোজা রেখে রাস্তায় তীব্র যানজটে বিরক্ত তিনি। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সাড়ে তিনটায় মতিঝিল শাপলা চত্ত্বর থেকে বাসে উঠেছি। মালিবাগ আবুল হোটেল পর্যন্ত বাসে আসতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টার বেশি। আজ অফিস থেকে একটু আগে বের হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম বাসায় গিয়ে ইফতার করব। কিন্তু রাস্তায় যে যানজট তাতে বোঝা যাচ্ছে বাসায় পৌঁছাতেই আজান দিয়ে দেবে।
গুলিস্তান থেকে মিরপুর এক নম্বর হয়ে গাবতলীগামী দিশারী পরিবহনের চালক রবিউল বলেন, সকালের রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম ছিল। তবে দুপুরের দিকে তুলনামূলক জ্যাম কম থাকলেও অফিস ছুটি হবার পর রাস্তায় গাড়ির চাপ অনেক বেশি। বিশেষ করে মৎস্য ভবন এবং শাহবাগে প্রচন্ড জ্যামে বসে থাকে হয়।
রাজারবাগ মোড়ের এক ট্রাফিক পুলিশ জানান, গত দুই দিন রাস্তায় যানজট অনেক কম ছিল। কিন্তু আজ অফিস, স্কুল, আদালত সবকিছু একসঙ্গে খোলায় রাস্তায় যানজট কিছুটা বেড়েছে। আর অফিস ৩টায় ছুটি হয়েছে তাই বিকেল সাড়ে পাচটা পর্যন্ত রাস্তায় চাপ বেশি থাকে। এরপর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে।
গুলশান অতিক্রম করে মহাখালী পর্যন্তও থেমে থেমে চলছে গাড়ি। বনানী থেকে গুলশান-২ এর দিকে গাড়ির চাপ কম থাকলেও নতুন বাজার থেকে গুলশান-২ ও গুলশান-১ থেকে গুলশান-২ এর দিকে বেশ যানজট চোখে পড়ে। বনানী হয়ে কাকলী প্রধান সড়কে প্রবেশেও বেশ যানজটের সৃষ্টি হয়। আবার কাকলী ইউটার্নের আগে ও পরে থেমে থেমে এগোতে থাকে যানবাহন। মহাখালী রেলক্রসিংয়ে তীব্র যানজটের কবলে পড়েন নগরবাসী।
অন্যদিকে, রমজানেও রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছুটে চলছেন অভিভাবকরা। অফিসগামী ও সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সকাল থেকেই হাজারো শিক্ষার্থী-শিক্ষকের যাতায়াত শুরু হয়। বাড়তি মানুষের চলাচল রাজধানীর সড়কের যানজটে বাড়তি মাত্রা যোগ করে।
কারওয়ান বাজারে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য সোলাইমান হক বলেন, গত তিনদিনে খুব ভালোভাবে ডিউটি করেছি। তবে, আজ সকাল থেকে কারওয়ান বাজারে যানজট লেগে আছে। দুপুরের পর গাড়ির চাপ যেমন বেড়েছে, বেড়েছে মানুষের সংখ্যাও। ইফতারের আগে এ যানজট কমলে আমাদের ইফতার করতেও সুবিধা হবে।
মিরপুর-২ নম্বরে যেতে রাজধানীর মগবাজার মোড়ে বাসের জন্য অনেকক্ষণ করছেন জাকির হোসেন। তিনি বলেন, টানা তিনদিনের ছুটির পর আজ প্রথম দিন অফিসে যেতে যেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আবার অফিস শেষে বাসায় ফিরতে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু বাস পেলেও সেগুলোতে তিল পরিমাণ ঠাঁই হচ্ছে না। রোজার একটা মাস এভাবে কষ্ট করে অফিসে যাওয়া-আসা করতে হবে।
ট্রাফিক গুলশান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অন্যদিনের তুলনায় গাড়ির চাপ আজ একটু বেশি। তিনদিন বন্ধ থাকার পর আজ রাজধানীতে সব অফিস খুলেছে। এছাড়া রমজানের কারণে অফিস টাইম একটু পরিবর্তন হয়েছে। সবমিলিয়ে একসঙ্গে গাড়ির চাপ বেড়েছে। তাই এ যানজট।
জানতে চাইলে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, রমজান মাস এলেই ঢাকা শহরে যানজট বেড়ে যায়। যানজট নিরসনে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশসহ থানা পুলিশের সদস্যরাও সড়কে বাড়তি ডিউটি করেন। কিন্তু সড়কের দুই পাশ দিয়ে অবৈধ পার্কিং ও ফুটপাথ দখলসহ যত্রতত্র গাড়ি চলাচলে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা শহরের যানজট নিরসন পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা যারা সড়কে চলাচল করি এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।